অবশেষে ভারতে টেসলা, টিকে থাকতে পারবে কি?

আমেরিকান বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠান টেসলা অবশেষে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গাড়ির বাজার ভারতে তাদের যাত্রা শুরু করেছে। দশ বছর ধরে নানা জটিলতা ও আলোচনার পর, মুম্বাইয়ে নতুন শোরুমে উন্মোচিত হয়েছে টেসলার মডেল ওয়াই গাড়ি। এর দাম ধরা হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার ডলার (প্রায় ৬০ লাখ রুপি), যা অন্য বড় বাজারগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।
ভারতের বাজারে টেসলা কী দিচ্ছে?
টেসলা ভারতে তার মডেল ওয়াই গাড়ি আনছে মিড-রেঞ্জ প্রিমিয়াম সেগমেন্টে। গাড়িটিতে রয়েছে মিনিমাল ডিজাইন, শক্তিশালী পারফরম্যান্স এবং দীর্ঘ রেঞ্জের সুবিধা।
মডেল ওয়াই-এর দুটি সংস্করণ পাওয়া যাবে। এর মধ্যে রয়েছে রিয়ার-হুইল ড্রাইভ (আরডব্লিউডি) – একবার চার্জে ৫০০ কি.মি. এবং লং রেঞ্জ আরডব্লিউডি – একবার চার্জে ৬২২ কি.মি.
অতিরিক্ত ৭ হাজার ডলারে (৬ লাখ রুপি) মিলবে চালক-সহায়ক প্রযুক্তি প্যাকেজ। প্রতিটি গাড়িতে চার বছরের বা ৮০ হাজার কি.মি. ওয়ারেন্টি দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছে মার্সিডিজ ইকিউবি, বিএমডব্লিউ আইএক্স১, কিয়া ইভি৬, ভলভো ইসি৪০-এর মতো গাড়ি।
ভারতে এত দাম কেন?
যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে মডেল ওয়াই-এর শুরু মূল্য ৪৪ হাজার ৯৯০ ডলার, চীনে ৩৬ হাজার ৭০০ ডলার এবং জার্মানিতে ৫৩ হাজার ৭০০ ডলার, সেখানে ভারতে এর দাম প্রায় ৭০ হাজার ডলার।
এর কারণ ভারতের উচ্চ আমদানি শুল্ক—সম্পূর্ণ তৈরি গাড়ির ওপর আগে যেখানে ১১০ শতাংশ ডিউটি ছিল, এখন তা কিছুটা কমিয়ে শর্ত সাপেক্ষে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
যদি কোনো কোম্পানি ভারতে কারখানা স্থাপনে বিনিয়োগ করে, তাহলেই এই ছাড় প্রযোজ্য হবে। টেসলা বহুদিন ধরেই এই শুল্ক কমানোর দাবি জানিয়ে আসছিল।

ভারতের বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার কেমন?
ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। ২০২৪ সালে ইভি বিক্রি আগের বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেড়েছে, তবে তা এখনো মোট গাড়ির মাত্র ২.৫ শতাংশ। সবচেয়ে বড় অংশজুড়ে রয়েছে দেশীয় কোম্পানি টাটা, যার বাজারে শেয়ার প্রায় ৬০ শতাংশ। এরপর রয়েছে জেএসডব্লিউ এমজি মোটর এবং মাহিন্দ্রা।
২০ হাজার ডলারের ওপরে দামের ইভি গাড়ির বিক্রি ২০২৪ সালে ছিল মাত্র ৬.৬ শতাংশ। এই সেগমেন্টেই টেসলাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।
বিশ্বে টেসলার অবস্থা কেমন?
টেসলা বর্তমানে বিশ্ববাজারে বিক্রি কমে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছে। যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিক্রি কমেছে ৬.৩ শতাংশ। ইউরোপে ৫ মাস ধরে বিক্রি কমছে, রাজনৈতিক বিতর্কের কারণে। চীনে দ্বিতীয় প্রান্তিকে সরবরাহ কমেছে প্রায় ১২ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টেসলার সামনে এখন ভারতের মতো নতুন ও সম্ভাবনাময় বাজার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কার সঙ্গে?
ভারতের বাজারে চীনা কোম্পানিগুলো—যেমন বিওয়াইডি—যথেষ্ট চ্যালেঞ্জে আছে। ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েনে ভারত সরকার ২০২৩ সালে বিওয়াইডি-এর ১ বিলিয়ন ডলারের কারখানা প্রস্তাব বাতিল করে।
এমজি ইন্ডিয়ার মতো কিছু সংস্থা যৌথভাবে কাজ করলেও চীনা কোম্পানিগুলোর প্রভাব তুলনামূলক কম। এতে টেসলার জন্য সুবিধা হয়েছে বলে বলছেন এসএন্ডপি গ্লোবাল মোবিলিটির পুণিত গুপ্তা।
তিনি বলেন, “ভারতে চীনা ইভি কোম্পানিরা বিনিয়োগে আগ্রহী নয়, আবার গ্রাহকরাও চীনা ব্র্যান্ডে পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছেন না।”
তবে চ্যালেঞ্জ কী কী?
ভারতে গড় বার্ষিক আয় মাত্র ২ হাজার ৮৮০ ডলার, আর টেসলার প্রাথমিক গাড়ির দাম ৭০ হাজার ডলার। দেশে প্রতি ২৩৫টি ইভির জন্য মাত্র একটি পাবলিক চার্জিং স্টেশন রয়েছে। সড়কের মান, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যা রয়েছে।

টেসলার পদক্ষেপ:
× মুম্বাইয়ে চারটি চার্জিং স্টেশন বসানোর ঘোষণা
× দিল্লিতেও দ্রুত সম্প্রসারণ পরিকল্পনা
× ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরিতে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি
যুক্তরাষ্ট্রে টেসলার ভর্তুকি ঝুঁকিতে?
সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ইলন মাস্কের দ্বন্দ্বের কারণে টেসলা যুক্তরাষ্ট্রে বড় ধরনের ভর্তুকি হারাতে পারে।
টেসলার জন্য দীর্ঘদিনের ৭ হাজার ৫০০ ডলারের কর রেয়াত বাতিলের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। মাস্ক পাল্টা রাজনৈতিক অভিযানে অর্থায়নের ইঙ্গিত দিয়েছেন।