চোখের গ্লুকোমা কী?

চোখের গ্লুকোমা একটি জটিল সমস্যা। তবে এর অনেক উন্নত চিকিৎসা এখন এ দেশে রয়েছে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫০৫তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ও অধ্যাপক ডা. জালাল আহম্মেদ।
প্রশ্ন : গ্লুকোমা সম্বন্ধে একটু বলুন?
উত্তর : গ্লুকোমা একটি রোগ। এ রোগে চোখে চাপ বাড়ে। একটি লক্ষণ হলো চাপ বাড়া। চোখের একটি স্নায়ু আছে। শরীরের অনেক স্নায়ু আছে। কানে শোনার জন্য কানের স্নায়ু আছে। চোখে দেখার জন্য চোখের স্নায়ু আছে। এই স্নায়ু চোখের চাপের ওপর নির্ভরশীল। চোখের চাপ বাড়লে স্নায়ু নষ্ট হয়। চোখের চাপ বাড়লে নষ্ট হয়। চোখের ভেতর ১ দশমিক ২৫ মিলিয়ন স্নায়ু থাকে। চোখের যে গ্লুকোমা রোগ হয়, এতে স্নায়ু আস্তে আস্তে নষ্ট হতে থাকে। আর সবচেয়ে মারাত্মক বিষয় হলো স্নায়ুর আঁশ একটি যখন নষ্ট হয়, এটা চিরস্থায়ী নষ্ট হয়। কোনো চিকিৎসা দিয়েই এটা আর ঠিক করা যায় না। যেমন প্যারিফ্যারাল স্নায়ুর ক্ষেত্রে, হাতে বা পায়ের একটি স্নায়ু কমে গেলে আবার তৈরি হতে থাকে। কিন্তু চোখের স্নায়ু একবার নষ্ট হলে চিরস্থায়ী নষ্ট হয়। গ্লুকোমা রোগেই চোখের স্নায়ুটা নষ্ট করে। বয়স্কদের গ্লুকোমা ৪০ বছরের কাছাকাছি বয়সে শুরু হয়। ৩৫ বছর ৪০ বছর থেকে শুরু হয়। যাদের পরিবারে, বংশের মধ্যে গ্লুকোমা আছে, তারা গ্লুকোমার জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
প্রশ্ন : বোঝা যাবে কীভাবে গ্লুকোমা?
উত্তর : গ্লুকোমা দুই রকম। প্রাথমিকভাবে একে ন্যারো অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা বলে। আরেকটিকে ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা বলে। ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা হলো গ্লুকোমা অব সাইন। এই ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমায় রোগীর কোনো লক্ষণ হয় না।
তবে ঝুঁকির কারণ কিছু আছে। পরিবারে বলতে মা-বাবা, ভাইবোনের আছে, তাহলে হতে পারে। তাঁদের ৩৫ বছর পরেই পরীক্ষা করাতে হবে গ্লুকোমা আছে কি না এ বিষয়ে। বছরে একবার চোখ পরীক্ষা করলেও চিকিৎসককে বলতে হবে, আমার পরিবারে গ্লুকোমা আছে। আমার সমস্যাটি রয়েছে কি না দেখেন। নিজেদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ৩৫ বছরের পরেই চোখের একটি পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো।
আর যেটা ন্যারো অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা, সেটার রোগ নির্ণয় করা সহজ। এটা হলে চোখ অনেক সময় লাল হয়। চোখে ব্যথা হয়। অনেক সময় চোখের পাতা ফুলে যায়, মাথাব্যথা হয়। কোনো কোনো সময় বমি হয়, ব্যথার তীব্রতা বাড়লে, তখন রোগী চিকিৎসক দেখাতে বাধ্য। সেটার রোগ নির্ণয় তাড়াতাড়ি হয়।
তবে ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা নীরবে চলতে থাকে। তুষের আগুনের মতো। সেটা অনেক বেশি মারাত্মক। কারণ, এতে স্নায়ু নষ্ট হয়ে যায়। ৩৫ বছর পর আসলে সবারই পরীক্ষা করা উচিত গ্লুকোমা আছে কি না।
আর দুই ধরনের গ্লুকোমারই লেজার দিয়ে চিকিৎসা করা যায়। কোনো কোনো সময় চোখের চিকিৎসায় চিকিৎসক বুঝতে পারেন, তার চোখের অ্যাঙ্গেলের মধ্যে অসুবিধা আছে। কর্নিয়া ও আইরিশের মাঝখানে একটি অ্যাঙ্গেল আছে। এটি স্বাভাবিক, বড় নাকি ছোট, এটা পরীক্ষা করলে বোঝা যায়। যাদের অ্যাঙ্গেল ন্যারো, তাদের কিছু কিছু ক্ষেত্রে বোঝা যায় আক্রান্ত হওয়ার মতো কি না। যাদের ঝুঁকি রয়েছে, তাদের কিছু কিছু ক্ষেত্রে আগে থেকে লেজার দিয়ে দেওয়া যায়। লেজার দিলে তারা আর আক্রান্ত হয় না। এটা একটা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা।
আর ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমাতেও প্রাথমিকভাবে লেজার দিয়ে একটি চিকিৎসা দেওয়া যায়। এটা করলে ভালো হয়। আবার আরেকটি আছে, এসএলটি লেজার বলে। এই লেজারগুলো দিলে অনেক সময় চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে এর পরে পরীক্ষা করাতে হয়, যত দিন লেজার দিয়ে নিয়ন্ত্রণে থাকে। একবারের জায়গায় কয়েকবারও লেজার করা যায়। এর পরও নিয়ন্ত্রণ না হলে অন্য অস্ত্রোপচার করতে হয়। অন্য চিকিৎসা করতে হয়। শুরুতে লেজার দিয়ে চিকিৎসা করা যায়। তবে এটা একটু ব্যয়বহুল।