ডেঙ্গু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়?

ডেঙ্গু অনেক সময় প্রাণঘাতী হতে পারে। তবে ডেঙ্গু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়? বিষয়টি নিয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪৫৯তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. প্রদীপ রঞ্জন সাহা। বর্তমানে তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : ডেঙ্গু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেবেন?
উত্তর : আমার কাছে মনে হয় এটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। রোগীর রক্তের চিত্র বলে দেবে ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে কি না। এখানে আমরা মূল যেই পরীক্ষা করি সিবিসি, সেখানে আমরা দেখব তার অণুচক্রিকার সংখ্যা কেমন, শ্বেতকণিকার সংখ্যা কত। এগুলো দেখে আমরা বুঝব রোগ কতটুকু জটিল। যদি মনে করি এগুলো সবগুলোর প্যারামিটার ঠিক রয়েছে, তাকে সাধারণ উপদেশ দিই। প্যারাসিটামল অথবা অন্যান্য জ্বর নিরাময়ের জন্য ওষুধ দিই। পানি পান করতে বলি, বিশেষ করে ওরস্যালাইন খাওয়ার জন্য বলি। সিবিসি আমরা আবার পর্যবেক্ষণ করি। এই ক্ষেত্রে কিছু ঝুঁকির লক্ষণ আমরা বলে দিই।
প্রশ্ন : এগুলো কেমন?
উত্তর : যেমন আমরা বলব যে গায়ে কোনো লাল লাল দাগ আসে কি না? আপনার প্রচণ্ড পেটে ব্যথা হয় কি না? শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় কি না? অথবা লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। লিভার সম্পৃক্ত কোনো অভিযোগ আছে কি না? মূলত আমরা দেখি র্যাশ, কোনো পেটের সমস্যা, যেমন পেটে ব্যথা, বমি, শ্বাসকষ্ট অথবা রোগী খুব বিরক্ত, বিশ্রামহীন। সেই ক্ষেত্রে বলি এই রোগীটি ভালো অবস্থায় নেই।
প্রশ্ন : সেই ক্ষেত্রে পরামর্শ কী হবে?
উত্তর : সেই ক্ষেত্রে আমরা হাসপাতালে ভর্তি করতে বলি। হাসপাতালে ভর্তি করে আমরা যেটি করি, প্রথম পাঁচদিন আমরা ডেঙ্গু এন এস ওয়ান করি। এটি পজিটিভ পাওয়া মানে তার ডেঙ্গু হয়েছে। এই ডেঙ্গু পরে জটিল ডেঙ্গু হবে কি না, ডেঙ্গু হেমোরেজিক বা ডেঙ্গু শক যাবে কি না এটা প্রাথমিকভাবে ধরা খুব কঠিন। রোগীকে রাখতে হবে আমাদের নজরে। বারবার রক্তের প্যারামিটার দেখে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে রোগী খারাপের দিকে যাচ্ছে কি না।
প্রশ্ন : সেই ক্ষেত্রে কি চিকিৎসার ধরনও বদলে যাবে?
উত্তর : ডেঙ্গু আসলে একটি ভাইরাস রোগ। এখানে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো ভূমিকা নেই, যদি না রোগীর ডেঙ্গুর পাশাপাশি অন্যান্য কোনো কো-ইনফেকশন না থাকে। কারণ, আমাদের এখানে আমরা মাঝে মাঝে পাই ডেঙ্গু রয়েছে। পাশাপাশি প্রস্রাবে হয়তো জীবাণু রয়েছে। বুকের এক্সরেতে আমরা হয়তো দেখলাম রোগীর নিউমোনিয়া আছে। সেই ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। নয়তো অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো ভূমিকা নেই। ডেঙ্গু শক ও ডেঙ্গু হেমোরেজিকের যেই কথা বলছি, সেখানে আমাদের চিকিৎসা প্রায় একই রকম। তবে রোগীর যদির ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে, সেখানে আমাকে তরল এবং অন্যান্য বিষয় দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। অন্যান্য জটিলতার মধ্যে যেটা বেশির ভাগ দেখা দেয়, রক্তের জমাট বাধার প্রক্রিয়ায় হয়তো কোনো সমস্যা অথবা রোগীর লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেই সমস্যা হবে, সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে।