৭/১ গুলশান
চোখ তাঁর আতশি কাচ

পঞ্চম শ্রেণির পর পারিবারিক সিদ্ধান্তের কারণে আমি নির্বান্ধব হয়ে পড়েছিলাম। কারণ যে স্কুলে আমাকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়েছিল, তা আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে। আমাকে যাতায়াতও করতে হবে হেঁটে। তখন বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ রিকশায় উঠত না। আর সারা বছরের জন্য রিকশা ভাড়া করা তো চিন্তাতীত। তবে হ্যাঁ, স্কুলে যাতায়াতের জন্য সাইকেল ব্যবহারের খুব প্রচলন ছিল। কিন্তু ক্লাস সিক্সের বাচ্চার জন্য নয় নিশ্চয়ই।
তারপরও আমি ওই স্কুলে যেতে রাজি হই। কারণ বাড়ির পাশের স্কুলটির রেজাল্ট নিয়ে সংশয় ছিল আমার মনেও। তা ছাড়া অ্যাডভেঞ্চারের নেশা তো ছিলই। ফলে পাঁচ বছর ধরে ৫৪৭৫ কিলোমিটার হাঁটতে রাজি হয়েছিলাম। স্কুলে যাওয়ার পথটি ছিল শীত-গ্রীষ্মে ধুলোময় আর বর্ষায় কর্দমাক্ত। তখন আমরা স্বপ্ন দেখতাম রাস্তাটি পাকা হবে।
বছরদশেক হলো সেই রাস্তা শুধু পাকাই হয়নি, বাসও চলে পাল্লা দিয়ে। যদিও আমাদের বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার একটি বিকল্প রাস্তাও ছিল। ফসলি জমির আল ধরে সেই যাত্রা দৃশ্য হিসেবে অতুলনীয় কিন্তু বাস্তবতা ছিল কঠিন। আল থেকে পা ফসকে পড়ার ভয়, সাপের ভয় আরো কত কি। শুধু আমার জন্য আরো একটি উপায় ছিল না হেঁটে স্কুলে যাওয়ার। বাবার মোটরসাইকেল ছিল। কিন্তু পেশাগত কারণে বাবার সঙ্গে আমার স্কুলে যাওয়ার টাইমিং হয়নি কোনোদিন। ফলাফল পদব্রজে শিক্ষালয়ে গমনাগমন করতে হয়েছে পাঁচ বছর। যদিও প্রথমদিন আমার পরম সৌভাগ্য হয়েছিল বাবার বাইকে যাওয়ার। ওই একদিনই।
কাটিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়। নামের সঙ্গেই গ্রাম জড়িয়ে আছে, ফলে বুঝতে নিশ্চয়ই কষ্ট হচ্ছে না সেই স্কুলের শিক্ষার্থীদের চেহারা আর পোশাক-আশাক কেমন হতে পারে। স্কুলে আসার আগে মা দাদিরা প্রায় সবার মাথাতেই সরিষার তেল মাখিয়ে দিত। প্রসাধন ওটুকুই। আমিও একই গোত্রভুক্ত। বইখাতা বগলদাবা করেই ক্লাসে আসতাম সবাই, কিন্তু একজনকে দেখে খানিকটা চমকে উঠেছিলাম। লম্বা ছিপছিপে একটা ছেলে ক্লাসে ঢুকল কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে। ব্যাগ থেকে বইপত্র বের করল, চকচকে নতুন বই। বই থেকে তখনো ছাপাখানার ঘ্রাণ বের হচ্ছে। অথচ আমাদের সবার বই পুরোনো কারোটা নিশ্চয়ই ছেঁড়াও ছিল। বই থেকে জ্ঞান আহরণ করতে গেলে আমাদেরকে বেশ কসরত করতে হতো। কারণ পুরোনো বইয়ে কাটাকুটি-দাগাদাগি তো ছিলই, পৃষ্ঠাও খুলে যেত অনেক সময়। লম্বুটা একটা বেঞ্চে বসে বইখাতা বের করে আরো কী যেন খুঁজছিল ব্যাগ হাতড়ে। তাকে বেশ বিরক্তও মনে হচ্ছিল। খানিক বাদে সে একটা ম্যাগনিফাইং গ্লাস বের করল। ছোট বস্তু বড় দেখায়। পুরো ক্লাস তো তাজ্জব। এই ছেলের সঙ্গেই তো বন্ধুত্ব করতে হবে কেউ কেউ হয়তো ভেবেছিলো। না বন্ধুত্ব করতে হয়নি, প্রথমদিনই ও হয়ে উঠেছিল সবার মধ্যমণি।
কামরুল। হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে নামটি বলেছিল হাসতে হাসতে। হাসির কারণ ব্যাখ্যা করে বলেছিলে, এটি তার আসল নাম নয়। ডাকনাম। হাজিরা খাতায় তার নাম লেখা হলো মো. রবিউল করিম। ডাকনাম কথাটা তখন আমরা জানতাম। যেমন কারো নাম আতিকুর রহমান। তার ডাকনাম হতো আতিক বা আতিকুর। ডাকনামের জন্য আলাদা করে নাম রাখাকে হয়তো অপব্যয়ই ভাবতেন আমাদের মুরব্বিরা। সেই হিসেবে কামরুল আলাদা। ওর বাবা একটি বিদেশি দাতা সংস্থায় চাকরি করতেন। বাবার সঙ্গে কামরুল জেলায় জেলায় ঘুরেছে এরই মধ্যে। ওর কাছ থেকে বিচিত্র গল্পও শুনেছি সেই সুবাদে। আর আমাদের বেশির ভাগের বাবাই কৃষক অথবা হাটবাজারের ব্যবসায়ী। আমাদের দৌড় তাই বাড়ি থেকে স্কুল, বড়জোর পাশের গ্রামের হাটবাজার বা নানাবাড়ি খালাবাড়ি। শহর কোনোভাবেই নয়।
কুড়িয়ে পাওয়া কাগজ বা কোনো বস্তু যেখানে লেখা অস্পষ্ট সেখানে ম্যাগনিফাইং গ্লাস ধরে তার মর্ম উদ্ধার করে ফেলত কামরুল। এমন একটুকরো কাচের মালিক আমিও কোনোদিন হব মনে মনে এই ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়েছি অনেকবার। ম্যাগনিফাইং গ্লাস কিনে দেওয়ার বায়না ধরতে পারিনি এই ভেবে যে জিনিসটা কী কাজে লাগে তা বাবার কাছে বলার মতো কোনো কারণ না পেয়ে। তখন বছরে একটা ফুটবল আর আটিগ্রামের বুড়ির মেলা থেকে খেলনা ছাড়া আর কোনো খেলার উপকরণ চাওয়া যায় তাও তখন ভাবিনি। কামরুলের সেই আতশি কাচটা যে ওর কাছে সামান্যই ছিল তাও জেনেছি পরে।
ক্লাসে কামরুল ছাড়া আরেকজনকে আমি প্রথম দিনই বন্ধু ভেবেছিলাম, তার নাম মিজানূর রহমান। আমাদের স্কুল ছিল মিজানদের বাড়ির পাশেই। তাই প্রতিদিনই মিজান স্কুলে আসত ক্লাস শুরুর মিনিটখানেক আগে। মিজান দারুণ মেধাবী। ক্লাসের ফার্স্টবয়। কোনো বিষয়ের জন্যই ও কখনো প্রাইভেট টিউটরের কাছে যায়নি।
আমি, মিজান আর কামরুল স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছের ছিলাম। থ্রি স্টুজেস-এর তিন চরিত্র। আমাদের তিনজনের মধ্যে কোনো বৈপরীত্য ছিল কি না তা কখনো খুঁজে দেখিনি। তখন কামরুল কেন আতশি কাচ দিয়ে সব কিছু পরিষ্কার করে দেখতে চাইত বুঝতাম না। অথবা বলা যায়, কাচটিকে আমরা নিতান্ত খেলনাই ভাবতাম। কামরুলও কি তাই ভাবত? নাকি পুলিশ হয়ে সমাজে লুকিয়ে থাকা কীটগুলোকে খুঁজে বের করার প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল সেই শৈশবেই!
কামরুল স্কুলজীবনে আমাদের অনেকবারই চমকে দিয়েছে। চমকে দেওয়ার উপকরণগুলো বরাবরই ওর ব্যাগ থেকেই যে বের হতো তাও নয়। একবার এক বিকেলে কামরুল হাজির আমাদের বাড়িতে। চল, আমরা ছবি তুলব স্টুডিওতে গিয়ে। কামরুলের কাছে এই কথা শুনে চমকে উঠেছিলাম। কারণ ক্লাস নাইনের রেজিস্ট্রেশনের আগে ছাড়া তখন কেউ ছবি তোলার কথা চিন্তাও করত না। কামরুল আমাকে প্রায় টেনে নিয়ে গেল আমাদের বাজারের স্বরূপ স্টুডিওতে। হালকা শীতের সেই বিকেলে আমরা দুজন চার হাতের বন্ধন পোক্ত করেই ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। ছবিটি প্রিন্ট করা হয়েছিল দুই কপি। কিন্তু আমার কপিটি সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের সাহস দেখাতে পারিনি। কারণ ছবিতে আমাদের হাত ধরা চোখে চোখ রাখার ঘটনাটি বেশ দুঃসাহসিক মনে হয়েছিল। কদিন ছবিটি ছিল আমার পড়ার টেবিলে কোনো এক বইয়ের ফাঁকে। একা একা লুকিয়ে দেখা আমাদের সেই ছবিটির মতো আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেল কামরুল।
একবার মিনি রেকর্ডার এনেছিল স্কুলে। কথা রেকর্ড করে আবার শোনা যায়, ব্যাপারটা ভীষণ রকম অবিশ্বাস্য ছিল আমাদের কাছে। যেমন অবিশ্বাস্য ছিল স্কুল ছেড়ে চলে যাওয়া। হঠাৎ করেই চলে গিয়েছিল কামরুল। ওর বাবার পোস্টিং তখন ছিল শেরপুর। শেরপুর নাকি খুব সুন্দর জায়গা, সীমান্তের কাছে। রাতে কামরুলদের বাসার সামনে বন্য হাতি আসত এমন অনেক গল্প কামরুল শুনিয়েছে ক্লাস এইটের ছাত্র হিসেবে ফিরে এসে। মাঝে এক বছর ওকে আমরা সবাই খুব মিস করেছি। আর এখন আমৃত্যু মিস করব।
ক্লাস নাইনে আমাদের সহপাঠী হয় জিল্লুর রহমান। ওর ডাকনাম তুহিন। তুহিনের বাবা তখন ডাক বিভাগের কর্মকর্তা। তাই ডাকনাম ওর থাকতেই পারে। তুহিন এসে আমাদের রোল দখল করে নেবে তেমন একটা আতঙ্ক শিক্ষকরা তৈরি করেছিলেন। ফলে আমরা বাড়তি মনোযোগ দিয়ে পড়লাম, কিন্তু লাভ হলো না। মিজানের পরই তুহিনের নাম লেখা হলো রেজাল্টশিটে।
তবে এসব ভুলে আমরা তুহিনকে খুব আপন করে নিলাম। ছেলেটা আমার চেয়েও বেশি দূর থেকে স্কুলে আসে। ততদিনে আমি সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাওয়ার অনুমতি পেয়ে গেছি। আমার আর তুহিনের সাইকেলের ক্যারিয়ার মিজান আর কামরুলের সিট হলেও হতে পারত। হলো না। কামরুল সাইকেল কিনে ফেলল প্রাইভেট টিউটরের কাছে যাওয়ার জন্য।
তিন সাইকেলে চারজনের অভিযানের সাক্ষী আছে অনেকগুলো বিকেল। তেমনি কোনো এক বিকেলে আমরা আবার আলাদা হয়ে গেলাম। এসএসসির রেজাল্টের পর মিজান ঢাকা কলেজে, কামরুল ওর নানাবাড়ির পাশের এক কলেজে, তুহিন সাভারে চলে গেল। আমি রইলাম গ্রামে পড়ে। বাড়ির কাছের নতুন কলেজ। আমি ভর্তি না হলে আমাদের অনেক সহপাঠীই ভর্তি হবে না এমন যুক্তি দেখিয়ে ভর্তি করানো হলো। ইন্টারমিডিয়েটের সেই দুই বছরে মিজান আর কামরুলের দেখা পেয়েছি হাতে গোনা। তুহিনকে পাইনি একবারও। কলেজে পড়াকালে কোনো এক ছুটির দিনে আমি, মিজান আর কামরুল গিয়েছিলাম পদ্মা ভ্রমণে। সেদিন কামরুলের হাতে ছিল ইয়াসিকা ক্যামেরা।
এইচএসসির রেজাল্টের পর আমি আর মিজান চান্স পেয়ে গেলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। কামরুল চান্স পেল না কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে। তুহিন চলে গেল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। কামরুল খুব মন খারাপ করেছিল। আমাদের জুনিয়র হয়ে যাওয়ায়। পরের বছর কামরুল ঠিক ভর্তি হলো জাহাঙ্গীরনগরে।
মিজান মীর মশাররফ হোসেন হলে আর আমি আল বেরুনীতে সিট বরাদ্দ পেলাম। কামরুলও সিট পেল আমাদের হলে। হারানো বন্ধুকে ফিরে পাওয়ার সেই অনুভূতি বলে বোঝানো যায় না। যেমন আজ আমি বোঝাতে পারব না বন্ধুকে হারানোর বেদনার কথাও। হল জীবনে আমরা রুমমেট ছিলাম অনেকদিন। রুম নম্বর ৪১৪। ডাবল বেডের রুম। কিন্তু আমরা ঘুমাতাম এক বেডে। আমার জীবনের অনন্যসাধারণ সেই দিনগুলো নিয়ে হয়তো বড় পরিসরেই লিখব কোনোদিন।
রুমমেট হওয়ার আগে আমরা ছিলাম আল বেরুনীর বর্ধিত অংশে। কোনো এক রাতে হলে ফিরতেই শুনলাম কামরুল অসুস্থ। গিয়ে দেখলাম ওকে র্যাগিং-এর নামে নির্যাতন করা হয়েছে। রাতেই নিতে হলো ঢাকা মেডিকেলে। নির্যাতনের মাত্রা বুঝে গেছেন নিশ্চয়ই। পরদিন একাধিক পত্রিকায় খবর বের হয়। এরপর কয়েক বছর ওই যন্ত্রণা বন্ধ ছিল ক্যাম্পাসে।
কোনো এক শীতের রাতে কামরুল কম্বল টেনে নিতেই বাবাগো বলে চিৎকার। সাপ কামড় দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার হয়ে সাভারের একটি হাসপাতালে গেলাম মধ্যরাতে। ইনজেকশন পুশ করার পর ডাক্তার যখন শুনলেন আমরা চারতলায় থাকি, তখন খুব অবাক হয়েছিলেন তিনি। পরদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নেমেছিল সাপ ধরার অভিযানে।
কম্পিউটারে আমার হাতেখড়ি কামরুলের কারণে। কামরুল কম্পিউটার কেনার পর একদিন বলল পার্টিশন দিতে হবে। আমি তো অবাক, রুমে পার্টিশন দেবে কম্পিউটারের কারণে? আমি মন খারাপ করে কথাটা পাশের রুমের স্মরণ-মিলনকে বলেছিলাম। ওরা বেশ ক্ষিপ্ত হয়েছিল কামরুলের ওপর। পরে যখন কামরুল পার্টিশনের বিষয়টা ব্যাখ্যা করে তখন হাসির রোল পড়েছিল। কম্পিউটারকে ভাইরাসমুক্ত করতে পার্টিশন করা হতো।
পরে কামরুল আমার রুম থেকে চলে গেল মিজানের রুমে। এম এইচ হলে। যেন কাউকেই বঞ্চিত করব না এমন ভাব। আগে মিজান আসত আমার রুমে কামরুলের জন্য, পরে আমি যেতাম ওর রুমে একই কারণে।
কামরুলের সার্টিফিকেটের নাম আগেই বলেছি। একবার আমার একটা প্রতিবেদনে কামরুলের মন্তব্য নিয়েছিলাম। সেখানে ওর নাম লিখেছিলাম রবি কামরুল, পরদিন ছাপা হয়েছিল পত্রিকায়। মো. রবিউল করিম ওরফে কামরুল হয়ে গেল রবি কামরুল। ক্যাম্পাসে সবাই ওকে এই নামেই ডাকত পরে।
জীবন নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত দেখিনি কামরুলকে। ইতালি চলে গিয়েছিল। সেখানকার বাঙালিদের দুঃখ-দুর্দশার কথা ওর কাছে অনেকবার শুনেছি। মানুষের কষ্ট রবি কামরুলকে খুব পীড়া দিত। দেশে ফিরে বলেছিল, বিসিএস দেব। দিল, হয়েও গেল। বদলে যেতে থাকল কামরুল। শুধু মানুষকে সেবা দেওয়ার চিন্তা। পাশের গ্রামে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য নিজেদের জমিতে নিজের টাকায় গড়ল স্কুল। স্কুল নিয়ে অনেক স্বপ্নের কথা শুনেছি।
বন্ধু মিজানের চাকরি ভালো লাগে না। সে গ্রামে কৃষি খামার গড়বে, সঙ্গী কামরুল। কামরুল আর মিজান মিলে একটা এনজিও করল একসময়। গরিব মানুষদের জন্য একবার অনেকগুলো রিকশা কিনেছিল কামরুল ওই এনজিও থেকে। ওই প্রজেক্টেও কামরুলের কোনো অর্থযোগ ছিল না। ছিল মানুষের ভালোবাসা।
মানুষ কামরুলকে কতটা ভালোবাসত তার প্রমাণ পেয়েছি ২ জুলাই রাতে। খোলা আকাশের নিচে টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যে কয়েক হাজার মানুষ শরিক হলো জানাজায়। আমি যখন পত্রিকা ছেড়ে টেলিভিশনে সাংবাদিকতা শুরু করি, তখন কামরুল রসিকতা করে বলত, তুই তো স্টার, টিভি খুললেই দেখা যায়।
ক্যাডার হওয়ার পর আমিও রসিকতা করেছিলাম। বলেছিলাম, এখন তো তোর ইন্টারভিউ পাওয়ার জন্য লাইন দিতে হবে। দায়িত্ব পালনকালে দুবার কামরুল হিরো অব দ্য মান্থ হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশে এসে মানুষের জন্য প্রাণ দিয়ে হয়ে গেল ন্যাশনাল হিরো। গার্ড অব অনারের মতো রাষ্ট্রীয় সম্মান কি আর সবার ভাগ্যে জোটে? স্কুলের কামরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রবি কামরুল আর রাষ্ট্রের বীর রবিউল করিম আমার বন্ধু। গর্ব তো তোকে নিয়েই করব।
মিজান আমি আর তুহিন আমৃত্যু তোকে মিস করব। ভালো থাকিস।
লেখক : সংবাদকর্মী, মাছরাঙা টেলিভিশন।