মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচার কখন প্রয়োজন হয়?

নানা কারণেই মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪৭৬তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মোহাম্মদ হোসেন। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : মস্তিষ্কের সার্জারি কথাটা শুনলে একটু ভয় ভয় লাগে। এত গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ শরীরের যেটা ছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না। সাধারণত মস্তিষ্কের কী কী রোগ হলে এর সার্জিক্যাল চিকিৎসা দরকার হয়?
উত্তর : মস্তিষ্কের অনেক রকম রোগ হয়। অনেক রোগের অস্ত্রোপচার লাগে না।কিছু ক্ষেত্রে আমাদের অস্ত্রোপচার করা জরুরি হয়ে যায়। এর মধ্যে মাথায় আঘাত জনিত যে কারণ, অথবা মস্তিষ্কের টিউমার, অথবা মস্তিষ্কে সংক্রমণ-এসবের জন্য করা হতে পারে। কখনো কখনো জন্মগত ত্রুটি হয়ে মস্তিষ্কের অনেক অংশ কাজ করে না, অথবা মাথায় পানি জমে যায় অথবা কখনো কখনো মস্তিষ্কের রক্তনালির কতগুলো টিউমার হয়, অনেক সময় টিবি হয়, সংক্রমণ হয়-এসব ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার লাগতে পারে। এছাড়া স্ট্রোকের কারণেও অনেক সময় রক্তনালি বন্ধ হয়ে যায় অথবা রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে মাথায় রক্তক্ষরণ হয়, তখনও মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। স্ট্রোক হলেও অনেক সময় অস্ত্রোপচার করতে হয়।
প্রশ্ন : মস্তিষ্কের এসব রোগ হয় কেন? কিংবা কাদের বেলায় ঝুঁকি বেশি?
উত্তর : একটি রোগের কারণ এক এক রকম। যদি আঘাতজনিত কারণে রক্তক্ষরণ হয়, দুর্ঘটনার কারণে হতে পারে, গাছ থেকে পড়ে গিয়ে হতে পারে, এগুলো হলো আঘাতজনিত কারণ। এসব কারণে অনেক সময় অস্ত্রোপচার করতে হয়।
আর মস্তিষ্কের টিউমার যদি হয়, আসলে এর মূল কারণ এখনো মানুষ আবিষ্কার করতে পারেনি। এরপরও কিছু ঝুঁকি রয়েছে। যেমন রেডিয়েশন, অথবা হেরিডিটরি। অথবা আরো কিছু পরিবেশগত কারণ রয়েছে। তামাক জাতীয় দ্রব্য- এসব বিভিন্ন কারণে ক্যানসার হয়।
আর জন্মগত ত্রুটি যেটা বাচ্চাদের হয়, এর মধ্যে একটি প্রতিরোধ করা যায়। সেটা হলো বাচ্চাদের অনেক সময় মাথায় পানি জমে। মাথা বড় হয়ে যায়। মস্তিষ্কের পুরোত্ব কমে যায়। বাচ্চার বৃদ্ধি কমে যায়। এর সঙ্গে অনেক সময় স্পাইনাল কর্ডেও টিউমারের মতো থাকে। গর্ভকালে যদি মায়েরা ফলিক এসিড নিয়মিত খায় এই রোগকে প্রতিরোধ করা যায়।
আর মস্তিষ্কের সংক্রমণের বেশির ভাগ কারণই কান থেকে এর উৎপত্তি হয়। কান পাকা রোগ যাদের থাকে তাদের এই সমস্যা হতে পারে। অনেক সময় বাচ্চারা গ্রামে পুকুরে ডুবে গোসল করে, কানে হয়তো বা অহেতুক খোঁচাখুঁচি করে এখন থেকেও ব্রেন অ্যাপসিস হতে পারে। তা ছাড়া বাচ্চাদের দাঁতে সংক্রমণ হয়, গলায় সংক্রমণ হয়। এসব কারণেও মস্তিষ্কে সংক্রমণ হয়।
আর বেশির ভাগ স্ট্রোকই হাইপার টেনসিভ স্ট্রোক। যাদের অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ থাকে, তাদের রক্তের নালি ছিড়ে গিয়ে, মাথার রক্ত ক্ষরণ হয়। তখন অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া রক্তনালিতে কিছু টিউমার হয়, আমরা বলি এভিএম। এগুলোর ক্ষেত্রে রক্তনালি ছিড়ে গিয়ে, মাথায় রক্তক্ষরণ হতে পারে।