হিট স্ট্রোকের লক্ষণ কী?

গরমের সময় হিট স্ট্রোক অনেকেরই হতে দেখা যায়। হিট স্ট্রোক হলে কীভাবে সেটি বুঝবেন, এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪২৭তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : হিট স্ট্রোক বিষয়টি কী?
উত্তর : আমাদের তাপমাত্রা যখন বেড়ে যাচ্ছে, আবহাওয়ার তাপমাত্রা যখন বেড়ে যাচ্ছে, আমাদের শরীরে তখন কিছু বিষয় তৈরি হয়। প্রথমত, হিট ক্রাম্প। এরপর হিট এক্সোরশন। এর পর হলো হিট স্ট্রোক।
প্রশ্ন : কীভাবে স্ট্রোকটি হয়?
উত্তর : আমরা যখন কিছুক্ষণ হাঁটতে থাকি গরমের দিনে, হাঁটার পর কিছুক্ষণ পর দেখি পায়ের মাংসপেশিতে টান পড়ে। মাংসটা শক্ত হয়ে আসছে। মাংসপেশিটা ব্যথা করছে। এটা কিন্তু আসলে হিট ক্রাম্প। এটা কমবেশি আমাদের সবার জীবনেই হয়ে থাকে। আপনি খুব খেয়াল করলে দেখবেন, আমরা যখন শাকপাতা দিয়ে ভাত খাচ্ছি, তখন শরীর ঠান্ডা থাকে। যখন আমরা বিরিয়ানি খাচ্ছি, শরীরে দেখা যাচ্ছে ঘাম বের হচ্ছে। আমরা ঘরে বসে ঘামছি। শরীর গরম হয়ে যাচ্ছে। একে বলা হয় স্পেসিফিক ডায়নামিক অ্যাকশন অব দ্য ফুড। শরীরে খাবার হজম করতে গিয়ে কিছু তাপ তৈরি হচ্ছে। এই তাপমাত্রাটা চামড়া দিয়ে বের হয়ে চলে যাচ্ছে বাইরে। একে রেডিয়েশন বলে।
আর ইভ অপারেশন হলো গরমের মধ্যে আমি ঘামছি। এই ঘাম আমাদের জন্য ভালো। ঘাম যখন চলে গেল, যাওয়ার সময় কিছু তাপ নিয়ে চলে গেল। এর মানে দুভাবেই আমার শরীরের তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে। এই কমে যাওয়ার সঙ্গে শরীরে উৎপাদনের যদি সমন্বয় না হয়, তখন আমার তাপের সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। কখন আমার শরীর তাপ ছড়াচ্ছে, তবে বাইরে তাপমাত্রা অনেক বেশি। দেখা যাচ্ছে এটা চল্লিশের ওপর প্রায়ই চলে যাচ্ছে। চল্লিশের ওপর যখন তাপমাত্রা উঠে যায়, তখনই এটা ঝুঁকির বিষয় হয়ে যায়। তখন সঙ্গে কতগুলো বিষয় তৈরি হয়।
আমরা যখন সৌদি আরবে যাচ্ছি, সেখানকার তাপমাত্রা ৪০/৫০। আমাদের কিন্তু কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সেখানে হিউমিডিটি অনেক বেশি। এখানে ঘাম শুকাচ্ছে না। আমাদের দেশে কিন্তু গরমের সময় গরম বাতাস বের হওয়া শুরু করে। এটাও একটা খুব বাজে জিনিস। এর মানে এ সময়ে আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে।
আর আমরা যখন হাঁটাচলা করি, ব্যায়াম করি, তখনো আমাদের শরীরে তাপ তৈরি হয়। এই তাপ তৈরি হওয়ার আর বের হওয়ার বিষয়ের সমন্বয়টা আমাদের সব সময় মাথায় রাখতে হবে।
প্রশ্ন : হিট ক্রাম্প হওয়ার পর কী ধরনের অবস্থা আসতে পারে?
উত্তর : হিট এক্সোরশনের সময় কী হবে? দেখবেন গরমের সময় অনেক ক্ষেত্রে হেঁটে এলে আমাদের একটু বমি বমি ভাব হবে। গরমের সময় অনেকের ক্ষেত্রে পরিশ্রম বা হাঁটাচলার পর বমি ভাব আসতে পারে। কখনো বমি হয়েও যেতে পারে। কখনো পাতলা পায়খানা হয়ে যেতে পারে। এটি একটি লক্ষণ। আমাদের বিষয়টি খেয়াল করতে হবে। এরপর প্রচণ্ড অবসাদ দেখা দেয়। ঘরে এসে কাজ করতে কোনো কিছু ভালো লাগে না। মনে হয় যেন আমি ঘুমিয়ে পড়ছি। হাত-পা ছেড়ে দিচ্ছে। প্রচণ্ড দুর্বলতা। সঙ্গে দেখবেন মাথাব্যথা শুরু হয়ে যায়। গরমে যখন হাঁটি, তখন মাথায় একরকম ব্যথা থাকে। এই জিনিসগুলো আমার চলে আসে। সঙ্গে যদি কোনো কারণে আমার আগে থেকে পানিশূন্যতা থাকে, তখন এই জিনিসগুলো অনেক বেশি বেড়ে যায়। তাই এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।
প্রশ্ন : হিট স্ট্রোক হলে ঠিক তখনকার লক্ষণগুলো কী বা কী দেখে একজন মানুষ এটা বুঝতে পারবে?
উত্তর : যখন হিট স্ট্রোক হয়, দেখা যায় আমি ঘামছি, হঠাৎ করে আমার ঘামটা বন্ধ হয়ে যাবে। পাশে যদি কারো হিট স্ট্রোক হয়, গায়ে যখন আমি হাত দেব, দেখব গায়ে কোনো ঘাম নেই। শরীরটা লাল হয়ে যাবে। যখন আমি তার পালসে হাত দেব দেখব কোনোরকমে পাওয়া যাবে। আর যে কথাগুলো আমি এতক্ষণ বললাম তার সব জিনিস থাকতে পারে। তার সঙ্গে যখন কথাবার্তা বলব, সে থাকবে দ্বিধান্বিত। তার এখানে হেলোসিনেশন তৈরি হতে পারে। চোখের সামনে ঝাপসা দেখছে এ রকম হতে পারে। হয়তো বা সে কোমায় চলে যেতে পারে।
প্রশ্ন : এ অবস্থা তার মধ্যে কতক্ষণ থাকে?
উত্তর : কতগুলো ঝুঁকির বিষয় রয়েছে। এটার ওপর বিষয়টি নির্ভর করে। আমরা কিন্তু কম অস্থিতিশীল। অস্থিতিশীল বয়সের কারা? চার বছরের নিচে এবং ৬৫ বছরের ওপরে তাদের এই সমস্যা বেশি হচ্ছে। কেন? তাদের এই তাপের ভারসাম্যের নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিটা কীভাবে যেন নষ্ট হয়ে যায়।