‘টাইফুন’ টাইসন আর নেই

‘টাইফুন’ শব্দটা শুনলেই মনে পড়ে এক প্রলয়ঙ্করী ঝড়ের কথা। ক্রিকেটেও একজন ‘টাইফুন’ আছেন। যাঁর তীব্র গতির বল ব্যাটসম্যানদের শিরদাঁড়া দিয়ে ভয়ের ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দিত। প্রতিপক্ষের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া সেই ফ্র্যাঙ্ক টাইসন আর নেই। রোববার অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্টে ৮৫ বছর বয়সে জীবনাবসান হয়েছে ইংল্যান্ডের সাবেক ফাস্ট বোলারের।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-উত্তর ব্যাটসম্যানদের সৌভাগ্য, টাইসনের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার তেমন দীর্ঘ হয়নি। ১৯৫৪ থেকে ১৯৫৯ পর্যন্ত পাঁচ বছরে ১৭ টেস্টে ৭৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। বোলিং গড়টা দুর্দান্ত—১৮.৫৬। তবে টাইসনকে ইংল্যান্ড মনে রাখবে ১৯৫৪-৫৫ মৌসুমের অ্যাশেজের জন্য। তাঁর দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের ওপরে ভর করে সেই অ্যাশেজে ইংল্যান্ড ৩-১ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছিল ‘চিরশত্রু’ অস্ট্রেলিয়াকে। পাঁচ ম্যাচের সেই সিরিজে ২৮ উইকেট নিয়েছিলেন ‘টাইফুন’ টাইসন। এর মধ্যে সিডনিতে দ্বিতীয় টেস্টে ১০ উইকেট আর মেলবোর্নে তৃতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ক্যারিয়ার-সেরা ৭/২৭ ছিল।
চোটের কারণে তাঁর সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায় মাত্র ৩০ বছর বয়সে। অবসরের পর অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস শুরু করেন টাইসন। তবে ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে পারেননি। একটি স্কুলে কিছুদিন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করার পর কোচ, ধারাভাষ্যকার, সাংবাদিক ও ক্রিকেট-লেখকের ভূমিকায় দেখা গেছে টাইসনকে। ডারহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি এ ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে তাঁকে।
টাইসনের মৃত্যুতে ক্রিকেট-দুনিয়ায় এখন শোকের ছায়া। এক বিবৃতিতে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) প্রধান নির্বাহী জেমস সাদারল্যান্ডের শ্রদ্ধার্ঘ্য, “ফ্র্যাঙ্ক ‘টাইফুন’ টাইসন ইংলিশ ক্রিকেটের একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ক্যারিয়ারজুড়ে পৃথিবীর সব ব্যাটসম্যানের মনেই আতঙ্ক ছড়িয়ে দিতেন তিনি। খেলোয়াড়ি-জীবন শেষে তিনি বসবাসের জন্য অস্ট্রেলিয়াকে বেছে নিয়েছিলেন। এই দেশের ঘরে ঘরে তাঁর নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারণ করা হতো।”
অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে টাইসনের অবদানের কথাও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন সাদারল্যান্ড, ‘অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটাঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরে তিনি ছিলেন সবার প্রিয় এবং শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। তাঁর দক্ষ কোচিংয়ে ভিক্টোরিয়া আর কুইন্সল্যান্ড থেকে অজস্র ক্রিকেটার উঠে এসেছে। ধারাভাষ্যকার ও ক্রিকেট-লেখক হিসেবেও অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে বিশাল অবদান রেখেছেন তিনি।’