করোনাভাইরাসে উহানের পর অবরুদ্ধ চীনের আরেক শহর

চীনে করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল হিসেবে পরিচিত হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে অনেক দূরে ওয়েনঝু নামের আরো একটি শহরকে পুরোপুরি অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। অবরুদ্ধ ঝিজিয়াং প্রদেশের ওয়েনঝু শহরে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএ এ খবর জানিয়েছে।
চীনা সরকারে পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হুবেই প্রদেশের পর সবচেয়ে বেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ঝিজিয়াং প্রদেশে। এ প্রদেশে শেষ খবর পর্যন্ত ৬৬১ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে ওয়েনঝু শহরেই আক্রান্ত ২৬৫ জন।
জানা গেছে, উহান শহরের মতোই এ ভাইরাসের জন্য কড়া নিয়ম-নীতি আরোপ করা হয়েছে ওয়েনঝু শহরে। প্রতি দুই দিনে পরিবারের একজন ব্যক্তি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে বাইরে বের হতে পারবেন। যদিও এর আগে এ শহরে সিনেমা হল, জাদুঘরসহ জনসমাগমস্থল ও গণপরিবহন স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ।
এরই মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬১ জনে। এ ছাড়া আজ সোমবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অন্তত ১৭ হাজার ২০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্তের আশঙ্কায় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন দেড় লাখের বেশি মানুষ। মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল হিসেবে পরিচিত হুবেই প্রদশের উহান শহরে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ফিলিপাইনে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার দেশটির রাজধানী ম্যানিলায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর। এই প্রথম প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনের বাইরে মৃত্যুর ঘটনা ঘটল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিপাইনে মৃত ৪৪ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি সম্প্রতি চীনের উহান শহর থেকে দেশে ফিরেছিলেন।
ফিলিপাইনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রতিনিধি রবীন্দ্র আবেয়াসিংহে জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনের বাইরে এটিই প্রথম মৃত্যুর খবর। তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, নিহত ব্যক্তি স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হননি। তিনি এ ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল থেকে এসেছিলেন।’
এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণের কারণে রীতিমতো একঘরে হয়ে পড়ছে চীন। দেশটির উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী এই ভাইরাস এখন বিশ্বের ২৪টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
চলতি সপ্তাহে ডব্লিউএইচও করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার কথা বললেও বৈশ্বিক বাণিজ্য ও ভ্রমণের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিধিনিষেধ না দেওয়ার অনুরোধ করে। কিন্তু তাদের অনুরোধ রাখেনি কেউ। উল্টো কঠিন খড়গ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, হংকং, এমনকি রাশিয়াও চীনফেরত কোনো নাগরিককে ঢুকতে দিচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে বিচ্ছিন্নতার মুখে পড়েছে চীন। তাতে বড় ধরনের চাপে রয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও গণপরিবহন বন্ধ করেও এ ভাইরাসের দ্রুত বিস্তার ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়েছে চীনের পক্ষে।
ভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে বেশিরভাগ দেশই তাদের নাগরিকদের চীন থেকে ফেরত আনছে। এই ফেরত আনা নিয়ে নিজ দেশেও বিপত্তিতে পড়তে হচ্ছে অনেক দেশের সরকারকে। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি ইন্দোনেশিয়া। উহান থেকে নাগরিকদের ফেরত আনায় সেখানে বিক্ষোভ করেছে জনগণ।