নেতাজীর মৃত্যু সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রকাশ করবে না ভারত!

আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে একটি বিমান দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু। তবে তাঁর মৃত্যু নিয়ে বেশ রহস্যও রয়েছে। বলা হয়, এই ঘটনা তদন্ত করতে এসেছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি। সত্যিই নেতাজির মৃত্যুর রহস্য তদন্তে কেজিবি এসেছিল কি না সে সম্পর্কে কোনো রকমের তথ্য দিতে নারাজ ভারত সরকার।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, এ বিষয়ে ১৯ বছর আগে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আরএল নারায়ণের নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। সে সময় নারায়ণ রাশিয়ার কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলেন যে, নেতাজীর সোভিয়েত ইউনিয়নে অবস্থান সংক্রান্ত কেজিবির কোনো তথ্য তাদের কাছে থাকলে তা যেন ভারতকে জানানো হয়।
১৯৯৬ সালের ১২ জানুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবকে উল্লেখ করে একটি চিরকুট লেখেন নারায়ণ। এই চিরকুটের ওপর ভিত্তি করে তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রী প্রণব মুখার্জি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও নারায়ণকে বিষয়টি নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনা করার নির্দেশ দেন একই বছরের ১৪ জানুয়ারি।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় জানায়, এ বিষয়ে নির্দিষ্ট বিভাগে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এ বিষয়ে যখন দেশটির তথ্য অধিকার আইনের ভিত্তিতে যখন তথ্য চাওয়া হয় তখন জানানো হয়, ২০০৫ সালের তথ্য অধিকার আইনের ৮ (১)(এ) ধারা অনুযায়ী এসব তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
তথ্য অধিকার আইনের ওই ধারায় বলা আছে, ভারতের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য ক্ষতিকর কোনো তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। তবে হাস্যকর বিষয় হলো, এটিকে গোপন তথ্য বলা হলেও ইন্টারনেটজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে এসব তথ্য। তাই এই প্রস্তাবের বিষয়ে নেওয়া পদক্ষেপ এক ধরনের রহস্য হয়েই রয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য না দেওয়ার এই ঘোষণা এমন সময় এলো যখন ট্রান্সপারেন্সি প্যানেলে এ সংক্রান্ত দুটি মামলায় আপিল করা হয়েছে।
নারায়ণের লেখা চিরকুটে দেখা যায়, সোভিয়েত ইউনিয়ন বা রাশিয়া থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন নিবন্ধের মাধ্যমে জানা যায়, ১৯৪৫ সালে কথিত বিমান দুর্ঘটনার সময় নেতাজী সোভিয়েত ইউনিয়নে অবস্থান করছিলেন বা তাঁকে সেখানে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিলে। যদিও এই দাবির পক্ষে এখনো কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
চিরকুটে নারায়ণ বলেন, ‘১৯৯২ সালের জানুয়ারি মাসে আমরা রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি দাবি জানতে পারি। সেটি হলো, রাশিয়ার কেন্দ্রীয় এবং রিপাবলিকান আর্কাইভে ১৯৪৫ সাল বা এরপর ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর সোভিয়েত ইউনিয়নে অবস্থানের কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।’
এই ইস্যু তদন্ত করতে ১৯৯৫ সালে ভারতের একদল পণ্ডিত মস্কো সফরে যান।
চিরকুটে আরো বলা হয়, ‘এই পণ্ডিতদের দলটি বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করেন। কিন্তু কারো কাছ থেকেই নেতাজীর সোভিয়েত ইউনিয়নে অবস্থান সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাননি। সেখানকার মানুষ ভারতের পণ্ডিতদের এটাও বলেছেন যে, পুরো বিশ্বের সব মানুষের মতো রাশিয়ার মানুষও নেতাজীর অন্তর্ধান নিয়ে সৃষ্ট রহস্যের জাল ভেদ করে আসল ঘটনা জানতে আগ্রহী।’
নারায়ণ বলেছেন, এই সম্পর্কে তিন ধরনের স্থানে তথ্য সংরক্ষিত হয়ে থাকতে পারে। প্রথমত, স্টালিনের শাসনামলের বিভিন্ন পত্রিকার তথ্য। নারায়ণের নোট লেখার সময় ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত যেখানে পৌঁছা অসম্ভব ছিল। দ্বিতীয়ত, স্টালিনের শাসন পরবর্তী সময়ের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য। তবে সেগুলোও সরিয়ে রাখা হয়েছে।
নারায়ণের মতে, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মৌখিকভাবে জানিয়েছে, সুভাষ চন্দ্র বসুর অন্তর্ধান সংক্রান্ত তথ্য স্টালিনের শাসন পরবর্তী সময়ের পত্রপত্রিকায় পাওয়া যেতে পারে।
ভারতের পণ্ডিতদের এ বিষয়ে গবেষণা করতে কেজিবির তথ্য সংরক্ষণাগারে রাশিয়া প্রবেশ করতে দেবে এমন ভাবনাকে অবাস্তব বলে মনে করছেন নারায়ণ। তিনি বলেন, ‘আমরা যেটা করতে পারি সেটা হলো রাশিয়াকে অনুরোধ করা। তাদের অনুরোধ করা যে তারা যেন নিজেরাই খুঁজে দেখে এবং ভারতকে জানায় যে ওই সময় নেতাজীর সোভিয়েত ইউনিয়নে অবস্থানের কোনো তথ্য তাদের কাছে সংরক্ষিত আছে কি না।’
আপিলে নারায়ণের এই চিরকুটের একটি কপি সংযুক্ত করে এর পরিপ্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া সুভাষ চন্দ্র বসু ও তাঁর আজাদ হিন্দ ফৌজ সংক্রান্ত যেসব ফাইল বা নথি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আছে তারও একটি তালিকা চাওয়া হয়েছে।