পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা কোন স্থান থেকে দেখবেন,কীভাবে যাবেন?

বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে যেন আকাশের বুকে প্রকাণ্ড পাহাড়ের ওপর একগুচ্ছ রঙিন প্রতিচ্ছবি। কখনো দেখতে শ্বেত-শুভ্র আবার কখনো দেখতে সূর্য ও কমলা রঙের।
২৮ হাজার ১৬৯ ফুট উচু এই চূড়া মাথায় নিয়ে মহান হিমালয়ের অবস্থান নেপাল ও ভারতের সিকিম রাজ্যের মাঝামাঝি সীমান্তরেখায়। আর বাংলাদেশ থেকে এই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে যেতে হবে পঞ্চগড়ে। তবে এবার কিছুটা আগে এই বছর কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে।
পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সেরা সময়
সাধারণত শীতকালে দূরের মেঘমুক্ত আকাশে যেন ভেসে থাকতে দেখা যায় তুষারশুভ্র পাহাড়ের চূড়া। রোদের আলোয় চিকচিক করতে থাকে কাঞ্চনজঙ্ঘার সেই মোহনীয় শোভা উপভোগ করার জন্য শীতই সবচেয়ে সেরা সময়। পাহাড় চূড়ার প্রাকৃতিক দৃশ্যটি সারা দিনের ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রুপ ধারণ করে। তাই বছরের যেকোন সময় না গিয়ে অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়টাতে যাওয়া উত্তম। এই সময়টাতে আকাশ একদম পরিষ্কার থাকে। মেঘের সঙ্গে বরফে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘার লুকোচুরি খেলার কোন উপায় থাকে না। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানের ফাঁকা জায়গায় দাড়ালে খুব ভোরে মেঘ ও কুয়াশামুক্ত নীল আকাশ জুড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোরম দৃশ্য পর্যটকদের খালি চোখেই এঁকে দেয় বিস্ময়ের চিহ্ন।
তেঁতুলিয়া কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বিমান পথে, রেল পথেও সড়ক পথে আসা যায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। বিমান পথে আসলে আগে নামতে হবে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে, সেখান থেকে মাইক্রোবাস অথবা বাসে আসা যাবে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়।
রেল পথে আসলে নামতে হবে পঞ্চগড় রেল স্টেশনে, সেখান থেকে অটোবাইক, ইজিবাইক অথবা বাসেও আসা যাবে। খরচ পড়বে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত জনপ্রিয় ১০০ টাকা করে। সড়ক পথে ঢাকা থেকে স্লিপার এসি কোচে করে আসা যাবে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়, ভাড়া পড়বে ১২০০-১৮০০ টাকা, চেয়ার কোচে ভাড়া পরবে ৭০০ থেকে ১১০০ টাকা। সড়ক পথে আসলে সকাল ১০ টার আগেই পৌঁছে যাবেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া।
তেঁতুলিয়ায় থাকবেন যেখানে
তেঁতুলিয়ায় আসার পর বাজারের ১ কিলোমিটারের মধ্যেই বেশ কয়েকটি আবাসিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে,সরকারিভাবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানেও থাকার ব্যবস্থা রয়েছে, সেগুলোতে আগে থেকেই প্রশাসনের মাধ্যমে বুকিং নিতে হয়। আর যেগুলো বেসরকারি আবাসিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলো চাইলে আসার পরেও নিজেদের বাজেট অনুযায়ী দেখে রুম বুকিং করার সুযোগ রয়েছে তবে বৃহস্পতিবার শুক্রবার এবং শনিবার এই তিন দিন বেশিরভাগ আবাসিক হোটেল অক্টোবর এবং নভেম্বর মাস জুড়ে অগ্রিম বুকিং থাকে এতে করে অনেকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পরে, তখন তাদের জন্য হোমস্টে বেছে নিতে হয়। অক্টোবর এবং নভেম্বর মাস যারা তেতুলিয়া ভ্রমণ করবেন তারা অবশ্যই অগ্রিম বুকিং করেই আসার চেষ্টা করবেন।
কাঞ্চনজঙ্ঘা কোন স্থান থেকে দেখবেন
সকাল বেলা হিমালয় পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য সূর্যোদয়ের সাথে সাথে তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নার ডাকবাংলাতে ভিড় করতে থাকে পর্যটকরা, পিকনিক কর্নার বাজার থেকে ১ কিলোমিটার দূরে, যেতে সময় লাগে ৫ মিনিটের মত। ভোরবেলাতে অটো ভ্যান পাওয়া যায়, সেগুলোতে করে পিকনিক কর্নারে যেতে ভাড়া গুনতে হয় জনপ্রতি ১০ টাকা করে। তবে হিমালয় পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা গেলে উপজেলার প্রায় সব জায়গা থেকেই দেখা যায়।
কাঞ্চনজঙ্ঘা ছাড়াও আর কি দেখবেন পঞ্চগড়ে পর্যটকেরা শুধু কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতেই আসেন এমন নয়, গায়ে মাখেন আগাম শীতের হাওয়া। শীত শীত আবহাওয়ায় ঘুরে দেখতে পারেন তেঁতুলিয়ার আরও কিছু দর্শনীয় স্থান। বাংলাদেশর সর্ব উত্তরের শেষ প্রান্ত পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা। বাংলাবান্ধায় রয়েছে স্থলবন্দর, ভারত-নেপাল-ভুটানের সাথে চলে এই স্থলবন্দর দিয়ে ব্যবসা বানিজ্য,তেঁতুলিয়ায় গেলে ঘুরে আসতে পারেন সেখান থেকেও। তেঁতুলিয়ায় মহানন্দা নদীতে নুড়ি পাথর তোলার দৃশ্য দেখতে পাবেন দেশের একমাত্র সমতলভূমির চা চাষ হয় পঞ্চগড় জেলায়। চা–বাগান ঘুরেও দিনের একটা সময় কাটিয়ে দিতে পারেন। এই এলাকায় বিভিন্ন জাতের বাশ উৎপাদন হয়ে থাকে, যা অন্য এলাকার চেয়ে ব্যাতিক্রম, চাইলে সেটিও দেখে আসতে পারেন। মহানন্দা পার্ক, সেখানে থেকেও দেখা মিলে হিমালয় পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘার কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট এর ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি আনন্দধারা নামে রিসোর্ট রয়েছে, অনুমতি সাপেক্ষে সেটিও দেখে আসতে পারেন পর্যটকরা।
বাংলাদেশ থেকে সুদূর কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্য দর্শনে পঞ্চগড় ভ্রমণে পাওয়া যাবে এক অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পের অভিজ্ঞতা। ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর নানা শ্রেণীর পর্যটকদের আসা–যাওয়ার ফলে এ অঞ্চলটিতে তৈরি হয়েছে পর্যটন শিল্পের সমৃদ্ধির সুযোগ। হাজার বছরের চমকপ্রদ ইতিহাস-ঐতিহ্য, পাথর ও চা শিল্প; সব মিলিয়ে ভ্রমণের জন্য এক পরিপূর্ণ এলাকা। শুধু প্রয়োজন অবকাঠামোগত উন্নয়নের। বিশেষ করে সরকারি উদ্যোগে এখানে পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হলে, এই ছোট্ট উপজেলাই পরিণত হতে পারে রাজস্ব আয়ের একটি কার্যকর উৎসে।