শিশুদের মুখমণ্ডলের জন্মগত ত্রুটি কেন হয়?

শিশুদের মুখমণ্ডলে জন্মগত ত্রুটি অনেক সময়ই দেখা যায়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৪৮১তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. ফোয়ারা তাসমীম পামী। বর্তমানে তিনি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : একটি শিশু জন্মগতভাবেই নানা রকম ত্রুটি নিয়ে জন্মাতে পারে। ভেতর বা বাইরে যেকোনো অঙ্গে যেকোনো ধরনের ত্রুটি হতে পারে। মুখমণ্ডলে সাধারণত কী ধরনের জন্মগত ত্রুটি হয়?
উত্তর : জন্মগত অনেক ত্রুটি নিয়েই বাচ্চার জন্ম হতে পারে। মুখমণ্ডলের ক্ষেত্রে অনেকের পরিবারেই হয়তো আছে—সেটা হচ্ছে ঠোঁট কাটা, তালু কাটা অথবা আরো বিভিন্ন ধরনের ফেসিয়াল এনোম্যালি বা মুখমণ্ডলের ত্রুটি। কারো হয়তো ঠোঁটের পাশটা অনেকটা কাটা, কারো একদিকে বড় মুখ, আরেকদিকে ছোট মুখ। অনেক সময় কানে দেখা যায় এর আকার কখনো ছোট হয়, কখনো বড় হয়, অনেক সময় বহির্কর্ণ যে রকম থাকার কথা, সে রকম হয় না। কানের ট্যাক থাকে সামনে, দেখা যায় এই জায়গাতে কিছুটা ঝুলে আছে। এ ধরনের ত্রুটিগুলো আমরা সাধারণত পেয়ে থাকি। কখনো রক্তনালির হেমাঞ্জিওমা বা এবিএম, কখনো নাকের সমস্যা হতে পারে। দেখা যায়, অনেক সময় নাকের আগাটা দুই ভাগ হওয়া কিংবা উঁচু-নিচু অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে। অনেক সময় পুরো মুখটাই হয়তো অনেক বড় করে কাটা থাকে। এগুলোর আবার বিভিন্ন রকম আছে। কারো একদিকে, কারো অন্য রকম।
প্রশ্ন : শিশু মাতৃগর্ভে থাকলে কী ঘটনা ঘটলে ওই ঝুঁকিটা বেড়ে যায়?
উত্তর : আমরা সাধারণত বলি অনেক কারণে এটা হয়—মাল্টিফ্যাকটোরিয়াল যাকে বলে। আমাদের দেশে যেটা হয় অনেকেই জানেন না যে সে হয়তো গর্ভবতী। সে ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রথম তিন মাসের মধ্যে তাঁরা কোনো অসুখে ভুগছেন, কিংবা কোনো ওষুধ খাচ্ছেন, যেটা জন্মগত ত্রুটির জন্য দায়ী। তা ছাড়া অ্যান্টিনেটাল চেকআপ, অর্থাৎ জন্মের পূর্ববতী গর্ভাবস্থায় যে নিয়মিত চেকআপ দরকার, সেটা সব সময় সব মা নিতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে পুষ্টি, ভিটামিন, আয়রন অনেক কিছুর হয়তো অভাব থেকে যায়। হয়তো জ্বর হলো, তাঁরা হয়তো ঠিকমতো চিকিৎসা নিলেন না। কিছু নির্দিষ্ট ভাইরাস আছে, রেডিয়েশনের কারণে, পরিবেশগত কারণ এসব মিলে জন্মগত ত্রুটিগুলো হয়।
প্রশ্ন : একটি শিশুর এমন হলে আমরা শুনি যে ওই মায়ের হয়তো চলাফেরা ভালো ছিল না। কিংবা তিনি সন্ধ্যার সময় বাইরে গেছেন বা রাতের বেলা বাইরে গেছেন, বাতাস লেগেছে, এ রকম নানা কথা শুনতে পাওয়া যায়। আসলে এর কোনো ভিত্তি আছে কি?
উত্তর : এর কোনো ভিত্তি নেই। আমাদের দেশে দায়ী করা হয় মাকে। ভাবে, মায়ের নিশ্চিয়ই কোনো সমস্যা। সেটার আসলে কোনো ভিত্তি নেই। মায়ের চলাফেরার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। প্রথমেই মাকে বলতে হবে, এটি এ ধরনের কোনো সমস্যার কারণে হয়নি। এটি একটি মেডিকেল সমস্যা। অনেকের ক্ষেত্রেই হয়। আর পরবর্তী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে হয়তো হতে পারে। কাদের হলে তার পরবর্তী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে হতে পারে—এর একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে। একটি চার্ট করে এটি দেখা সম্ভব হয়।
প্রশ্ন : একটি শিশু হয়তো এ রকম গর্ভজাত অবস্থায় আছে, এখন তো অনেক উন্নত পরীক্ষা-নিরীক্ষা আছে, পরীক্ষার মাধ্যমে অনেক সময় বোঝা যায়, গর্ভজাত সন্তানটির এ রকম কোনো সমস্যা আছে কি না। গর্ভাবস্থায় কি এর কোনো সমাধান করা সম্ভব?
উত্তর : সার্জিক্যাল রিপেয়ার (পুনর্গঠন) গর্ভাবস্থাতেই করা সম্ভব কিছু কিছু ক্ষেত্রে। তবে এটি খুব বেশি জনপ্রিয়তা পায়নি। সে ক্ষেত্রে ভেতরেই বাচ্চা মারা যাবে, এমন একটি ভয় কাজ করে।
প্রশ্ন : তালু কাটা বা ঠোঁট কাটা শিশু হলে প্রথমেই চিন্তা হয় জন্মের পর শিশুটা খাবে কী করে? তার খাবারের ধরনটা কী হবে এবং শিশু জন্ম দেওয়ার পর তার মায়ের, বিশেষ করে তার পরিবারের লোকদের ওপর একটি মানসিক প্রভাব পড়ে। এ দুটো ঠিক করার জন্য আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : এটি হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। প্রথমেই যখন বাচ্চাটি মা দেখে তখন একটি মেন্টাল ট্রমা (মানসিক ধাক্কা) হয়। আশপাশের লোক এগুলোকে আরো উৎসাহিত করে এ ধরনের কথা বলতে। সে ক্ষেত্রে তাদের উচিত হচ্ছে, চিকিৎসকের কাছে যাওয়া। চিকিৎসক যেটা নিশ্চিত করেন, এটা কোনো সমস্যা নয়, চিকিৎসা দিলে বাচ্চাটি প্রায় স্বাভাবিক শিশুদের মতো হয়ে যাবে। এগুলোর একটি পর্যায় আছে। কোন সময়ে কোন কোন অস্ত্রোপচার করতে হবে—এটা বাবা-মাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। এ ক্ষেত্রে যেটা করতে পারে যে অন্য বাচ্চাদের ছবি দেখাতে পারে যে জন্মগত ত্রুটি ছিল, এখন তার এ অবস্থা।
এ ছাড়া তালু কাটা ও ঠোঁট কাটা একসঙ্গে থাকলে খাওয়ার সমস্যাটা আরো বেশি হয়। সে ক্ষেত্রে খাওয়ার সময় বিশেষ ধরনের একটি বোতল পাওয়া যায়, সেটাতে খাওয়ানো। বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর পর ঢেঁকুর তোলা—এগুলোর বিষয় আছে। আর খেয়াল রাখতে হয়, খাবার যেন কিছুতেই শ্বাসনালিতে না যায়। খাওয়ানোর সময় বসে, একটু ধরে বাচ্চাকে খাওয়াতে হয়। এ ধরনের বাচ্চাদের দেখা যায় সর্দি-কাশিতে ভোগার বেশি আশঙ্কা থাকে। সে জন্য শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলতে হবে, যদি কখনো এ রকম হয়।