উত্ত্যক্ত করায় থানার ভেতরে নারীর জুতাপেটা

গত কিছুদিন ধরে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের হোমপেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে মারধরের একটি ভিডিও। আর এই মারধরকে উৎসাহিত করে লক্ষাধিকবার এই ভিডিওটি শেয়ার করছেন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা।
urgentPhoto
অপরাধীর এমন শান্তিই হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য তাদের। ভিডিওটি ব্যাপক হারে ছড়াচ্ছে ইন্টারনেটজুড়ে। সঙ্গে নিজেদের বিভিন্ন মতামতও যুক্ত করছেন। যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে এভাবেই রুখে দাঁড়ানো উচিত বলে মনে করছেন নেটিজেনরা।
যে ভিডিওটির কথা বলা হচ্ছে, সেটি ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি থানার ভেতরের দৃশ্য। ভিডিওতে দেখা যায়, ইভটিজিং করার অভিযোগে আটক এক তরুণকে থানার ভেতরেই পুলিশ কর্মকর্তার সামনে জুতা দিয়ে পেটাচ্ছে এক কিশোরী। ক্যামেরার সামনে ওই তরুণকে নিজের পায়ে ধরে মাফ চাইতে বাধ্য করছে সে। সেই সঙ্গে আর কখনো উত্যক্ত করবে কি না, মারতে মারতে সেই প্রশ্নও বারবার করছে কিশোরীটি।
যৌন হয়রানি বা উত্ত্যক্ত করার এমনই প্রতিবাদ হওয়া উচিত বলে মত দিচ্ছেন বেশির ভাগ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। ভারতের উত্তর প্রদেশের এই ভিডিওটি গত দুদিনে কয়েক লাখবার শেয়ার করা হয়েছে। ইউটিউবে গত ৭ জুলাই এনডিটিভির পোস্ট করা ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে ৪১ হাজারবার। পাঞ্জাব কেশরি নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে আপলোড করা ভিডিওটি শেয়ার হয়েছে ২৪ হাজারবার। এই ভিডিওতে মন্তব্য করেছেন দুই হাজারেরও বেশি মানুষ।
হিন্দুস্তান টাইমসের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে শেয়ার করা এই ভিডিওটি দেখেছেন প্রায় সাড়ে ১০ লাখ মানুষ। এটি শেয়ার করা হয়েছে প্রায় ২০ হাজারবার আর ভিডিওটিতে লাইক দিয়েছেন ২২ হাজার মানুষ। একই সঙ্গে ভিডিও নিয়ে মন্তব্য করেছেন প্রায় তিন হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারী।
ভারতীয় গণমাধ্যম মিড-ডে ওই কিশোরীর বরাত দিয়ে তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, সরস্বতী বিদ্যা মন্দির কলেজের বাইরে দাঁড়িয়ে ওই তরুণ প্রায়ই সময় মেয়েদের প্রতি অশালিন মন্তব্য করত। পরে একদিন ওই তরুণকে থানায় নিয়ে এসে মারধর করতে শুরু করে ওই কিশোরী।
মিড-ডে বলছে, সম্ভবত ভিডিওটি করেছেন একজন পুলিশ সদস্য। কেননা ভিডিও শুরুর সময় শোনা যায় কেউ একজন মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, ‘আসো মা, মারো’ (চাল বেটা, মার)। সেই সঙ্গে ভিডিওটিতে আরো একজন পুলিশ সদস্যকে দেখা যায় যিনি মেয়েটির পেটানোর দৃশ্য দেখে হাসছেন।
এ ঘটনায় কিশোরীটি কোনো মামলা না করায় মাফ চেয়েই ছাড়া পেয়ে গেছে তরুণটি। তবে পিলিভিট জেলার পুলিশ সুপার জে কে শাহী এই ভিডিওটি দেখার পর ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে বিজেপির মুখপাত্র বিজয় বাহাদুর পাঠক বলেছেন, এই ভিডিওটি আরো একবার সমাজবাদী দল শাসিত উত্তর প্রদেশের দুর্বল আইন ও শাসনব্যবস্থাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। এই রাজ্যে ইভটিজিং ও ধর্ষণ এখন নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গত কয়েক বছরে ভারতে যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া আজ বৃহস্পতিবার তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভারতে প্রতিদিন শিশুর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে অন্তত আটটি মামলা দায়ের করা হয়। দেশটির ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অব চাইল্ড রাইটস-এর তথ্যানুযায়ী, এসব ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মামলা হয় রাজস্থানে। এর পরেই রয়েছে মহারাষ্ট্র, উত্তর প্রদেশ ও কেরালা।
এর আগে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে হাফিংটন পোস্ট জানিয়েছিল, ভারতে প্রতিদিন অন্তত ৮৪৮ জন নারী যৌন হয়রানি, ধর্ষণ ও খুনের শিকার হন। এ ছাড়া ২০১৩ সালে গোটা ভারতে প্রায় ৩৪ হাজার নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এই সংখ্যা ২০১২ সালের চেয়ে প্রায় ৩৫.২ শতাংশ বেশি। আর ধর্ষণের ঘটনার দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে আছে দিল্লি। এই শহরকে নারীর জন্য সবচেয়ে অনিরাপদ শহর বলে মনে করা হয়। এ ছাড়া আসাম, ত্রিপুরা ও রাজস্থানও নারীর জন্য অনিরাপদ হিসেবে বিবেচিত বলে জানিয়েছে হাফিংটন পোস্ট।