সানস্ক্রিন কি আসলেই উপকারী?

রোদ থেকে ত্বককে বাঁচাতে অনেকেই ব্যবহার করেন সানস্ক্রিন। তবে সানস্ক্রিনগুলো কি আসলেই উপকারী? এই উত্তর খোঁজার আগে চলুন যুক্তরাষ্ট্রে এক বালকের কী অবস্থা হয়েছিল, জেনে নেওয়া যাক।
ট্রেইলর নামের (ছদ্মনাম নয়) ১২ বছর বয়সের ছেলেটি একদিন হঠাৎ বাইরে থেকে খেলে এসে সারা শরীরে ব্যথা অনুভব করতে থাকে, বিশেষ করে পায়ে। তাকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নেওয়া হলো। দীর্ঘ কয়েক মাস নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তাররা সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন, ট্রেইলরের ব্যথার কারণ ভিটামিন-ডি-এর অভাব। ঘটনাক্রমে আরো জানা গেল, ছোটবেলা থেকেই তার মা বাইরে বের হওয়ার আগে ট্রেইলরের সারা শরীরে সানস্ক্রিন মেখে দিতেন। আর এই সানস্ক্রিন ত্বককে সব সময় বাধা দিত যেন তা সূর্যরশ্মির সংস্পর্শে না আসে।
তবে আমরা তো জানিই, সূর্যরশ্মি হলো ভিটামিন-ডি তৈরির অন্যতম প্রধান উৎস, তাই ত্বক সূর্যরশ্মির সংস্পর্শে না আসায় ট্রেইলরের শরীর ভিটামিন-ডি তৈরি করতে পারেনি। আবার ভিটামিন-ডি হাড় গঠনে খুবই দরকারি। তাই ট্রেইলরের হাড়ের গঠন ভলো হয়নি। তার ফলস্বরূপ এই ব্যথা।
শুধু ট্রেইলর একা নয়, এ রকম শত শত উদাহরণ রয়েছে, যাদের সানস্ক্রিনের কারণে বিভিন্ন সমস্যা হয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে এক-তৃতীয়াংশ মানুষের ভিটামিন-ডি-এর অভাব রয়েছে। আর এ জন্য দায়ী কিছু কেমিক্যাল। অনেক ক্ষেত্রেই এই কেমিক্যালগুলো সানস্ক্রিনেই থাকে।
সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, সানস্ক্রিন লাভের চেয়ে ক্ষতিই করে বেশি। সানস্ক্রিনে এমন সব উপাদান আছে, যা ত্বক ও স্তন ক্যানসারের জন্য দায়ী। দেহের হরমোনের অসামঞ্জস্যতা ও বন্ধ্যত্বও ঘটাতে পারে সানস্ক্রিন। সানস্ক্রিনের একটি উপাদান বিএইচএ-কে তো পরিহারই করতে বলেছে আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। সানস্ক্রিন ডিএনএর গঠনেও ব্যাঘাত ঘটায়। সানস্ক্রিনের আরেকটি উপাদান হলো অক্সিবেনজিন, যা লাগানোর ২০ মিনিটের মধ্যেই শরীরে ফ্রি রেডিকেলস নামে বিষ ছাড়াতে শুরু করে। এই ফ্রি রেডিকেলস কোষকে ধ্বংস করে এবং আমাদের ত্বকে বয়স বৃদ্ধির ছাপ রাখতে শুরু করে। ত্বকের সৌন্দর্যরক্ষায় যে সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন, তাই যদি ত্বককে কুঁকড়ে দিয়ে বার্ধক্যে উপনীত করে তখন কেমন লাগবে বলুন?
আসলে প্রকৃত সানস্ক্রিন তো সেটাই, যেটা শুধু সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মিকেই বাধা দেবে। তবে তেমন সানস্ক্রিন পাওয়া অসম্ভব। মূলত সানস্ক্রিনগুলো ভালো বা মন্দ সূর্যের কোনো রশ্মিকেই ত্বকের সংস্পর্শে আসতে দেয় না, এতে ত্বকের উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হয়। তাই সানস্ক্রিনের বিকল্প হতে পারে জিংকসমৃদ্ধ ক্রিম। জিংক শুধু ক্ষতিকর সূর্যরশ্মিকেই বাধা দেয়। খেলোয়াড়রা মুখে যে সানব্লক ব্যবহার করেন, তা-ই হলো প্রকৃত সানস্ক্রিন। এগুলো মূলত জিংকসমৃদ্ধ উপাদান দিয়ে তৈরি। তবে মুশকিল হলো, এগুলো মাখলে মুখে সাদা রঙের পুরু প্রলেপ পড়ে থাকে, যা দেখতে খুব একটা ভালো লাগে না। জিংকের আণবিক গঠনের কারণেই এর ক্রিমগুলো পুরু। ইদানীং কিছু পাতলা জিংক ক্রিম বের হয়েছে। আমাদের দেশে এখনো এসব সহজলভ্য নয়।
অবশ্য অনেকেই বলছেন, সানস্ক্রিন নিয়ে এসব গবেষণা ব্যাপক আকারে (মেটা অ্যানালাইসিস) হয়নি। এখনই তাই দুশ্চিন্তার কারণ নেই। এদের মতে, ভালো কোম্পানির সানস্ক্রিনে মারাত্মক ক্ষতিকর কিছু থাকলে আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইউএসএফডিএ) কখনো মৌন ভূমিকা পালন করত না। আবার বিরুদ্ধবাদীরা বলছেন, সানস্ক্রিন নিয়ে বিশাল বাণিজ্যের কারণেই ইউএসএফডিএ এখনো নিষ্ক্রিয়। তবে আমাদের অত যুক্তিতর্কের মধ্যে না গিয়ে সানস্ক্রিনের যথেচ্ছ ব্যবহার না করলেই তো হলো। নিছক কিছু সময়ের জন্য বাইরে গেলে সানস্ক্রিন লাগানোর প্রয়োজন নেই। যদি অনেকটা সময় বাইরে থাকেন কিংবা ভ্রমণে বা বেড়াতে যান, তবেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। প্রতিদিন ব্যবহারের দরকার কি? আর হ্যাঁ, এই ক্রিমগুলো কাজ শুরু করতে কিছুটা সময় নেয়। তাই বাইরে বের হওয়ার অন্তত আধা ঘণ্টা আগে সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলবেন না যেন।
লেখক : রেজিস্ট্রার, শিশু বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।