কেন আমাদের চুল পড়ে?

নারীর তুলনায় পুরুষের চুল বেশি পড়ে- কথাটি সত্য। তবে চুল পড়া নারীরও একটি প্রচলিত সমস্যা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতিদিন আমাদের মাথা থেকে কিছু পরিমাণ চুল ঝরে যেতে পারে, এটা স্বাভাবিক। তবে সেটি বেশি হলে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ ডটকম জানিয়েছে চুল পড়ার ১১ কারণের কথা।
১. শারীরিক চাপ
শারীরিক চাপের কারণে অনেক সময় চুল পড়ে। যেমন : শরীরে বড় কোনো ধরনের অস্ত্রোপচার, কোনো দুর্ঘটনা, এমনকি ভাইরাসজনিত রোগের কারণেও চুল পড়তে পারে। যখন আমরা শারীরিক চাপের মধ্যে থাকি, তখন চুলচক্রের (জন্মানো, বৃদ্ধি, ঝরে পড়া) স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বাধা পায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই ধরনের শারীরিক চাপের পর তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত চুল পড়তে পারে। তবে আশার বিষয়, শরীর সুস্থ হয়ে উঠলেই চুল পড়া কমে যায়।
২. গর্ভাবস্থায়
অনেক সময় গর্ভাবস্থায় চুল বেশি পড়ে। এটিও এক ধরনের শারীরিক চাপ। সাধারণত গর্ভাবস্থা থেকে শিশু প্রসবের পর পর্যন্ত এই চুল পড়ে। তবে সাধারণত সন্তান জন্মের কয়েক মাসের মধ্যেই সমস্যাটি ঠিক হয়ে যায়।
৩. বেশি ভিটামিন ‘এ’
আমেরিকান একাডেমি অব ডারমাটোলজির তথ্য মতে, ভিটামিন ‘এ’ সাপলিমেন্ট বেশি পরিমাণ সেবন চুল পড়ার অন্যতম কারণ। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন ভিটামিন ‘এ’ গ্রহণের পরিমাণ পাঁচ হাজার আইইউ। বয়সভেদে শিশুদের জন্য ২৫০০ থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত। তাই চুল পড়া রোধে ভিটামিন ‘এ’ পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্রহণ করতে হবে, বেশিও নয়, কমও নয়।
৪. প্রোটিনের ঘাটতি
আমেরিকান একাডেমি অব ডারমাটোলজির তথ্যমতে, শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি হলে চুল পড়তে পারে। প্রোটিনের চাহিদা পূরণে মাছ,মাংস,ডিম ইত্যাদি প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
৫.বংশগত
কখনো কখনো বংশগত কারণেও চুল পড়ে আমাদের। যদি বংশের কারো মধ্যে চুল পড়ার সমস্যা থাকে তবে এটি হতে পারে।
৬. মেয়েলি হরমোন
মেয়েলি হরমোনের (ইসট্রোজেন প্রোজেস্টেরন) ভারসাম্যহীনতার কারণে চুল পড়তে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, নারীর মেনোপজ (দীর্ঘস্থায়ী মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া) হওয়ার পর চুল পড়ে।
৭. মানসিক চাপ
কখনো কখনো মানসিক চাপের কারণেও চুল পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সম্পর্কে বিচ্ছেদ, কারো মৃত্যু- এসব বিভিন্ন মানসিক চাপের সময় চুল পড়তে পারে। তাই চুল পড়া রোধে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
৮. রক্তস্বল্পতা
রক্তস্বল্পতা বা এনিমিয়া হলেও চুল পড়ে। এই সমস্যায় মেয়েরা বেশি আক্রান্ত হয়। তাই বেশি চুল পড়লে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে দেখে নিন শরীরে রক্তশূন্যতা আছে কি না। রক্ত বাড়াতে আয়রন সাপলিমেন্ট খেতে পারেন। তবে সেটা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সেবন করবেন।
৯. হাইপোথাইরয়েডিজম
দেহের থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরয়েড হরমোন কম নিঃসরণ হলে চুল পড়ার সমস্যা হতে পারে।তাই নিয়মিত থাইরয়েড গ্রন্থির পরীক্ষা করান।
১০. ভিটামিন বি-এর অভাব
চুল পড়ার আরেকটি অন্যতম কারণ ভিটামিন বি-এর অভাব। ভিটামিন বি-এর অভাব দূর করতে খাদ্যতালিকায় মাছ, মাংস, বাদাম, অ্যাভোক্যাডো ইত্যাদি রাখতে হবে।
১১. অতিরিক্ত স্টাইল
অনেকে মাত্রাতিরিক্ত ফ্যাশনসচেতন হয়ে চুল বিভিন্ন স্টাইলে বাঁধেন। এসবের কারণেও চুল পড়তে পারে। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, নিয়মিত চুলের যত্ন নিন। উল্টোপাল্টা চুল বাধবেন না। এবং নিয়মিত চুলে তেল দিয়ে ম্যাসাজ করুন।