দাঁত প্রতিস্থাপনের বিশেষ পদ্ধতি ইমপ্ল্যান্ট

দাঁত প্রতিস্থাপনের জন্য বর্তমানে দেশে অন্যতম পদ্ধতি হলো ইমপ্ল্যান্ট। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪৩৮তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনজারভেচি ডেন্টিস্ট্রি অ্যান্ড এন্ডোডন্টিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : দাঁত প্রতিস্থাপনের কী কী ধরনের পদ্ধতি রয়েছে?
উত্তর : আসলে যখন কোনো দাঁত ফেলে দেওয়া হয় অথবা কোনো কারণে দাঁত পড়ে যায়, দুর্ঘটনার কারণে হোক বা যেকোনোভাবেই হোক অথবা জন্মগতভাবেই হোক, কারো যদি দাঁত না থাকে সে ক্ষেত্রে প্রতিস্থাপনের একটি চিন্তা আসে। এই পদ্ধতিগুলো যুগের পর যুগ যেটা চলে আসছিল, একটি হলো খোলা লাগানো পদ্ধতিতে করা, এটা এখন প্রায় বন্ধই বলা চলে। এর নানা রকম প্রতিক্রিয়া আছে। আরেকটি আছে, যেমন মাঝখানে হয়তো দাঁত নেই বা দুটো দাঁতকে কেটে সেটার সঙ্গে জয়েন্ট দিয়ে ব্রিজিং করা হয়। এই একটা হতে পারে। আর সর্বশেষ যেটা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, সেটা হলো ডেন্টাল ইমপ্ল্যান্ট সার্জারি। এই তিন পদ্ধতিতেই মোটামুটি দাঁত প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা বিশ্বে স্বীকৃত।
প্রশ্ন : দাঁত প্রতিস্থাপনের গুরুত্ব কতখানি? দীর্ঘদিন ধরে দাঁত না থাকলে কী কী সমস্যা হয়?
উত্তর : যেমন ধরেন, তার কথা বলতে গিয়ে সমস্যা হতে পারে। উচ্চারণটা সঠিক হয় না। তার খেতে গিয়ে সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া তার চেহারার যে আকৃতি, নষ্ট হয়ে যায়। এর পর দাঁত না থাকলে অন্যান্য দাঁত শিফটং হয়ে এঁকেবেঁকে যায়, পাশেরটা নড়ে গিয়ে হয়তো পড়ে যাওয়ার অবস্থা হয়। প্যারিডোনটাইটিস বা অন্য ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে। অনেক ধরনের জটিলতা আছে।
প্রশ্ন : এই ইমপ্ল্যান্ট আসলে কী?
উত্তর : দাঁতের ইমপ্ল্যান্ট আসলে শুরু হয় বহু বছর আগে। জার্মানিতে ব্র্যান্ড মার প্রথম শুরু করে। দাঁত না থাকলে এক ধরনের মেশিন দিয়ে ড্রিল করে টাইটেনিয়াম মেটালিক ঢুকিয়ে দিয়ে, তার ওপরে দাঁত লাগিয়ে দেওয়া হয়।
আবার ধরেন নিচে দাঁত নেই, যেটা করা যেত, পাশের দুটো দাঁত কেটে ব্রিজ করা হতো। সেটি না করে এখনকার সর্বশেষ পদ্ধতি হলো ওখানে ড্রিল করে ইমপ্ল্যান্ট করে তার মধ্যে বসানো।
প্রশ্ন : অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় এ পদ্ধতির বিশেষত্ব কী?
উত্তর : বিশেষত্বের মধ্যে যেহেতু এটা সর্বাধুনিক পদ্ধতি, খুব দক্ষ না হলে এটি করা ঝুঁকিপূর্ণ। আর রোগীদের ক্ষেত্রে যেটা আমি বলব সাধারণ মানুষ অনেক সময় দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকে যে কোন পদ্ধতিটা সঠিক।
আগে যদি পেটের কোনো অস্ত্রোপচার করা হতো, পুরো পেট কাটা হতো। এখন কেবল ড্রিল করে। তেমনি দাঁতের ক্ষেত্রেও এ রকম নতুন পদ্ধতি এসেছে। কাটাকাটি যত কম করা যায় এ রকমভাবে। সুতরাং একটি দাঁত নেই, এর জন্য আপনে পাশের আরো ভালো দুটো দাঁতকে ত্যাগ করলে, এটা আধুনিক বিজ্ঞান সম্মতি দেয় না। এই জন্য ইমপ্ল্যান্টকে এখন সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য করা হয়। বিশ্বে ও আমাদের দেশেও এই চিকিৎসা পদ্ধতি শুরু হয়েছে।
প্রশ্ন : ইমপ্ল্যান্ট করার জন্য রোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনারা কী করে থাকেন?
উত্তর : যেকোনো সার্জারির ক্ষেত্রে রোগীর কিছু পূর্বাবস্থা আছে। যেমন রোগীর স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যা আছে কি না, এটা বিবেচনায় আনতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস অন্যান্য রোগ যেগুলো আছে, সেগুলোরে ক্ষেত্রে কিছু কিছু সার্জারির সীমাবদ্ধতা থাকে। আবার অনেক ক্ষেত্রে রোগী বয়সেরও একটি বিষয় আছে। সেই জিনিসগুলো একটু বিবেচনায় থাকে। এই চিকিৎসা সারা বিশ্বেই অন্যান্য চিকিৎসার তুলনায় ব্যয়বহুল। বাংলাদেশেও এই চিকিৎসা ব্যয়বহুল। তবে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে এটি কম। এটা অত্যন্ত একটি আশাব্যঞ্জক বিষয়। অনেকে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে, অন্যান্য জায়গায় দীর্ঘদিন বসবাস করছে প্রবাসী, তারা হয়তো বাংলাদেশে এসে করছে। ডেন্টাল সার্জারির ক্ষেত্রে এটি একটি বিপ্লবী পদ্ধতি। এটার জন্য অনেকে বাইরে থেকে এসে চিকিৎসা করে আবার চলে যাচ্ছে।
প্রশ্ন : কত দিনে আপনারা পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ করেন?
উত্তর : প্রথমত, আমরা রোগী নির্বাচন করি। এটি করে একটি সময় রোগীকে বলে দিই, তখন আমরা সেইভাবে প্রস্তুতি নেই। এটি এত সহজ একটি দাঁত তুলতে যতটুকু কষ্ট না হয়, তার চেয়েও বিষয়টি সহজ। অনেক কঠিন সার্জারি দুই-তিন ঘণ্টাও লেগে যায়। কিন্তু আমার অনেক কেস আছে, আমি ২৫ থেকে ২৬ দিনের মধ্যে করে ফেলি। সে ক্ষেত্রে প্রথমে জায়গাটিকে নির্বাচন করি, স্থানীয় অ্যানেসথেশিয়া দিয়ে। ড্রিল করা হয়, মেশিন আছে। এরপর ইমপ্ল্যান্টের আকার কী, কত ডায়ামিটারের লাগবে এটা আগে থেকেই দেখা হয়। তার আগে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিতে হয়। এর পর কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি। এরপর প্রথম সার্জারিতে আমরা ভেতরে করি। এরপর দ্বিতীয়বার যখন আসে, এক থেকে দেড় মাস বেশির ভাগ সময়। এরপর আমরা ফলোআপ করি। আমরা দেখব রোগীর কোনো কষ্ট হয় কি না। ব্যথা হয় কি না বা ফুলে গেলে কি না, সংক্রমণ হলো কি না। এই জিনিসগুলো আমরা ফলোআপ করি এক সপ্তাহ পরে, দুই সপ্তাহ পরে, তিন সপ্তাহ পরে। পরে একটি হিলিং ক্যাপ লাগানো থাকে, সেটা খুলে আসল ফিক্সারটা বসিয়ে দিই। বসিয়ে দিয়ে তার ওপর মাপ নিয়ে ক্রাউন করে দিই। এটা শেষ পর্যন্ত স্বাভাবিক দাঁতের মতোই থাকবে।
প্রশ্ন : এটা ঠিক স্বাভাবিক দাঁতের মতোই তো হবে?
উত্তর : আসলে এই কথা বলতে গেলে আমাকে বলতে হবে প্রাকৃতিক জিনিসের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু প্রাকৃতিকের কাছাকাছি হতে পারে। সে জন্য বলা হয়, এ পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি প্রচলিত দাঁত প্রতিস্থাপনের জন্য। তবে এর জন্য অনেক দক্ষ হওয়ার প্রয়োজন পড়েছে। দক্ষ হওয়া ছাড়া কোনো সার্জারি করা আসলে প্রকারান্তরে নিজের ক্ষতি করা এবং জাতির ক্ষতি করা। সচেতন চিকিৎসকবৃন্দ এই বিষয়টি আশা করি খেয়াল রাখবেন।