ফল, শাকসবজি, মাছ ফরমালিনমুক্ত করবেন কীভাবে

বর্তমানে খাদ্যদ্রব্যে সংরক্ষণে বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম বাজে জিনিস ব্যবহার করা হয়। খাবার থেকে এগুলো কমানোর উপায় কী? এ বিষয়ে এনটিভির ২৫২৮তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. শারমিন ইয়াসমিন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : একটি খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে টেবিলে পরিবেশন পর্যন্ত কী কী ঝুঁকি আসতে পারে?
উত্তর : খাদ্যনিরাপত্তা বলতে আমরা উৎপাদন, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ, সবশেষে পরিবেশন এই পর্যন্ত কিন্তু আমাদের খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
উৎপাদন দিয়ে যদি শুরু করি তাহলে দেখেন, যেসব খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন করা হয় তাতে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর। আপনি হয়তো বলতে পারেন অন্যান্য দেশেও এটা ব্যবহার করা হয়, কিন্তু আমাদের দেশে যেটা হয়, আমরা মাত্রাটা ঠিক রাখি না। এখানেও কিন্তু মাত্রাটা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে আমাদের এখানে এটা হয় না। এর একটি কারণ হলো অজ্ঞতা। আরেকটি হলো আমাদের সচেতনতার অভাব। কিন্তু আমাদের দেশে এর বিষাক্ততাটা বেশি।
আরেকটি জিনিস যেটা সংরক্ষণের কথা আমি বলব। সব সময় পত্রিকায় দেখতে পাচ্ছি, মিডিয়ায় দেখতে পাচ্ছি যে ফরমালিন মেশানো হচ্ছে, ফল তাড়াতাড়ি পাকানোর জন্য কার্বাইড মেশানো হচ্ছে, এরপর ডিডিটি পাউডার ব্যবহার করা হচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের টেক্সটাইল ডাই ব্যবহার করা হচ্ছে। কাজেই এগুলোর মারাত্মক একটি ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে।
আমার যেটা মনে হয়, আমাদের এখানে ফুড সেফটি অ্যাক্ট-২০১৩ রয়েছে। আইন আছে, তবে আইনের প্রয়োগকে যদি সঠিকভাবে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে পারি, তাহলে কিন্তু এই ক্ষেত্রে অনেকটা উন্নতি সম্ভব। ব্যবসায়ী ব্যবসা করবেন, সেটি ঠিক আছে, কিন্তু মানুষের জীবনের ক্ষতি করে তো তিনি সেটা করতে পারেন না। এই ক্ষেত্রে তাঁদের যে সমাজ রয়েছে, তাঁদের ভেতর সচেতনতাটা ভীষণভাবে বৃদ্ধি করা জরুরি। আর ভোক্তা যাঁরা আছেন, যাঁরা আমরা ফল কিনছি, সবজি কিনছি, তাঁদেরও এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
আমি বাজারে যাচ্ছি, খাবার আনছি, এতে ফরমালিন থাকতে পারে, কারণ আমি তো পরীক্ষা করে আনছি না। এখন বাড়িতে এসে আমি কী করব? বাড়িতে এসেও কিছু উপায় আছে ওটাকে ফরমালিন ফ্রি করার।
ফরমালিন পানিতে দ্রবীভূত হয়ে যায়। কাজেই একে যদি এক ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখি, তারপর আমি একে ফ্রিজে রাখলাম। তাহলে সেটি ফরমালিন ফ্রি হয়ে যাওয়ার কথা।
প্রশ্ন : এটা গেল ফলে। তবে শাকসবজি মাছ এগুলোর ক্ষেত্রে?
উত্তর : শাকসবজিকে ১০ মিনিট লবণপানিতে ভিজিয়ে রাখতে বলি, তাহলে অনেকটা ফরমালিন চলে যায়। ১০ মিনিট, খুব বেশিক্ষণ নয়। আবার কিছু ফলে আপনি যদি ভিনেগার দিয়ে দেন, পানির সঙ্গে ভিনেগার মিশিয়ে, এক ঘণ্টা যদি রেখে দেই, সেটাও আরেকটি উপায়।
প্রশ্ন : মাছের বেলায় কী করবেন?
উত্তর : মাছের বেলায়ও ভিনেগার দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে মাছটা রান্না করলেই হয়।
প্রশ্ন : এটা কি কাটার পরে নাকি কাটার আগে?
উত্তর : কাটার পরে এবং রান্নার সময় যে তাপটা দেওয়া হয়, এতেও ফরমালিন অনেকটা ধ্বংস হয়ে যায়।
প্রশ্ন : খাদ্যে ভেজাল হলে ক্ষতি কী?
উত্তর : চিন্তিত হচ্ছি কারণ এর স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক। আপনি একটু খেয়াল করে দেখেন যে আমাদের অসংক্রামক ব্যাধিগুলো আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। যেমন কিডনির রোগ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যানসার বেড়ে গেছে। এ ছাড়া বাচ্চারা অনেক জন্মত্রুটি নিয়ে জন্মাচ্ছে। বাচ্চার ওজন জন্মের সময় কমে যাচ্ছে। বাচ্চারা যে সময় যেটা করার কথা সেই সময় হয়তো সেটা করছে না। বাচ্চাদের বুদ্ধি কমে যাচ্ছে। এসব বিভিন্ন বিষয় ঘটছে। কাজেই এগুলো কিন্তু ভবিষৎ প্রজন্মের জন্য খুব ক্ষতিকর একটি বিষয়। কাজেই একে অবশ্যই আমাদের দূর করতে হবে।
প্রশ্ন : খাবার ভেজালমুক্ত তা নিশ্চিত করার পরামর্শ কী?
উত্তর : এখানে আসলে সব জায়গা থেকে কাজ করা দরকার। সরকারি পর্যায়ে তো অবশ্যই ভূমিকা আছে, ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল সেক্টর, ল অ্যান্ড অর্ডার সেক্টর, এ ছাড়া ব্যবসায়ী যে সোসাইটি আছে, তাদের সবার মধ্যে একটি সমন্বয় লাগবে। কমিউনিটি পর্যায়ে এই সংক্রান্ত যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে তাদেরও এই সম্বন্ধে কাজ করতে হবে।
ছোটবেলা থেকেই যদি বাচ্চাদের একটু বলে অভ্যস্ত করি বা ওদের কানে দিয়ে রাখি, তাহলে কিন্তু ওরা যেখান-সেখান থেকে খাবার খাবে না। খোলা রাস্তার খাবার কিন্তু সে খাবে না। এগুলোও ছোটবেলা থেকে বলে বলে বোঝাতে হবে।