কিশোর কিশোরীদের ঘুমটা জরুরি

কিছু বিষয় মেনে চললে কিশোর-কিশোরীরা ঘুমের সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। ছবি : সংগৃহীত
ঘুম হলো মগজের খাদ্য। ঘুমের সময়, গুরুত্বপূর্ণ কিছু দেহের কাজকর্ম এবং মগজের কাজকর্ম চলে। ঘুমের সময় না ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্য খুবই বিপজ্জনক, বিশেষ করে গাড়ি চালানোর সময় তো বটেই।
না ঘুমালে চেহারা খারাপ হয়ে যায়। মন মেজাজ তিরীক্ষি হয়ে যায়, পারফরমেন্স হয় বাজে।
অনিদ্রা হলে পরিবার-পরিজন বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক ভালো যায় না। স্কুলের ফলাফলও ভালো হয় না। এমনকি খেলার মাঠেও না। যে মগজ ঘুমের জন্য ক্ষুধার্ত হয়ে থাকে, সেই মগজ ঘুম পেতে বেপোরোয়া চেষ্টা করে। দেখা গেছে, তদ্রালু হওয়াতে এবং গাড়ি চালানোর সময় ঘুমিয়ে পড়ার জন্য প্রতিবছর এক লাখ কোটি মোটর দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ঘটতে পারে জীবনে দুর্ঘটনা, আঘাত ও রোগ-শোক।
কিছু তথ্য
- ভালো থাকার জন্য, সুস্থ থাকার জন্য যেমন নিঃশ্বাসের জন্য বিশুদ্ধ বায়ু চাই, পান করার জন্য পানি চাই, খাওয়ার জন্য খাদ্য চাই, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ হলো নিদ্রাও। ভালো ঘুম হলে খাবার খেতেও ভালো লাগে, কিশোর বয়সীদের চাপ মোকাবিলাও হয়ে ওঠে সহজ।
- কৈশোরে ঘুমিয়ে পড়া ও ঘুম থেকে জেগে ওঠা দুটোরই জৈবিক নমুনা স্বাভাবিক থেকে সরে আসে। ঘুম আসে দেরিতে, জেগে উঠতেও হয় দেরিতে। তাই কিশোরদের ঘুম সাধারণত রাত ১১টার আগে আসে না।
- সুস্থ থাকার জন্য, পারফরমেন্স ভালো রাখার জন্য কিশোরদের প্রতি রাতে আট থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। বেশিরভাগ টিনএজারের যথেষ্ট ঘুম হয় না। দেখা গেছে, মাত্র ১৫ ভাগ কিশোর-কিশোরী রাতে ১০ ঘণ্টা ঘুমাতে পারে স্কুল খোলা থাকলে।
- সপ্তাহজুড়ে কিশোরদের ঘুমের ধরন হয় অনিয়মিত। সপ্তাহে ছুটির দিনগুলোতে বেশ রাত পর্যন্ত জেগে থেকে, দেরিতে ঘুমুতে যায়- এতে তাদের দেহঘড়ির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে এবং ঘুমের গুণগত মানও হয় ক্ষুণ্ণ।
- অনেক কিশোর বয়সী ছেলেমেয়ের ঘুমের সমস্যা হয়, যেগুলো অবশ্য চিকিৎসাসাধ্য। যেমন : অতি নিদ্রালুতা, অনিদ্রা ও রুটলেস লেগ সিনড্রম বা ঘুমের সময় সাময়িক শ্বাসরোধ।
পরিণতি
- কোনো কিছু শেখা, শোনা, মনোযোগ দেওয়া, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা খর্ব হয়ে যায়। অনেক সময় তাই ঘুমের সমস্যা যাদের তারা ভুলে যায়, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। যেমন : কারো নাম, সংখ্যা, স্কুলের হোম ওয়ার্ক বা জরুরি কোনো কার্যদিবস।
- মুখে ব্রণ ওঠার আশঙ্কা ও প্রবণতা বেড়ে যায়। ঘুম না হলে চেহারায় ব্রণ ভেসে ওঠে, হয় ত্বকের অন্যান্য সমস্যা ও চোখের নিচে কালি পড়ে।
- আগ্রাসী বা গ্রহণযোগ্য আচরণ দেখা দিতে পারে। বন্ধুদের সঙ্গে কলহ বিবাদ।
- শিক্ষক বা পরিবারের সদস্যদের প্রতি অসহিষ্ণু আচরণ করে।
- বেশি বেশি খেতে প্রবৃত্তি হয়, স্বাস্থ্যকর খাবার, যেমন ফাস্টফুড, মিষ্টি ও কোমল পানীয় এনার্জি ড্রিংক এসব গ্রহণের প্রবণতা বাড়ে।
- ধূমপান, মদ্যপান, এমনকি মাদকের নেশাও বেড়ে যায়।
- হতে পারে নানা অসুখ, দুর্ঘটনা, নিরাপদভাবে গাড়ি চালানো হুমকির মুখে পড়ে।
সমাধান
- ঘুমকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ভালো ঘুম হতে হবে, সুস্থ সবল, স্মার্ট দেখবার জন্য, সেজন্য জীবনে যা পরির্ব্তন করা উচিত সেটি করতে হবে।
- দিবা নিদ্রা বা ভাত ঘুম হতে পারে উপকারী। কর্মক্ষমতায় উৎকর্ষ বাড়াতে পারে। তবে এর সঠিক পরিকল্পনা চাই। যে দিবা নিদ্রা বেশি দীর্ঘ বা রাতের ঘুমের সময়ে কাছাকাছি, সেই ঘুম, নিয়মিত ঘুমের ছন্দে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
- ঘর যেন হয় ঘুমের স্বর্গ। শীতল, নিশব্দ, গাঢ় অন্ধকারে ঢাকা থাক ঘুমের ঘর। প্রয়োজনে আইশেড বা কালো পর্দা জানালায়। আবার ভোরের উজ্জ্বল আলো যেন ঘরে প্রবেশ করতে পারে, ঘুম জাগানিয়া আলো হিসেবে।
- কোনো পিল, ভিটামিন বা পানীয় সুনিদ্রার বিকল্প নয়। শোবার আগে আগে কড়া চা, কফি, সোডা, চকোলেট খেলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই এসব বিকেল থেকে পরিহার করা ভালো। ধূমপান ও মদ্যপান ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
- ঘুমের ঘাটতি হলে গাড়ি চালানো উচিত নয়, দুর্ঘটনা ঘটার জোর সম্ভাবনা থাকে।
- ঘুমুতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে উঠার একটি কর্মসূচি তৈরি করা ভালো। ছুটির দিনেও তা যেন থাকে একই রকম। একটি স্থিতিশীল নিদ্রাসূচি থাকলে নিদ্রালুতার, ক্লান্তিভাব অনেক কমবে। কারণ, এতে ঘুম দৈনন্দিন ছন্দের সমতলে চলে। তখন দেখা যাবে, ঘুমের সময় হলে, ঘুম চলে আসবে অবলীলায়।
- শোবার কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে খাওয়া, পান করা ঠিক না। শেষ মুহূর্তের জন্য হোমওয়ার্ক ফেলে রাখা ঠিক না। ঘুমাবার ঘণ্টা দুই আগে থেকে টিভি, কম্পিউটার, টেলিফোন দেখা ও ব্যবহার না করা ভালো। নীরব নিঃশব্দ শীতল ঘর, মৃদুলয়ে গান শুনতে শুনতে ঘুম এসে যাবে, টেরও পাবেন না।