দুশ্চিন্তায় কি চুল পাকে?

নিজেকে সবাই যৌবনদীপ্ত দেখতে চায়। আয়নায় নিজের মুখ দেখতে গিয়ে অজান্তে চোখ পড়ে যায় মাথার চুলে। মাথার দু-একটি পাকা চুলের উপস্থিতি এভাবে ধরা পড়ে। বয়স হলে মাথায় চুল প্রায় সবারই সাদা হতে শুরু করে। তবে কারো কারো আগে আর কারো কারো পরে এই পাক ধরে। মোট কথা পাকা চুল হচ্ছে মাঝ বয়সের সংস্কৃতি। কিন্তু পাকা চুল সম্পর্কে এর বাইরে কিছু ধারণা প্রচলিত আছে। যেমন অনেকেই মনে করেন দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্ন হওয়া, মানসিক বিপর্যয় ইত্যাদির কারণে চুল পেকে যায়। প্রকৃত পক্ষে চুল পাকার সঙ্গে এসবের কোনো সম্পর্ক নেই।
চুলের রং ধূসর বা সাদা হওয়ার পেছনে মূলত রঞ্জক পদার্থের ঘাটতিকেই দায়ী বলে মনে করা হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে প্রায় ৫০ শতাংশ সাদা হওয়ার এই প্রবণতা খেয়াল করা যায়। এটি চুল পাকার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
এ ছাড়া অসুস্থতাজনিত কারণেও চুলের রং ধূসর হতে পারে। যেমন হাইডারথাইরয়েডিজম নামক থাইরয়েড গ্রন্থির রোগে অনেক সময় চুলের রং ধূসর হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন অনেক গবেষক। অপুষ্টিজনিত কারণেও চুলের রং ধূসর হয়ে থাকে। চুল যখন ধূসর হতে হতে একসময় সাদা হতে থাকে, তখন বুঝতে হবে চুলের গোড়ার রঞ্জক উৎপাদন ক্রমশ বন্ধ হতে চলেছে। তখন চুলের গোড়ার অংশ সাদা আর প্রান্তীয় অংশ ধূসর দেখা যাবে। রঞ্জক উৎপাদন একে একে বন্ধ হয়ে গেলে দেখা যাবে চুলের গোড়া থেকে শুধু সাদা চুলই বেড়ে উঠেছে। চুলের এই সাদা হওয়ার সঠিক কারণ আজও জানা যায়নি। তবে বংশগত, দেহের প্রতিরক্ষাতন্ত্র সম্বন্ধীয় বিষয়, জিংকের অভাব, যকৃতের রোগ, শ্বেতিরোগ, পুষ্টিহীনতা ইত্যাদির সঙ্গে চুল পাকার সম্পর্ক রয়েছে, বলে মনে করা হয়। তবে চুল পাকার পেছনে দুশ্চিন্তা সরাসরিভাবে দায়ী নয়।
প্রসঙ্গত, একটি বিষয় উল্লেখ করা উচিত, জাতিগতভাবে আমাদের চুল কালো, তাই সাদা চুল দেখে আমরা উদ্বিগ্ন হই। চুলের এই রং তার জন্ম থেকেই ধারণ করা আছে। এতে দুশ্চিন্তার কোনো বিষয় নেই। কাজেই দুশ্চিন্তার কারণে চুল পেকেছে বলে মনে করা অথবা নতুন দুশ্চিন্তাকে মনে ঠাঁই দেওয়ার কোনো মানে হয় না।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ