‘আহারে বাংলা’য় সব আছে, শুধু গোমাংস নেই

ভারতে ক্রমাগত ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার পাশাপাশি গোমাংস নিয়ে যখন প্রতিনিয়ত দেশজুড়ে বিতর্ক দানা বাঁধছে, ঠিক সেই সময় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে আয়োজিত খাদ্য উৎসবে ঠাঁই মেলেনি সেই গোমাংসের।
৩০ অক্টোবর থেকে কলকাতার মিলনমেলা প্রাঙ্গণে শুরু হওয়া চারদিনব্যাপী ‘আহারে বাংলা’ নামের এই খাদ্য উৎসবে ছিল না গরুর মাংস দিয়ে তৈরি কোনো পদ।
অথচ এর মাত্র একদিন আগে খোদ কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলার বুকে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল, বামফ্রন্টসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী একদল বুদ্ধিজীবী এবং বিশিষ্ট ব্যক্তি প্রকাশ্যে গোমাংস খেয়ে এ নিয়ে ভারতে বেড়ে চলা অসহিষ্ণুতার প্রতিবাদ জানান। এমন সময় পশ্চিমবঙ্গ প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের উদ্যোগে আয়োজিত এই খাদ্য উৎসবে গরুর মাংসের অনুপস্থিতি স্বভাবতই অনেককে অবাক করেছে।
অনেকেই মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে জাত-পাতের ঊর্ধ্বে ওঠার বার্তা দিলেও আসলে তিনি সমালোচনার ভয়েই গোমাংসকে এই খাদ্য উৎসব থেকে বাদ রেখেছেন। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা জল্পনা শুরু হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন মহলে।
কলকাতার মিলন মেলা প্রাঙ্গণে ৩০ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে ‘আহারে বাংলা’ নামের খাদ্য উৎসব। চলবে আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত। এই উৎসবে নানা ধরনের খাবারের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন রকম মাছের রকমারি পদ। রয়েছে নানা ধরনের মাংসের সুস্বাদু পদও।
এর মধ্যে রয়েছে মুরগি, কোয়েল, টার্কি, ভেড়া, শূয়র এবং খরগোশের মতো প্রাণির মাংস। কিন্ত আশ্চর্যজনকভাবে রকমারি এই মাংসের ভিড়ে প্রথম দিন থেকেই অনুপস্থিত রয়েছে গরুর মাংস। ফলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে আয়োজিত এই উৎসবে এসে গোমাংসপ্রেমীদের রীতিমতো হতাশা নিয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে।
এ সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের পুর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, এই মেলায় গোমাংসের প্রয়োজনীয়তা সেভাবে নেই বলেই গোমাংসকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তবে ফিরহাদ হাকিম এটাও জানান, কে কী খাবেন সেটা প্রত্যেকের নিজস্ব ব্যাপার। সেই ব্যাপারে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
‘আহারে বাংলা’ উৎসবে বাংলার বিভিন্ন ধরনের খাবারের নানা ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হয়েছে। এই আয়োজনে রয়েছে লোভনীয় ১৫০টির মতো পদ। যার মধ্যে এমন কিছু পদ রয়েছে যা বাংলা ও বাঙালির রান্নাঘর থেকে অবলুপ্তির পথ ধরছে। সেই সব হারিয়ে যেতে বসা পদকে তুলে ধরে খাদ্যরসিকদের রসনা তৃপ্তি করাই এই খাদ্য উৎসবের মূল লক্ষ্য। তবে সেই উৎসবে গোমাংসের অনুপস্থিতি স্বভাবতই বিতর্কের ইন্ধন জুগিয়েছে মেলায় আসা অনেকের মধ্যে।