কোলেস্টেরল ফ্রি মানে কি একদম কোলেস্টেরল নেই?

কোলেস্টেরল ফ্রি কথাটি এখন অনেকের কাছেই পরিচিত হয়ে উঠেছে। স্বাস্থ্য সচেতনতার এই যুগে স্বাস্থ্য সম্পর্কে কমবেশি সবাই আগের চেয়ে একটু বেশি সচেতন। শরীর-স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে গেলে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার পরেই আসে খাবার-দাবারের স্বাস্থ্য সচেতনতা প্রসঙ্গ। এতে বিভিন্ন বাজারজাত খাদ্যপণ্যের গায়ে কোলেস্টেরল ফ্রি বাক্যটি উজ্জ্বলভাবে শোভা পায়।
পণ্যের বাড়তি কাটতির জন্য বাজারজাত প্রতিষ্ঠান যেমন কোলেস্টেরল ফ্রি কথাটি ব্যবহার করে, ঠিক তেমনি ভোক্তারাও পণ্যের গায়ে এই কথাটি লেখা আছে কি না, তা খুঁজে দেখেন। অর্থাৎ ভোক্তা ও প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান উভয়েই কোলেস্টেরল চর্বিজাত খাদ্যের একটি ক্ষতিকর উপাদান, যা মূলত রক্তনালি ও হৃৎপিণ্ডের ক্ষতিসাধন করে। এতে রক্তনালি সংকীর্ণ হয়ে হার্ট অ্যাটাকসহ জটিল হৃদরোগ দেখা দিয়ে থাকে। রক্তনালির সংকীর্ণতাজনিত হৃদরোগ সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় কোলেস্টেরলের সরাসরি ভূমিকা রয়েছে। তাই এই কোলেস্টেরল ভীতি। সবাই চায় কোলেস্টেরল এড়িয়ে চলতে। কোলেস্টেরল ফ্রি মানে কথাটির অর্থ হচ্ছে কোলেস্টেরলমুক্ত, অর্থাৎ কোলেস্টেরল নেই।
আজকাল রান্নার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন তেল এবং কিছু কিছু খাবারের প্যাকেট ও কনটেইনারে কোলেস্টেরল ফ্রি কথাটি উল্লেখ থাকে। এই কথার মানে দাঁড়াচ্ছে এই যে খাবার ও খাদ্যপণ্যের গায়ে কোলেস্টেরল ফ্রি লেখা আছে, সেই খাবারে একদম কোলেস্টেরল নেই।
আসলে ব্যাপারটি কিন্তু তা নয়। কোলেস্টেরল ফ্রি মানে এখানে একদম কোলেস্টেরল নেই, এ কথা বোঝায় না। কোলেস্টেরল ফ্রি কথাটি উন্নত বিশ্ব থেকে ধার করা বাক্য। যুক্তরাজ্যের প্রবিধান অনুসারে কোনো তেলের মধ্যে কোলেস্টেরল মাত্রা যদি সর্বোচ্চ ৫০ পিপিএম পর্যন্ত থাকে, তখন তাকে কোলেস্টেরল ফ্রি বলা হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অভিমত একটু ভিন্ন। তাদের মতে, একজনকে পরিবেশন করার মতো প্রচলিত উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবারে মোটামুটি ১৫ থেকে ২০ গ্রাম চর্বি থাকতে পারে। কাজেই দেখা যাচ্ছে, কোলেস্টেরল ফ্রি মানেই একেবারে কোলেস্টেরলমুক্ত সেটি কিন্তু নয়। প্রকৃতপক্ষে কোলেস্টেরল ফ্রি বলতে নিরাপদ মাত্রার কোলেস্টেরল কিংবা স্বল্পমাত্রার কোলেস্টেরলকে বোঝানো হয়েছে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো কিংবা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়।
সুতরাং কোলেস্টেরল ফ্রি বলতে কোলেস্টেরলমুক্ত না বুঝে নিরাপদ মাত্রার কোলেস্টেরল মনে করাই সমীচীন। তবে কোলেস্টেরল ফ্রি বলতে যাই বোঝায়, এটি যে স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিমুক্ত বা নিরাপদ, এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো দ্বিধা নেই।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ।