শিশুশ্রমিক থেকে ক্রিকেট তারকা!

আনওয়ার আলী পাকিস্তান দলে ঢুকেছিলেন বোলার হিসেবে। কিন্তু ব্যাট হাতেও যে তিনি কতটা বিধ্বংসী হয়ে উঠতে পারেন তা ভালোমতো বুঝিয়ে দিয়েছেন ক্রিকেট-বিশ্বকে। সদ্যসমাপ্ত শ্রীলঙ্কা সফরে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১৭ বলে ৪৬ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে দলকে এনে দিয়েছেন দারুণ জয়। এখন তাঁকে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ শহীদ আফ্রিদি হিসেবে বিবেচনা করছেন অনেকে। ২৭ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের জীবন-কাহিনী তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। একটি কারখানায় শিশুশ্রমিক হিসেবে কাজ করা আনওয়ার হয়ে উঠেছেন বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন তারকা।
শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাইয়ের মতো আনওয়ারও উঠে এসেছেন পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকা থেকে। মৌলবাদীদের শাসন থেকে পালিয়ে করাচির শিল্প অঞ্চলে বসতি গড়ে তোলে আনওয়ারের পরিবার। ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ায় শ্রমিকের কাজ নিতে বাধ্য হন আনওয়ার। দৈনিক ১৫০ রুপি পারিশ্রমিকে কাজ শুরু করেন একটি কারখানায়। সেসব দিনের কথা আজও ভুলতে পারেননি আনওয়ার, ‘আমি যে এই পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছি, সেজন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ। আমার জীবন একসময় খুব কঠিন ছিল। কাজ করতাম একটা মোজা তৈরির কারখানায়। কিন্তু পাকিস্তানের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখা ছাড়িনি।’
রাস্তায় অন্য ছেলেদের ক্রিকেট খেলতে দেখে মন আনচান করে উঠত আনওয়ারের। কারখানার পরিচালকদের অনুরোধ করেছিলেন তাঁকে রাতের শিফটে কাজ দেওয়ার জন্য। যেন তিনি দিনে ক্রিকেট খেলতে পারেন। এভাবে খেলতে-খেলতে হঠাৎ নজরে পড়ে যান স্থানীয় কোচ আজম খানের। তাঁর কোচিংয়ে ধীরে-ধীরে বেড়ে ওঠেন আনওয়ার।
একসময় পাকিস্তানের জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে নজর কাড়েন সাবেক পেসার আকিব জাভেদের। সেসময় তাঁর পায়ে ছিল জীর্ণ-শীর্ণ জুতো। আকিবই তাঁকে জোগাড় করে দেন ক্রিকেটের প্রয়োজনীয় সাজসরঞ্জাম।
২০০৬ সালে আনওয়ার সুযোগ পান পাকিস্তানের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। সে বছর শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল পাকিস্তান। ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে মাত্র ১০৯ রানে অলআউট হলেও আনওয়ারের (৫/৩৫) দুর্দান্ত বোলিং পাকিস্তানকে এনে দিয়েছিল ৩৮ রানের জয়। এর দুই বছর পর তাঁর অভিষেক হয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে।
প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে ২ ওভার বল করে ১৯ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকার পর ব্যাট করার সুযোগ পাননি আনওয়ার। কিন্তু এরপর যেন হারিয়েই গিয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ছিলেন দলের বাইরে। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলে ফিরে আসেন জাতীয় দলে। ২০১৩ সালের নভেম্বরে অভিষেক হয় ওয়ানডেতে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে অভিষেক সিরিজেই জ্বলে ওঠেন আনওয়ার। প্রথম ম্যাচে অপরাজিত ৪৩ রানের মূল্যবান ইনিংস খেলার পাশাপাশি ২ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের জয়ে বড় অবদান রেখেছিলেন। তিন ম্যাচের সিরিজটি পাকিস্তান জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে।
এবারের শ্রীলঙ্কা সফরে আনওয়ার নিজেকে চিনিয়েছেন নতুন করে। পাকিস্তানের কোচ ও সাবেক গতি-তারকা ওয়াকার ইউনিস তো তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ, ‘এটা বলা ভুল হবে না যে আনওয়ার আলী এই শ্রীলঙ্কা সফরে অনেক পরিণত হয়েছে। সে খুব ভালো ফিল্ডার। ব্যাটসম্যান আর বোলার হিসেবেও অনেক উন্নতি করেছে। কঠোর পরিশ্রম করতে পারলে ভবিষ্যতে আমাদের প্রধান অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার জোরালো সম্ভাবনা আছে তার।’