শিশু জন্মের সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে

নবজাতকের যত্ন খুব সহজ বিষয় নয়। এ জন্য কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪৫৬তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক ইসরাত জাহান লাকী। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের নিউনেটলজি অ্যান্ড পেডিয়াট্রিক্স বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : সুস্থ নবজাতক বলতে আমরা কী বুঝি?
উত্তর : সুস্থ নবজাতক বলতে বুঝি, জন্মের সময় যদি একটি বাচ্চার ওজন আড়াই থেকে ছয় কেজির মধ্যে হয়, একটি বাচ্চা মায়ের পেটে ৩৭ সপ্তাহ বেশি থাকার পর যদি সে ভূমিষ্ঠ হয় এবং ৪২ সপ্তাহের মধ্যে সে ভূমিষ্ঠ হয় তাকে। ৪২ সপ্তাহের পরে যদি হয়, একে আমরা পোস্ট-টার্ম শিশু বলি। ৩৭ সপ্তাহের আগে হলে একে প্রি-টার্ম শিশু বলি। একটি বাচ্চা জন্মের সঙ্গে সঙ্গে যদি স্বাভাবিক কান্নাকাটি করে এবং স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়, তাহলে সুস্থ বলতে পারি। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস বলতে আমরা বুঝি তার শ্বাস-প্রশ্বাসটা ৩০ থেকে ৬০-এর মধ্যে হতে হবে। কান্না করার সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চার রংটা গোলাপি বর্ণ ধারণ করবে। বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকবে এবং বাচ্চাটার কোনো জন্মগত ত্রুটি থাকবে না।
প্রশ্ন : জন্মের সময় কী কী বিষয় লক্ষ রাখতে হবে?
উত্তর : জন্মের আগে প্রসবটি একটি নিরাপদ জায়গায় করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় হাসপাতালে যদি করা হয়। যদি সেটি না হয়, তাহলে একটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে প্রসবটার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রসবটি অবশ্যই একজন স্কিলড বার্থ এটেনডেন্ট দিয়ে করতে হবে। প্রসবের আগে কিছু জিনিস ঠিক আছে কি না, এ বিষয়ে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে। এর মধ্যে বাচ্চার নাভি কাটার জন্য জীবাণুমুক্ত কোনো ব্লেড, সুতা এগুলো আমাদের তৈরি রাখতে হবে। বাচ্চা জন্মের সঙ্গে সঙ্গে একটি হলকা গরম কাপড় দিয়ে শিশুর পুরো শরীরটাকে মুছে ফেলতে হবে। ওই কাপড়টা পরিবর্তন করে আরেকটি শুকনো কাপড় দিয়ে সেটা মুড়িয়ে রাখতে হবে। তার পাশাপাশি আমাদের দেখতে হবে বাচ্চা শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে কি না। এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাচ্চাকে মায়ের দুধ খেতে দিতে হবে। যেটা করা যাবে না, সেটা হচ্ছে বাচ্চাকে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গোসল দেওয়া যাবে না। চুল ন্যাড়া করে দেওয়া যাবে না। এবং তেল দিয়ে বাচ্চার শরীর সম্পূর্ণ পরিষ্কার করার দরকার নেই।
জন্মের পরে দুই-তিন দিন পর গোসল করালে ভালো হয়। কারণ, হওয়ার পর দিলে অনেক সময় বাচ্চার নিউমোনিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। দুই-তিন দিন পর থেকে প্রতিদিন বাচ্চাকে গোসল করাতে হবে।
বাচ্চাকে বুকের দুধ ছাড়া আর কোনো কিছু দেওয়া যাবে না। সেটা আধা ঘণ্টার মধ্যে দিলে ভালো হয়। বাচ্চাকে দেড় মাস বয়স থেকে টিকা দেওয়া শুরু করতে হবে। বাচ্চা জন্মের পর প্রস্রাব-পায়খানা করছে কি-না, এটি খেয়াল রাখতে হবে।
প্রশ্ন : নবজাতকের পরিচর্যার বিষয়ে কিছু বলুন?
উত্তর : বাচ্চাকে ছয় মাস পর্যন্ত একদম মায়ের বুকের দুধ খাওয়াবেন। চিনি, মধু, পানি কোনো কিছু খাওয়ানো যাবে না। ছয় মাস বয়স থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবার শুরু করতে হবে। আর দাদি-নানির উদ্দেশে আমি বলতে চাই, আপনারা বাচ্চা কাঁদলেই অন্য দুধ দেওয়ার জন্য মাকে জোর করবেন না। আপনারা শুধু দেখেন যে বাচ্চা ২৪ ঘণ্টায় ছয়বার প্রস্রাব করে কি না। আর আমি আমার সহকর্মীদের উদ্দেশে বলতে চাই, একটি নবজাতক বুকের দুধ খেলে বারবার পায়খানা করবে। এর জন্য মায়ের দুধ বন্ধ করে আপনারা কেউ কৌটার দুধ লিখবেন না। দর্শকদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান। কারণ, এটি একটি আল্লাহর নিয়ামত। এই নিয়ামত থেকে বাচ্চাকে বঞ্চিত করবেন না। পাশাপাশি বুকের দুধ খেলে বাচ্চা নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, কানপাকা রোগ থেকে রক্ষা পাবে। বাচ্চা অনেক বেশি বুদ্ধিমান হবে।