কাজের চেয়ে কথায় বড় হয়ে উঠছেন রশিদ খান

আফগানিস্তানের তারকা লেগস্পিনার ও অধিনায়ক রশিদ খান গত এক দশকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বিশ্বসেরা স্পিনারদের কাতারে। কিন্তু সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তার পারফরম্যান্স এবং মাঠের বাইরের কিছু মন্তব্য ঘিরে প্রায়ই সমালোচনার মুখ পড়েন।
অনেক সময় তার কর্মকান্ড বিনোদনের খোরাক হয়ে দাঁড়াচ্ছে দর্শকের কাছে। প্রশ্ন জাগে, রশিদ কি তবে নিজের কাজের থেকে কথায় বড় হয়ে উঠছেন?
এশিয়া কাপ শুরুর আগে এক সাক্ষাৎকারে রশিদ দাবি করেছিলেন, ভারতের পর আফগানিস্তান এশিয়ার দ্বিতীয় সেরা দল। বাস্তবে অবশ্য সেই দাবি ফাঁকা বুলি হিসেবেই দেখা গেছে। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে টুর্নামেন্ট থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে আফগানদের। অথচ বাংলাদেশ ম্যাচ নিয়ে পরবর্তীতে আক্ষেপ ঝরিয়ে নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে চেয়েছেন রশিদ।
এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আবুধাবিতে গত বৃহস্পতিবার ম্যাচে মজার এক ঘটনা ঘটে রশিদের সঙ্গে। নুয়ান থুসারার করা ১৮তম ওভারের প্রথম বল তার পায়ে লেগে স্টাম্পে লাগে। অথচ রশিদ বুঝতেই পারেননি তিনি বোল্ড হয়েছেন। আম্পায়ারের দিকে তাকিয়ে রিভিউ নিতে চাইছিলেন, ভেবে নিয়েছিলেন এলবিডব্লিউ! থুসারাও একই ভুল করেন। পরে স্টাম্পের এলইডি বাতি জ্বলে উঠলে এই দুজনের সাথে হাসতে থাকেন দুই দলের খেলোয়াড়সহ আম্পায়াররাও।
এর আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, আফগান অলরাউন্ডার করিম জানাতকে সাকিব আল হাসানের চেয়েও বড় মাপের খেলোয়াড় বলে মনে করেন তিনি। ক্রিকেট বিশ্বে যিনি স্বীকৃতভাবে সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারদের একজন, তার সঙ্গে নিজের দেশের এই অলরাউন্ডারের তুলনা করে কতটা বাস্তবসম্মত, সেটি নিয়েও প্রশ্নও উঠেছে।
রশিদের আত্মপ্রশংসা এখানেই থেমে নেই। সম্প্রতি ক্রিকইনফোর প্রকাশ করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, একটি র্যাপিড ফায়ার রাউন্ডে যখন তাকে প্রশ্ন করা হয়েছে স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে সেরা স্পিনার কে? সেখানেও নিজেকেই বেছে নেন তিনি। হয়তো মজা করেই এমনটা বলেছেন, তবে একজন অধিনায়কের কাছ থেকে বিনয়ের উদাহরণ না দেখে দম্ভ দেখাটা হাস্যকরই মনে হতে পারে অনেকের কাছে।
সম্প্রতি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে সময়টা ভালো যাচ্ছেনা রশিদের। গত আগস্টে ইংল্যান্ডের ১০০ বলের টুর্নামেন্ট দ্য হানড্রেডের ইতিহাসে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ রান খরচের বিব্রতকর রেকর্ড গড়েন তিনি। ওভাল ইনভিন্সিবলসের হয়ে বার্মিংহাম ফোনিংক্সের বিপক্ষে মাঠে নেমে ২০ বলে (৪ ওভারে) ৫৯ রান দেন রশিদ। টি-টোয়েন্টি সংস্করণে রশিদের ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ রান খরচের রেকর্ড এটি।
এর আগে আইপিলের সর্বশেষ আসরেও বল হাতে ছিলেন খরুচে। গুজরাট টাইটান্সের ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৯ এর বেশি ইকোনমিতে বল করেন। ৩৩টি ছক্কা হজম করে আইপিএলের এক সিজনে সর্বোচ্চ ছক্কা হজম করার রেকর্ডটাও নিজের নামের পাশে বসান।
রশিদের নেতৃত্বে এশিয়া কাপে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে আফগানিস্তান। ভারতের পর নিজেদের অন্যতম ফেভারিট হিসেবে দাবি করে আফগান অধিনায়ক নিজের দলকেও সমালোচনায় ফেলেছেন।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি রশিদ খান নিঃসন্দেহে আধুনিক ক্রিকেটের সেরা একজন স্পিনার। তার পরিসংখ্যান, উইকেট সংখ্যা ও টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের অভিজ্ঞতাও দারুণ। কিন্তু নেতৃত্বের সময় কেবল নিজেকে বড় দেখিয়ে, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে ভর করে, বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করে মন্তব্য করা তাকে সমালোচনার দিকে ঠেলে দিয়েছে। বর্তমানে রশিদের রশিদ খানের আত্মহংকার তার কাজের থেকে তার কথার দিকেই যেন বেশি ভারী হয়ে উঠেছে।