কুর্মিটোলা হাসপাতাল স্বাস্থ্যসেবায় নতুন মানদণ্ড স্থাপন করবে : পরিচালক

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল দেশের স্বাস্থ্যসেবায় নতুন মানদণ্ড স্থাপন করবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, এটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি পূর্ণাঙ্গ সিভিল (বেসামরিক) হাসপাতাল। এটি বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য শতভাগ উন্মুক্ত।
আজ মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) হাসপাতালে ‘সিপিআর ফর প্রফেশনাল’ শীর্ষক কর্মশালায় এসব কথা বলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ২০১২ সালের ১৩ মে উদ্বোধনের পর থেকে জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ (ওপিডি) ও ডায়াগনস্টিক পরিষেবাগুলো ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন অন্য কোনো হাসপাতাল যেখানে ২৪/৭ প্যাথলজিক্যাল সেবা দিতে পারেনি, কুর্মিটোলা হাসপাতাল সেখানে দিন-রাত নিরবচ্ছিন্নভাবে এই সেবা প্রদান করে থাকে।
কুর্মিটোলা হাসপাতালের পরিচালক বলেন, আমরা ২৪/৭ শুধু প্যাথলজিক্যাল সেবা নয়, আমরা মাত্র ৪৭০ টাকায় ডায়ালাইসিস সেবা দিয়ে থাকি, যা বাংলাদেশে সর্বনিম্ন। এ ছাড়া কেমোথেরাপি, ছোট-বড় অস্ত্রোপচার ও গাইনোকোলজি বিভাগেও ২৪ ঘণ্টা সেবা চালু রয়েছে।
হাসপাতালের পরিচালক আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের হাসপাতালে ২০ শয্যার সিসিইউ ও ২০ শয্যার এসডিইউ চালু আছে। তবে সবচেয়ে বড় অর্জন হতে যাচ্ছে নতুন ৫০ শয্যার আইসিইউ, যা আগামী ১৬ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হবে। এর পাশাপাশি ষষ্ঠ তলায় ২০ শয্যার এনআইসিইউও স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে।
ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, দরিদ্র রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিস সেবা বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। বর্তমানে আমাদের ১০০ শয্যার ডায়ালাইসিস ইউনিট রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত প্রায় ৬০ জন রোগী এই সেবা নিচ্ছেন। এজন্য নেওয়া হয় মাত্র ৪৭০ টাকা, যা সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। দরিদ্র মানুষের ভিড় বাড়ায় আমরা আরও ৩০ শয্যা বাড়াচ্ছি। নতুন ইউনিট চালু হলে প্রতিদিন অতিরিক্ত ১০০ জন রোগী ডায়ালাইসিস সুবিধা পাবেন।
কুর্মিটোলা হাসপাতালের পরিচালক আরও বলেন, আমরা স্বাস্থ্যসেবা ডিজিটালাইজেশনে এগিয়ে গেছি। কুর্মিটোলা হাসপাতাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের মধ্যে প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই সেবা চালু করছে। ইতোমধ্যে অনলাইন রিপোর্টিং সেবা চালু হয়েছে। রোগীরা ঘরে বসেই রিপোর্ট সংগ্রহ করতে পারছেন। অনলাইন টিকিট সংগ্রহের সুবিধাও রয়েছে। শিগগিরই অনলাইন ফি পেমেন্ট চালু হবে, যাতে মানুষ আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে না হয়। আগামী তিন মাসের মধ্যে একটি প্যাভিলিয়ন চালু করা হবে, যেখানে সব সেবা এক ছাদের নিচে পাওয়া যাবে।
বিশেষায়িত বিভাগের অগ্রগতি প্রসঙ্গে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, আমাদের কার্ডিয়াক ইন্টারভেনশন সেন্টার বা ক্যাথ ল্যাবে অধ্যাপক মহসিনের নেতৃত্বে প্রতিদিন ১০টি করোনারি ইন্টারভেনশন সফলভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। ক্যানসার সেন্টারে কেমোথেরাপি সেবা চলছে, শিগগিরই রেডিওথেরাপি মেশিন আসছে। গ্যাস্ট্রোলজি বিভাগ আগে ছিল না, কিন্তু এখন অধ্যাপক কিবরিয়ার নেতৃত্বে নতুন সেন্টার গড়ে তোলা হচ্ছে। এটি দেশের অন্যতম আধুনিক গ্যাস্ট্রো সেন্টার হবে। লেভেল ৮ এ আরও ১০০ শয্যা নির্মাণাধীন আছে।
স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগের সেবা প্রসঙ্গে ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, আগে প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাতটি সিজারিয়ান হতো। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ থেকে ৩০টিতে। তবে আমরা প্রথমে সিজারিয়ান না করে স্বাভাবিক প্রসবকে গুরুত্ব দিই। এই বিভাগও ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। রোগী ও তাদের স্বজনদের জন্য পরিচ্ছন্ন বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
হাসপাতালের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য প্রসঙ্গে পরিচালক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, আমাদের টিম সর্বদা রোগী, বিশেষ করে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগণের পাশে আছে। আধুনিক আইসিইউ, এনআইসিইউ, ডায়ালাইসিস ইউনিট ও বিশেষায়িত বিভাগগুলো চালু হলে কুর্মিটোলা হাসপাতাল দেশের স্বাস্থ্যসেবায় একটি নতুন মানদণ্ড স্থাপন করবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সামরিক চিকিৎসা সার্ভিস মহাপরিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী মো. রশিদ-উন-নবী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিএমএইচ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের চিফ ফিজিশিয়ান জেনারেল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক ডা. সায়েদা আলেয়া সুলতানা। সিপিআর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মহসীন আহমেদ।