সবাই যাকে ‘হাবা’ বলত, চমকে দিল তার সৃষ্টি!

প্রতিবেশী শিশুরা সাজি থমাসকে হাবা (বোকা) বলত। ভারতের কেরালা রাজ্যের রাজধানী থিরুনাভানানথাপুরামের প্রত্যন্ত গ্রাম ইদুক্কির জন্মগত প্রতিবন্ধী (মূক ও বধির) বালকটি অন্যদের চেয়ে বেশ আলাদা। সব সময় সে ভাঙা জিনিসপত্র নিয়ে পড়ে থাকতে। অবশেষে নিজের প্রতিভার প্রমাণ দিয়েছে সে।
বর্তমানে ৪৫ বছর বয়স্ক সাজি থমাস ফেলনা জিনিসপত্র দিয়ে তৈরি করেছেন অতি হালকা এক বিমান! ভারতে রেকর্ডবুকে নাম ওঠার পাশাপাশি টিভিতেও তাঁকে নিয়ে অনুষ্ঠান হচ্ছে।
আজ সোমবার শুরু হওয়া ডিসকভারি চ্যানেলের ‘এইচআরএক্স সুপারহিরোস’ নামের অনুষ্ঠানে সাজি থমাস ও তাঁর বিমান নিয়ে প্রতিবেদন করা হবে। অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় আছেন বলিউড অভিনেতা ঋতিক রোশন। জানা গেছে, শারীরিক প্রতিবন্ধিতা জয় করে সফল হওয়া ৯ জনকে নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে ওই অনুষ্ঠান।
১৫ বছর বয়সে রাবার ক্ষেতে বিমান দিয়ে ওষুধ ছিটানো দেখেছিলেন সাজি থমাস। ওই থেকেই বিমান তৈরির আগ্রহ হয় তাঁর। সাহস করে থমাস পাইলটদের সঙ্গে দেখা করেন। একজন তাঁকে মুম্বাইয়ের বাড়ির ঠিকানা দেন। কয়েকদিন পর সাজি থমাস বাড়ি থেকে পালিয়ে মুম্বাই যান। তাঁর আগ্রহ থেকে ওই পাইলট বিমানের কাঠামো ও তৈরির বর্ণনা দেওয়া কিছু কাগজপত্র সাজি থমাসকে দেন। একই সঙ্গে তাঁকে অল্প বেতনের কাজও দেন। বিমান তৈরির জন্য সাজি থমাস অনেক কষ্ট স্বীকার করেছেন। এমনকি নিজের শেষ সম্বল এক টুকরো জমিও বিক্রি করে দিয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে পেশা হিসেবে নিয়েছেন, রাবার সংগ্রহ, বৈদুত্যিক জিনিসপত্র মেরামত বা আলোচিত্র তোলার কাজ।
থমাসের স্ত্রী মারিয়া টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, প্রথমে তাঁর স্বামী শুধু বিমানের কাঠামো তৈরি করেছিলেন। পরে মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন দিয়ে পুরো বিমান তৈরি করলেও সেটি উড়তে ব্যর্থ হয়। বিমানটি একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কাছে বিক্রি করা হয়। ওই টাকা দিয়ে একটি বিমানের ইঞ্জিন কেনেন সাজি থমাস। ইঞ্জিনটি দিয়ে গত বছরের শেষে তৈরি করেন ‘সাজি এক্স এয়ার এস’ বিমান।
বিভিন্ন ফেলনা জিনিস দিয়ে সাজি থমাসের তৈরি বিমানে দুজন বসা যায়। অত্যন্ত হালকা বিমানটি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল থিরুনাভানানথাপুরামের বাসিন্দা এবং ভারতীয় বিমান বাহিনীর সাবেক উইং কমান্ডার এস কে জে নায়ারের কাছে। তিনি বিমানটি পরীক্ষা করে দেখেন। পরে এস কে জে নায়ারের ব্যক্তিগত বিমান প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমিতে সাজি থমাসের বিমানটি ওড়ানো হয়।
বর্তমানে দুই ইঞ্জিন বিমান তৈরির জন্য বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষের অনুমতি চাইছে সাজি থমাস। একই সঙ্গে বিমানের মেরামতের কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে আগ্রহী তিনি। শিগগিরই এমন সুযোগ পাবেন বলে তিনি আশা করেন।