মাওয়ার নাগেরহাটের শতবর্ষের স্পঞ্জ মিষ্টি

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার একটি ছোট্ট বাজার নাগেরহাট। বাজারটি ছোট হলেও এখানকার ‘স্পঞ্জ মিষ্টি’ জায়গা করে নিয়েছে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রবাসীদের মনেও। শত বছরের পুরোনো এই মিষ্টির ঐতিহ্য বহন করে আসছে একটি পরিবার—হেম ঘোষের বংশধররা। বর্তমানে সেই ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছেন হেম ঘোষের নাতি সম্রাট ঘোষ।
শুরুর গল্প
জানা যায়, প্রায় এক শতাব্দী আগে নাগেরহাট গ্রামের হেম ঘোষ ভারত থেকে স্পঞ্জ মিষ্টির রেসিপি শিখে এসে নাগেরহাট বাজারে শুরু করেন এর যাত্রা। তার মৃত্যুর পর ছেলে দুলাল চন্দ্র ঘোষ এবং বর্তমানে দুলালের ছেলে সম্রাট ঘোষ সেই দোকানটি পরিচালনা করছেন। তাদের দোকানের নাম—আদি হেম ঘোষ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার।

যদিও বর্তমানে বাজারে একাধিক দোকানে স্পঞ্জ মিষ্টি পাওয়া যায়, তবে স্থানীয় ক্রেতারা জানান, হেম ঘোষের দোকানের স্বাদ, গুণ ও ঐতিহ্য এখনো অন্যদের থেকে আলাদা। অনেক দোকানি চেষ্টা করেও সেই স্বাদ আনতে পারেননি।
মিষ্টির বৈশিষ্ট্য ও স্বাদে বিশেষত্ব
এই স্পঞ্জ মিষ্টির মূল উপাদান হলো খাঁটি ছানা এবং পাতলা মিষ্টি সিরা। এতে চিনি খুব বেশি ব্যবহার করা হয় না, ফলে ডায়াবেটিসের রোগীরাও অল্প পরিমাণে এটি খেতে পারেন। সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো—এই মিষ্টি মুখে দিলে নিমেষেই গলে যায়! এমনকি যারা সাধারণত মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন না, তারাও এই মিষ্টির স্বাদে মুগ্ধ। দোকানে ২০টি মিষ্টি বিক্রি হয় ২০০ টাকায়, অর্থাৎ প্রতিটি মাত্র ১০ টাকা। তবে দুধের দামের উপর ভিত্তি করে মাঝে মাঝে দামে হেরফের হয়।

চাহিদা বাড়ছে, ছড়াচ্ছে সীমানা পেরিয়ে
হেম ঘোষ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মিষ্টির চাহিদা এখন শুধু লৌহজংয়ে সীমাবদ্ধ নেই। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এই মিষ্টির স্বাদ নিতে এবং কিনতে আসে। প্রবাসীরাও দেশে ফিরলে এই মিষ্টি কিনে নিয়ে যান। তাদের কথা ভেবে দোকানটি এখন ঢাকার মধ্যে হোম ডেলিভারির সুবিধাও রেখেছে। তবে ঢাকার বাইরে এখনও ডেলিভারি দেওয়া হয় না, কারণ এই মিষ্টির ভালোমতো সংরক্ষণকাল মাত্র ২৪ ঘণ্টা।
ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখে আধুনিকতায় পদার্পণ
দোকানটি এখনো তার প্রাচীন রীতিতে পরিচালিত হয়। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শুধু স্পঞ্জ নয়, ঘিয়ে ভাজা রসগোল্লা, চমচম, মালাই চপ, দই ও খাঁটি গাওয়া ঘিও পাওয়া যায় এখানে। তবুও সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে সেই স্পঞ্জের মিষ্টি।

নাগেরহাটে যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে এই ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির স্বাদ নিতে চাইলে যাত্রাবাড়ী বা গুলিস্তান থেকে বাসে করে যেতে হবে শ্রীনগরের বেজগাঁও বাসস্ট্যান্ডে (ভাড়া ৬০–৮০ টাকা)। সেখান থেকে একটি অটোরিকশা রিজার্ভ করে ৮০–১০০ টাকায় সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় হেম ঘোষের দোকানে।
প্রসঙ্গত, এক শতাব্দী পার করেও যে কোনো খাবার তার স্বাদ, মান আর ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারে—নাগেরহাটের স্পঞ্জের মিষ্টি তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এটা শুধু একটি মিষ্টি নয়, এটা লৌহজংয়ের গর্ব, মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্য এবং বাংলাদেশের এক সুস্বাদু সম্পদ।