গরম তেলে হাত ডুবিয়ে মাছ ভাজেন প্রেমকুমার!

নাম তাঁর প্রেমকুমার। বয়স বছর ৬৫ হবে। থাকেন নয়াদিল্লি। পেশায় তিনি খাবারের দোকানি। রোজ ভাত-তরকারির সঙ্গে প্রেমকুমার বিক্রি করেন মাছ ভাজা। ফুটপাতের ধারে ছোট্ট সেই দোকানে প্রতিদিন খদ্দেরের লাইন লেগে থাকে!
ভাবছেন খাবারের মান আর স্বাদের কারণে খদ্দেরের ঢল নামে? নাহ, মূল কারণ তা নয়! আর পাঁচটা খাবারের দোকানের মতোই মামুলি প্রেমকুমারের দোকানের খাবারও। একটা বিশেষ কারণে খদ্দেররা ভিড় করেন তাঁর দোকানে।
প্রেমকুমার খালি হাতে ফুটন্ত তেলের মধ্যে হাত ডুবিয়ে মাছ ভাজেন! গরম তেলের মধ্যে হাত ডুবিয়ে মাছ ভাজা সত্ত্বেও হাতে ফোসকা তো পড়েই না, গরম লাগার কোনো লক্ষণও তাঁর চোখেমুখে দেখা যায় না! গরম কড়াইয়ের টগবগে তেলের মধ্যে হাত চুবিয়ে মাছ ভাজতে ভাজতে খদ্দেরদের সঙ্গে গল্প করতে থাকেন। খাবারের সঙ্গে উপরি এই দৃশ্য দেখার লোভেই প্রেমকুমারের দোকানে ভিড় করে সবাই।
গরম তেলের মধ্যে হাত ডুবিয়ে খাবার তৈরির মাঝে অন্য কোনো রহস্য আছে কি না, তার উত্তরে প্রেম কুমার বলেন, ‘রহস্য-টহস্য কিছু নেই। এটা কোনো মিরাকেল ঘটনা কিংবা ওপরওয়ালার আশীর্বাদও নয়। ছোট বয়স থেকে বাবাকে এইভাবে কাজ করতে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি।’
প্রেম কুমার বলেন, ‘ছোটবেলায় বাবাকে দেখতাম, মাঝেমধ্যে গরম কড়াইয়ের মধ্যে হাত দিয়ে মাছ উলটে-পালটে ভাজতেন। তাই দেখে ছোট থেকে আমিও বাবার সেই কায়দা রপ্ত করার চেষ্টা করি। প্রথম প্রথম একটা আঙুল গরম তেলের মধ্যে ডুবিয়েই তুলে নিতাম। তারপর রোজ রোজ একটু একটু করে এই কাজ করতে করতে একসময় অভ্যেসে পরিণত হয়ে গেল। তখন আর আঙুলে গরম লাগত না।’
‘প্রথমে একটা, তারপর দুটো, পরে সব আঙুলগুলোই গরম তেলে ডুবিয়ে মাছ ভাজা অভ্যেসে পরিণত হয়ে গেল। আজ বছরের পর বছর এভাবে কাজ করতে করতে এখন আর আঙুলে গরম লাগে না। সহনীয় হয়ে গেছে।’ বলেন প্রেমকুমার।
তবে সব ক্ষেত্রেই যে আঙুল দিয়ে মাছভাজা কিংবা অন্য খাবার তৈরি করা যায় না, সে কথা মেনে নিয়ে প্রেম কুমার বলেন, ‘মাঝে মধ্যে হাতা, খুন্তি কিংবা বাসনপত্র ব্যবহার করতে হয়। তবে দোকানে খরিদ্দার ঢুকে গেলে আর সেসব ব্যবহার করা যায় না। কারণ, বেশির ভাগ ক্রেতারাই দোকানে এসে গরম তেলে হাত ডুবিয়ে মাছ ভাজার অনুরোধ করে বসেন।’ তিনি বলেন, ‘খরিদ্দার মানেই তো লক্ষ্মী। সুতরাং খরিদ্দারের অনুরোধ ফেলি কী করে?’