হঠাৎ করেই ফোন রেখে দেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের কমান্ডার ইন চিফের তরফ থেকে এটাই হতে পারত সবচেয়ে উপযুক্ত ও সমমনস্ত কথোকথন। অস্ট্রেলিয়া যে দেশটির সবচেয়ে বড় অনুগত মিত্র। অন্তত আজকের দিনের আগ পর্যন্ত এই সম্পর্ক ছিল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অস্ট্রেলিয়া প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলকে ঝাঁঝাল কথা বললেন। বিশেষ করে দুই দেশের শরণার্থী চুক্তি নিয়ে। এ সময় নাকি নির্বাচনে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটে জয় পাওয়া নিয়েও দম্ভ করেন ট্রাম্প। জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা এমনই বলেছেন। তার ওপর কথোপকথনের জন্য এক ঘণ্টা নির্ধারণ করা ছিল। কিন্তু ট্রাম্প হঠাৎই ফোনটা রেখে দেন।
একপর্যায়ে ট্রার্নবুলকে ট্রাম্প জানান, এ পর্যন্ত তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ চার বিশ্বনেতার সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু এটাই ছিল সবচেয়ে খারাপ ফোন কল।
অস্ট্রেলিয়ার বন্দিশিবিরে আটক ১২৫০ জনকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অঙ্গীকার পূরণ করবে, টার্নবুল একথা বলার চেষ্টা করলে ট্রাম্প বলেন, ‘সবচেয়ে বাজে চুক্তি।’
প্রেসিডেন্ট হওয়ার কয়েকদিনের মাথায় ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে তাঁর দেশে শরণার্থী প্রবেশ বন্ধ করা হয়। এ ছাড়া সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের ভিসা বন্ধ করে দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধঘোষিত এসব দেশ হচ্ছে সিরিয়া, ইরাক, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এসব দেশ সংঘর্ষ ও সন্ত্রাসপ্রবণ।
বুধবার রাতে ট্রাম্প টুইটারে লেখেন, ‘আপনারা বিশ্বাস করেন, ওবামা প্রশাসন হাজারো অবৈধ অভিবাসীকে অস্ট্রেলিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসতে রাজি হয়েছে, কেন? আমি গর্দভমার্কা চুক্তিটা যাচাই করব।’
মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, মেক্সিকোসহ বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে একই ভাষায় কথা বলেছেন, একই আচরণ করেছেন। কিন্তু টার্নবুলের সঙ্গে আলাপ বিশেষ গুরুত্ববহ, কারণ দুই দেশের নিবিড় সম্পর্ক। দুই দেশ গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদান করে, কূটনৈতিকভাবে একে অপরকে সমর্থন করে। ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধ করেছে।
আলাপ নিয়ে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে চাননি। তবে জ্যেষ্ঠ আরেক কর্মকর্তা স্বীকার করেন, টার্নবুলের সঙ্গে আলাপ ছিল শত্রুতাপূর্ণ। তবে তিনি বলেন, জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়ার নেতাদের সঙ্গে গঠনমূলক ও প্রশংসনীয় কথা বলেন ট্রাম্প।
আলাপের একপর্যায়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এই লোকদের নিতে চাই না।’ তিনি বারবার ১২৫০ শরণার্থীর সংখ্যাটিকে ২০০০ বলে উল্লেখ করছিলেন। তিনি বলেন টার্নবুলকে বলেন, ‘আমার ইচ্ছা হলো চুক্তিটিকে সম্মান করা।’ এ কথায় বোঝা যায় ভবিষ্যতে ট্রাম্প এ ধরনের চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসবেন।
তবে ক্যানবেরায় মার্কিন দূতাবাস থেকে জানানো হয়, ‘শরণার্থী চুক্তি মেনে চলার ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবস্থান বদলায়নি।’
গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ভোটে ডেমোক্র্যাট দলের হিলারি ক্লিনটনকে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে হারিয়ে দেন তিনি।
দায়িত্ব নেওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সদ্য বিদায়ী বারাক ওবামার বেশ কয়েকটি আদেশ বাতিল করে দেন। এর মধ্যে আছে স্বাস্থ্যবিষয়ক ‘ওবামাকেয়ার’। এ ছাড়া মেক্সিকোর সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। নর্থ ডাকোটায় তেল পাইপলাইন নির্মাণেরও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। যদিও বিক্ষোভের মুখে বারাক ওবামা এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছিলেন।
ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিতির সংখ্যা নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। সিএনএনসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ভিডিও ফুটেজে ২০০৯ সালে বারাক ওবামার অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত জনতার সংখ্যা বেশি দেখা যায়। তবে হোয়াইট হাউসের নতুন প্রেস সেক্রেটারি শন স্পাইসার বলেন, সংবাদমাধ্যম মিথ্যাচার করছে। এমনকি ট্রাম্পও তাঁর টুইটারে সংবাদমাধ্যমের দিকে অভিযোগের তীর তোলেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে হিলারির পক্ষে জাল ভোট পড়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন। নির্বাচনের আগেও তিনি এ বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। নির্বাচনে ট্রাম্প ইলেকটোরাল কলেজ ভোট বেশি পেলেও হিলারি জনপ্রিয় ভোট বেশি পেয়েছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ভোট ব্যবধান প্রায় ৩০ লাখ।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার দিনই যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নামে। এদের বেশির ভাগই নারী। তারা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। ভোটগ্রহণের আগেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ নানা অভিযোগ আসতে থাকে। অনেক নারী সংবাদ সম্মেলনে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়ী হওয়ার পরও তাঁর বিরুদ্ধে এক নারী যৌন হয়রানির মামলা করেছেন।