‘বিহারে অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে জয়’

ভারতের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের পরাজয় ঘটতে না ঘটতেই ‘মোদি ম্যাজিক’ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে। বিহারে এই শোচনীয় পরাজয়ের পরও কি দলের রাশ মোদি-অমিত শাহ জুটির হাতেই থাকবে? আর থাকলে তা কতটা? সেটাই এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
দিল্লি বিধানসভা ভোটে আম-আদমি পার্টির ঝাড়ূ ঝড়ে সাফ হয়ে যাওয়ার পর বিহারে এভাবে আছাড় খেয়ে কার্যত হতবম্ব গেরুয়া শিবির। সর্বশেষ পাওয়া প্রাথমিক খবর অনুযায়ী, বিহারের ২৪৩টি আসনের মধ্যে লালু-নীতিশ-কংগ্রেসের মহাজোট পেয়েছে ১৭৯টি আসন। অন্যদিকে এনডিএ জোট পেয়েছে ৫৮টি। অন্যরা পেয়েছে ছয়টি আসন।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিহারের ভোট-রাজনীতিতে দাদরিকাণ্ড ও গোমাংসের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে মেরুকরণের ফায়দা তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন মোদি-অমিত শাহ জুটি। দেশজুড়ে অসহিষ্ণুতা ইস্যুতেও বিরোধীদের মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছেন তাঁরা। বিহারের মানুষ মেরুকরণের ঊর্ধ্বে উঠে তাঁদের রায় দিয়েছেন।
ভারতে সাম্প্রতিক সব হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এ পর্যন্ত শতাধিক লেখক ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ভারতের সমাজে অসহিষ্ণুতার অভিযোগ এনে তাঁদের পুরস্কার ফেরত দিয়েছেন। কেউ কেউ ‘চরম অসহিষ্ণুতা’ নিয়ে সমালোচনা করেছেন। ধারণা করা হচ্ছিল, বিহারের নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে।
জয়ের পর কংগ্রেস সহসভাপতি রাহুল গান্ধী জানিয়েছেন, ‘এই জয় অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে জয়। বিভেদের বিরুদ্ধে জয়। ভারতে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি যে আর চলবে না, তা বুঝিয়ে দিল বিহার।’
একই কথা বলেছেন লালুপ্রসাদ যাদব আর নীতিশ কুমারও।
ফলাফলে স্পষ্ট, ‘মোদি ক্যারিশমা’ বিহারে ধরাশায়ী। বিহার বিধানসভা ভোটে বিজেপির ঘোষিত মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী বলে সেই অর্থে কেউই ছিলেন না। মোদিকে সামনে রেখেই বিহার জয়ের স্বপ্নে কোমর বেঁধে নামে গেরুয়া শিবির। বিহারে এসে ভোটের আগে প্রায় ৩০টির মতো সভা করেন নরেন্দ্র মোদি। কোনো রাজ্যের বিধানসভা ভোটের প্রচারে প্রধানমন্ত্রীর এতগুলো সভা করার ইতিহাস ভারতে বিরল। নীতিশ কুমারের সঙ্গে কার্যত ক্যারিশমার লড়াইয়ে মুখোমুখি নামেন মোদি।
লড়াইয়ে ‘ডাহা ফেল’ মেরে এখন ঘরে-বাইরে তোপের মুখে পড়েছেন মোদি। কংগ্রেস শিবির থেকে মোদির ৫৬ ইঞ্চি বুকের ছাতি নিয়ে শুরু হয়ে গেছে কটাক্ষ করা। বিহারে ভোটের আগে থেকেই ঘাঁটি গাড়েন মোদির অন্যতম প্রধান সেনাপতি অমিত শাহ।
এদিকে বিহারের এই পরাজয়ের ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই আগামী বছরে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও তামিলনাড়ুতে ভোট। তার পরের বছর ভোট উত্তরপ্রদেশে। সেই ভোটে মোদি-অমিত শাহ কতটা ম্যাজিক দেখাতে পারবেন তা এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। অন্যদিকে, বিহারে বিজেপি তথা এনডিএর ভরাডুবি ঘটতে না ঘটতেই সরাসরি মোদির বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছে বিজেপির অন্যতম শরিক দল শিবসেনা।
শিবসেনার শীর্ষ নেতা সঞ্জয় রাউত জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিহারে লড়াই করেছিল বিজেপি। কিন্তু এই শোচনীয় পরাজয় মূলত নেতার পতনেরই সূচক। ভারতের রাজনীতিতে বিহারের ফলাফল নয়া মোড়ের সূচনা করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, কংগ্রেসে যেমন হারের দায় সোনিয়া গান্ধীর ওপর বর্তায়, তেমনি এ ক্ষেত্রেও মোদির ওপর সেই দায় চাপা অস্বাভাবিক নয়।
শিবসেনার তরফে বিহারে জয়ের জন্য নীতিশ কুমারকে অভিনন্দনও জানানো হয়েছে। ফলে এরই মধ্যে চাপ বাড়তে শুরু করেছে মোদি-অমিত শাহের ওপর।
অপরদিকে জয়ের পর নীতিশ কুমার বিহারের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন এ কথা জানিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) সুপ্রিমো লালু প্রসাদ যাদব জানিয়ে দিয়েছেন, ফ্যাসিস্ট মোদি সরকারকে উৎখাত করতে দেশজুড়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
বিহারে মহাজোটের মধ্যে সব থেকে বেশি ভোট পেয়েছে লালুর আরজেডি। তারপর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নীতিশ কুমারের জনতা দল সংযুক্ত (জেডিইউ)। তৃতীয় স্থানে রয়েছে কংগ্রেস।
লালুপ্রসাদ যাদব আরো বলেন, এই জয় শুধু বিহারের মধ্যে আটকে থাকবে না। দেশের বৃহত্তর লক্ষ্যে এই জয় পথ দেখাবে। বিজেপি আজ দেশকে টুকরো টুকরো করতে চাইছে। আমরা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করব। মোদি সরকারকে ছুঁড়ে ফেলব।
জেডিইউ নেতা নীতিশ কুমার জানিয়েছেন, বিহারবাসী দেশজুড়ে অসহিষ্ণুতার প্রতিবাদ জানিয়েছে। এই জয় সহিষ্ণুতার জয়।