চোরকে সাহায্য করায় আঙুল কেটে দিল আরেক চোর!

কথায় বলে চোরে চোরে নাকি মাসতুতো ভাই। তাহলে তো এক চোরের বিপদে আরেক চোরের এগিয়ে আসার কথা। কিন্তু ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদহে ঘটেছে উল্টো ঘটনা। সেখানে এক চোরকে সাহায্য করতে একজন এগিয়ে আসায় খেপেছে আরেক চোর। আর খেপে গিয়ে ওই সাহায্যকারীর আঙুলই কেটে নিয়েছে সে।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার কালিয়াচক থানার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মহব্বতপুর গ্রামে। জানা গেছে, এলাকায় এক দোকানে চুরির ঘটনায় গত সোমবার সন্ধ্যায় সালিশি সভা বসে ওই গ্রামে। গ্রামের মোড়ল-মাতব্বরদের নিয়ে বসা বিচারে দুই চোরের জরিমানা ধার্য করা হয় পাঁচ হাজার টাকা। আর সেই টাকা শোধ করা নিয়ে দুই চোরের লড়াইয়ে হাতের আঙুল কাটা যায় এক চোরের আত্মীয়র। আরেক চোরের হাঁসুয়ার কোপে গুরুতর জখম আজিজুর শেখ (৪২) নামের এক ব্যক্তি। আহত আজিজুর শেখকে বর্তমানে মালদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছে আক্রান্তের পরিবার।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, দেড় মাস আগে স্থানীয় ফিটু শেখের ইলেকট্রিক সামগ্রীর দোকান থেকে ছয় হাজার টাকার মালামাল চুরি হয়। ওই ঘটনায় এলাকারই দুই যুবক মাসুদ শেখ ও শরিফুল শেখকে সন্দেহ হয় দোকান মালিকের। এরপর থেকে এলাকা ছেড়ে গা-ঢাকা দিয়েছিল অভিযুক্ত মাসুদ শেখ ও শরিফুল শেখ।
চুরি করা সামগ্রী সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তি অন্য দোকানে বিক্রি করে দিয়েছে- এমন অভিযোগ আনেন দোকান মালিক ফিটু শেখ। এই অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার সালিশি সভা ডাকা হয়। ওই সালিশি সভায় সবার সামনে দোকানে চুরির ঘটনা স্বীকার করে নেয় অভিযুক্ত দুই ব্যক্তি।
সালিশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভিযুক্ত শরিফুল ও মাসুদকে মোট পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শরিফুলের চাচা আজিজুর শেখ ওই সভায় উপস্থিত থেকে পুরো টাকা পরিশোধ করেন।
এই ঘটনার পরের দিন মঙ্গলবার মাসুদের কাছে শরিফুল আড়াই হাজার টাকা দাবি করে। কিন্ত মাসুদ সেই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ নিয়ে শুরু হয় দুই চোরের মধ্যে বচসা। চলে হাতাহাতিও।
শালিসে শরিফুলের কাকা উপস্থিত থেকে কেন শরিফুলের জরিমানার টাকা দিয়ে দিলেন সেই রাগ মাসুদের গিয়ে পড়ে আজিজুর শেখের ওপর। ওই দিন রাতে মাসুদ দলবল নিয়ে লাঠিসোঁটা হাতে আজিজুর শেখের বাড়িতে চড়াও হয়। এ সময় আজিজুরের মাথায় হাঁসুয়ার কোপ মারা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ সময় রাগের মাথায় আজিজুরের ডান হাতের বুড়ো আঙুল কেটে নেয় মাসুদ। আজিজুর শেখের চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসতেই মাসুদ ও তার দলবল পালিয়ে যায়।
আহত আজিজুর শেখকে উদ্ধার করে প্রথমে মালদহের কালিয়াচকের সিলামপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে মালদহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
এ ঘটনায় আহত আজিজুরের পরিবারের পক্ষ থেকে কালিয়াচক থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। মালদার পুলিশ সুপার প্রসুন ব্যানার্জি জানান, ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তদন্ত শেষে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।