অন্ধদের স্কুলে সর্বস্ব দিলেন বৃদ্ধ ফেরিওয়ালা

সারা জীবন কাটিয়েছেন মানুষের সেবায়। শেষ বয়েসে এসে সারাজীবনের সঞ্চয় আড়াই লাখ টাকা তুলে দিলেন অন্ধদের জন্য পরিচালিত একটি স্কুলে। মহৎ এই মানুষটির নাম সুধীর বেরা (৯২)। বৃদ্ধ এই ফেরিওয়ালার বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সুতাহাটা ব্লকের জয়নগর গ্রামে।
গত সোমবার হলদিয়ার চৈতন্যপুরে বিবেকানন্দ মিশন আশ্রমের প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের জন্য তিনি দান করেছেন সারা জীবনের সঞ্চয়। মিশন আশ্রমের পরিচালনা কমিটির কর্মকর্তা স্বামী বিশ্বনাথানন্দ জানান, কেউই ভাবতে পারেনি তিনি এমন একটি মহৎ কাজ করবেন। অন্য অনেকদিনের মতোই ফেরিওয়ালার ঝোলা কাঁধে বিবেকানন্দ মিশন আশ্রমে আসেন সুধীরবাবু। এরপর কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে তাঁদের হাতে আড়াই লাখ টাকার চেক তুলে দেন। তার পর মিশনের দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের সঙ্গে কিছু সময় কাটিয়ে বাড়ি ফিরে যান।
সুধীর বেরা জানান, তাঁর ছোটবেলা কেটেছে চরম দারিদ্র্যে। মাধ্যমিক পর্যন্ত এসে পড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। তার পর বাড়ির বড় ছেলে হিসেবে জীবন-জীবিকার জন্য মুখরোচক খাবার ফেরি করা শুরু করেন। পরে ফেরি করতেন প্লাস্টিকের জিনিস, রান্নার বাসনকোসন। এই কাজ করেই বাবা–মাকে দেখেছেন। কিন্তু নিজে বিয়ে করেননি। অকৃতদার মানুষটি কেউ বিপদে পড়লে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন।
বয়স বাড়লেও এখনও তিনি ফেরিওয়ালাই। তাই কিছু দিন ধরে ভাবছিলেন, এই জীবনে তো কিছুই হলো মৃত্যুর আগে সারা জীবনের সঞ্চয় কোনও মহৎ কাজে দান করে যাবেন। সেইমতো পাশের গ্রামের চৈতন্যপুর বিবেকানন্দ মিশন আশ্রমের দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে সমস্ত সঞ্চয় দান করতে মনস্থির করেন।
কর্মকর্তা স্বামী বিশ্বনাথানন্দ জানান, হলদিয়া বিবেকানন্দ মিশন আশ্রম গত দুদশকেরও বেশি সময় ধরে দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধীদের এই স্কুল চালাচ্ছে। এখন বিদ্যালয়ে প্রায় ২০০ দৃষ্টি–প্রতিবন্ধী পড়ুয়া রয়েছে।
এখানকার পড়ুয়ারা উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনার পাশাপাশি নানা হাতের কাজ শিখে স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ পায়।