সাধারণত ব্যাংকে টাকা-পয়সা বা মূল্যবান সামগ্রী জমা রাখা হয়। নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের ওপর মুনাফাও দেওয়া হয় গ্রাহককে। তবে ভারতে এমন এক ব্যাংকের খোঁজ মিলেছে, যেখানে কোনো অর্থ জমা রাখা হয় না; বরং সেখানেও জমা নেওয়া হয় খাবার।

যে ব্যাংকটির কথা বলা হচ্ছে তার নাম ‘রোটি ব্যাংক’। হিন্দি ‘রোটি’ শব্দের বাংলা অর্থ রুটি। তবে এই ব্যাংকে যে শুধু রুটিই জমা রাখা হয়, ব্যাপারটি কিন্তু তা নয়। এই রুটি ব্যাংকে জমা নেওয়া হয় বিভিন্ন ধরনের খাবার। আর দিন শেষে সেসব খাবার বিলি করা হয় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দরিদ্র মানুষের মধ্যে।

যাঁরা দুবেলা একমুঠো খাবার জোগাড় করতে রীতিমতো নাস্তানাবুদ হন, শুধু তাঁদের অন্ন সংস্থানের কথা মাথায় রেখেই চালু হয়েছে এই অভিনব ব্যাংক।

ভারতে এ ধরনের ব্যাংক রয়েছে দুটি। প্রথমে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বুন্দলখন্ডে ‘রুটি ব্যাংক’ তৈরি করা হয়। সে ধারণা থেকেই এবার রুটি ব্যাংক চালু হলো মহারাষ্ট্র শহরের অন্যতম জেলা তথা অজন্তা-ইলোরা গুহার শহর আওরঙ্গবাদে।

অভিনব এই ‘রুটি ব্যাংক’ তৈরি করেছেন স্থানীয় হারুন মুকতি ইসলামিক সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা হারুন মুকতি। তাঁর একটু একটু করে সংগ্রহ করা খাবার দিয়ে তৈরি হয়েছে এই ব্যাংক। আর এটি তৈরিতে হারুন মুকতিকে সাহায্য করেছেন তাঁর স্ত্রী ও বোনেরা।

এই ব্যাংকে যেকোনো ধর্মের মানুষ খাবার দান করতে পারেন। তবে দান করা খাবার অবশ্যই তাজা এবং ভালো হতে হবে। তার পর সেই খাবার বিলিয়ে দেওয়া হয় দুস্থ মানুষের মধ্যে।

চালু হওয়ার প্রথম দিনেই রুটি ব্যাংক থেকে প্রায় ২৫০ জনের মধ্যে খাবার বিলি করা হয় বলে জানান হারুন মুকতি। তিনি বলেন, এর পর থেকে দ্রুত বাড়ছে এই ব্যাংক থেকে খাবার সংগ্রহকারীর সংখ্যা।

খাবার গ্রহণের বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। রুটি ব্যাংক থেকে নির্দিষ্ট ফরম নিয়ে তা পূরণ করার পরেই এখানকার সদস্য হওয়া যাবে। আর এর পরেই মিলবে খাবার।

অবশ্য রুটি ব্যাংকের সদস্য হওয়ার শর্ত একটাই, কোনো ভিক্ষুক এখানকার সদস্য হতে পারবেন না। হারুন জানান, ভিক্ষুকরা তাদের পেশাগত কারণে বিনাশ্রমে এই সুবিধা গ্রহণ করে ফায়দা লুটতে পারে—এ কথা মাথায় রেখেই ব্যাংকে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করা ব্যক্তিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু গরিব ও দুস্থদের মধ্যে বিলি করা হচ্ছে ‘রুটি ব্যাংক’-এর খাবার।

প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খাবার দেওয়া হয়। যার মধ্যে থাকে কমপক্ষে দুটি রুটি, আর তার সঙ্গে আমিষ কিংবা নিরামিষ যেকোনো পদের একটি খাবার।

খাবার জমা দেওয়ার ক্ষেত্রেও সাড়া মিলেছে বেশ। বিভিন্ন ধর্মের মানুষ তাঁদের বাড়িতে বেচে যাওয়া খাবার দিয়ে যাচ্ছেন এখানে। পাশাপাশি বাড়তি খাবার আসছে বিভিন্ন বিয়েবাড়ি থেকেও। অতিরিক্ত খাবার মজুদ করে রাখার জন্য এই ব্যাংকে আনা হয়েছে বিশালাকার ফ্রিজ।

খাবারের পরিমাণ আরো বাড়াতে ব্যাংকটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন ফ্লাইট কিচেন, করপোরেট অফিস, রেস্তোরাঁ ও হোটেলের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। যেন তারা তাদের বাড়তি খাবার এই রুটি ব্যাংকে দান করেন।