ক্রীড়াবিদ খুঁজে বের করার একমাত্র উপায় প্রতিভা অন্বেষণ : ক্রীড়া উপদেষ্টা

যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, প্রশিক্ষণ ও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে ভবিষ্যতের ক্রীড়াবিদ গড়ে তোলা হবে। প্রতিভা অন্বেষণই একমাত্র উপায়, যার মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যৎ ক্রীড়াবিদদের খুঁজে পাব, যারা পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে এবং বাংলাদেশের জন্য সম্মান বয়ে আনবে।
আজ বুধবার (২৫ জুন) জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মিলনায়তনে ‘তৃণমূল পর্যায়ে অনূর্ধ্ব-১৬ ক্রীড়া প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি ২০২৪-২০২৫’ এর সমাপনী ও সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এই ধরণের কর্মসূচি সম্প্রসারণ এবং খেলোয়াড়দের আরও বেশি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করছে।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচির মাধ্যমে যে সমস্ত প্রতিভাবান ক্রিকেটার উঠে এসেছে, তাদের নিয়ে তিনি বিসিবি সভাপতির সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রতিভাবান এসব ক্রিকেটারকে বিসিবিতে পাঠানো হবে। ভবিষ্যতে ভালো ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য বিসিবি তাদের সব দায়িত্ব নেবে।’
ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, এই ধরনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম আরও কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় এবং সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ১০টি ক্রীড়া ক্ষেত্রে যারা প্রতিভা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় বাছাই হয়েছেন, তাদেরকে স্ব স্ব ফেডারেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে আরও বেশি প্রশিক্ষণ ও পরিচর্যার মাধ্যমে আগামীদিনের জন্য প্রস্তুত করা হবে। প্রতি ছয় মাস পর পর ফেডারেশনের মাধ্যমে বাছাইকৃত প্রশিক্ষণার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। প্রশিক্ষণের উন্নতির ওপর ভিত্তি করে তাদের ভবিষ্যতের পথ নির্ধারণ করা হবে।
একইসঙ্গে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আর্থিকভাবে অসচ্ছল ক্রীড়াবিদদের জাতীয় ক্রীড়াসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ক্রীড়া বৃত্তির ব্যবস্থা করা হবে। ক্রীড়া ক্ষেত্রে যথাযথ অবকাঠাম গড়ে তোলার পাশাপাশি এমন একটি ক্রীড়াবান্ধব ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কাজ করছে, যেখানে একজন খেলোয়াড় তৃণমূল পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে সুযোগ পাবেন। আমরা চাই না, বাংলাদেশের আর্থিক সমস্যা বা ক্রীড়া পরিবেশের অভাবের কারণে কোনো প্রতিভা হারিয়ে যাক। আমরা তাদের প্রতিভাকে সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে যেতে চাই। বিশ্বের যেসব দেশ খেলাধুলায় ভালো করেছে, তাদের দিকে তাকালে দেখা যাবে প্রত্যেকেরই নিজস্ব পরিবেশ ব্যবস্থা রয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই, চীন অলিম্পিকে ভালো করছে। আমরা যদি চীনের সাফল্যের পেছনের গল্পটি দেখি, তাহলে তাদের কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।’
ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘তৃতীয় বিশ্বের দেশ এবং সীমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও, যথাযথ পরিকল্পনা এবং পরিচর্যার অভাবে ক্রীড়া খাত অবহেলিত ছিল। প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদদের জন্য উপযুক্ত অবকাঠামোর পাশাপাশি একটি ইকো সিস্টেম তৈরির চেষ্টা করা হবে, যাতে তারা নিজেদের প্রস্তুত করার জন্য একটি ভালো পরিবেশ পেতে পারে।’
অনুষ্ঠান শেষে ক্রীড়া উপদেষ্টা অংশগ্রহণকারী ক্রীড়াবিদদের মধ্যে জুডোতে অংশ নেওয়া প্রশিক্ষনার্থীদের মাঝে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করেন।
এ সময় অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া যুব ও ক্রীড়া সচিব মো. মাহবুব-উল-আলম বলেছেন, এটা ক্রীড়াবিদদের কেবল শুরু। তাদের উৎসাহ ও আগ্রহ আমাদের সত্যিই অভিভূত করেছে।
ক্রীড়া সচিব উদীয়মান খেলোয়াড়দের তাদের প্রতিভাকে দেশের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বিকশিত করার পরামর্শ দেন।
এনএসসি সচিব আমিনুল ইসলাম বলেন, এনএসসি কর্তৃক আয়োজিত প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং পরবর্তীতে এই কর্মসূচি অনুসরণ করা আমাদের দায়িত্ব। তিনি প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচিকে সফল করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
তরুণ প্রতিভাবান বাস্কেটবল খেলোয়াড় ফাতেমা তুজ জোহোরা তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘অনূর্ধ্ব-১৬ প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচির অংশ হতে পেরে আমি খুবই গর্ববোধ করছি। আমরা কেবল সঠিক খেলাধুলার কৌশলই শিখিনি, বরং অভিজ্ঞ কোচদের তত্ত্বাবধানে শৃঙ্খলা, শ্রম ও দলগত কাজও শিখেছি। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, এই ধরনের প্রশিক্ষণ ও কঠোর পরিশ্রম আমাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি ভিত্তি প্রদান করবে।’
ফাতেমা তুজ জোহোরা বলেন, যদি এই ধরনের ক্যাম্প আরও দীর্ঘ সময় ধরে অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে খেলোয়াড়রা তাদের সম্ভাবনা আরও বিকশিত করতে পারবে। তিনি এই মহৎ উদ্যোগের জন্য এনএসসিকে ধন্যবাদ জানান।
ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামের দাবা প্রশিক্ষক আবু সুফিয়ান সাফি বলেন, এই প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা বেশ কিছু প্রতিভাবান খেলোয়াড় খুঁজে পেয়েছি। আমি এবং আমার অন্যান্য সহকর্মীরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে আসা প্রতিভাবান খেলোয়াড়রা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করবে।
আবু সুফিয়ান সাফি বলেন, খেলোয়াড়দের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
তৃণমূল পর্যায়ে অনূর্ধ্ব-১৬ ক্রীড়া প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি ২০২৪-২০২৫ এ ১০টি ইভেন্টে বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ৫০০ জন খেলোয়াড় অংশ নেয়। প্রাথমিক বাছাই শেষে ১৬২ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় যার মধ্যে ৮৯ জন বালক ও ৭৩ জন বালিকা। ইভেন্টগুলো হচ্ছে হ্যান্ডবল, ক্রিকেট, কাবাডি, বাস্কেটবল, দাবা, জুডো, ভারোত্তোলন, ভলিবল, জিমন্যাস্টিকস ও সাইক্লিং।