সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে পারে ৩৫ শতাংশ মানুষ

দেশের মাত্র ৩৫ শতাংশ মানুষ সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা নিতে পারে, বাকিদের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয় বলে জানিয়েছেন সামরিক চিকিৎসা সার্ভিস মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএমএস) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী মো. রশীদ উন নবী।
আজ মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাজী রশীদ উন নবী এসব কথা বলেন।
মেজর জেনারেল রশীদ উন নবী বলেন, ডব্লিউএইচও ফ্লোরে চিকিৎসা দেওয়াকে সমর্থন করে না। কিন্তু আমাদের সক্ষমতা কম, তাই ফ্লোরেও রোগীদের চিকিৎসা দিতে হয়। না হলে টাকার অভাবে ওই রোগীরা কোথায় যাবে?
এ সময় সরকারি হাসপাতালের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে ডিজিএমএস মহাপরিচালক বলেন, মিডফোর্ড হাসপাতালে বেড ৬০০ থেকে ৯০০ করা হলেও অবকাঠামো সেভাবে বাড়েনি, অথচ রোগী থাকে এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৬০০ জন। ঢাকা মেডিকেলে তো পাচঁ হাজার থেকে ছয় হাজার রোগী থাকেন, এমনকি সিঁড়ির মধ্যেও রোগী শুয়ে থাকে। কিন্তু তারাও চিকিৎসা পায়। সরকারি হাসপাতালে আসা প্রায় সবাই আর্থিক সংকটে থাকেন।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার প্রসঙ্গে এ মহাপরিচালক বলেন, দেশের স্বাস্থ্য বাজেট যেদিন আরও বাড়বে, সেদিন রোগীরা ভালো চিকিৎসা পাবেন। তখন সাংবাদিকদেরও নেতিবাচক সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।
দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত নিয়ে সংবাদে সব সময় নেতিবাচক দিকই বড় করে দেখানো হয় বলে আক্ষেপ প্রকাশ করে মেজর জেনারেল রশীদ উন নবী বলেন, ডাক্তাররা ভুল করলে তা বলা অবশ্যই দরকার। কিন্তু তাদের কঠোর পরিশ্রম ও ভালো কাজগুলোও সংবাদে আসা উচিত। এতে স্বাস্থ্যকর্মীরা অনুপ্রাণিত হবেন, আর সমাজও সঠিক বার্তা পাবে। তিনি বলেন, আমাদের এই মানুষকতা থেকে বের হতে হবে। সব সময় নেতিবাচক খবরই কেন? ডাক্তার কষ্ট করছে, তা কেন বলেন না?
এ সময় মেজর জেনারেল রশীদ উন নবী কোভিড পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, কুমিল্লা থেকে আসা এক রোগী তিনটি হাসপাতালে জায়গা পাননি, কিন্তু চতুর্থ হাসপাতালে সিট পেয়েছিলেন ও চিকিৎসা নিয়েছিলেন। অথচ সংবাদে শিরোনাম হয়েছিল, ‘তিন হাসপাতাল ঘুরে সজ্জা পেলেন না রোগী’। কিন্তু রোগী চতুর্থ হাসপাতালে চিকিৎসা পেয়েছেন, সেটা কেন বলা হলো না? তিনি আরও বলেন, অনেক সময় আমরা ১০ মিনিটের সাক্ষাৎকার দিই, কিন্তু ৩০ সেকেন্ড কভার হয়, সেটাতেও শুধু নেতিবাচক অংশটাই তুলে ধরা হয়। সমাজে যখন ইতিবাচক সংবাদ থাকে, তখন মানুষ তেমন মনোযোগ দেয় না। অথচ ভালো খবর দিলে ডাক্তাররা স্বীকৃতি পাবেন, কাজে আরও উৎসাহী হবেন।
নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে মেজর জেনারেল রশীদ উন নবী বলেন, কোভিডের চার বছরে আমি মাত্র তিন দিন ছুটি কাটিয়েছি। তিনি হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার ও কর্মীদের ডেডিকেশনকে শ্রদ্ধা জানান। বিশেষ করে হাসপাতালের পরিচালক সাইদকে উল্লেখ করে বলেন, সাইদ প্রতিদিন রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করে। শারীরিকভাবে ফিট থাকা সত্ত্বেও পারিবারিক কারণে তার হৃদরোগ হয়েছিল। যথাযথ চিকিৎসায় এখন সে সম্পূর্ণ সুস্থ।
বিশ্ব হার্ট দিবসের প্রেক্ষাপটে তিনি সিপিআর (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেন মেজর জেনারেল রশীদ উন নবী। তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোতে স্কুল লেভেলেই সিপিআর শেখানো হয়। কখন কার দরকার হবে, কেউ জানে না। সবাই সিপিআর জানলে অন্তত একজনকে বাঁচিয়ে ডাক্তারখানায় পাঠানোর সুযোগ পাওয়া যায়।