মাসিকে ব্যথা হলে চিকিৎসা কী

ডিসম্যানোরিয়া বা মাসিকের সময় ব্যথা নারী শরীরের একটি প্রচলিত সমস্যা। এটি কখনো কখনো বেশ অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আজ ৮ অক্টোবর এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২১৬৮তম পর্বে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি ও ধাত্রী বিভাগের অধ্যাপক ডা. কিশোয়ার সুলতানা।
প্রশ্ন : ডিসম্যানোরিয়া বিষয়টি কী?
উত্তর : ডিসম্যানেরিয়া চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি ভাষা। একটি মেয়ের শুধু মাসিকের সময় যে ব্যথা হয় তাকে ডিসম্যানোরিয়া বলা হয়।
প্রশ্ন : এই ব্যথা কী কেবল মাসিকের সময় হবে?
উত্তর : মাসিকের সময় হবে। এ ছাড়া অন্য কোনো সময় হবে না।
প্রশ্ন : ডিসম্যানোরিয়ার সমস্যা সাধারণত কাদের ক্ষেত্রে হয়?
উত্তর : এটা আসলে সবার হতে পারে। ছোট বয়সে হয়তো মেয়েটির মাত্র মাসিক শুরু হয়েছে, তখন থেকে সমস্যা হতে পারে। একে আমরা প্রাইমারি ডিসম্যানোরিয়া বলি। আরেকটি ডিসম্যানোরিয়া আছে। আগে তার হয়তো সমস্যাটি ছিল না, একটু বয়স হওয়ার পর ব্যথা শুরু হলো। হয়তো একটা বাচ্চা হয়েছে, অথবা বয়স ৩০, ৩৫ বা ৪০-এর উপরে উঠে গেছে। তখন তার ডিসম্যানোরিয়া বা ব্যথা পূর্ণ মাসিক হতে পারে। সেটাকে আমরা সেকেন্ডারি ডিসম্যানোরিয়া বলি।
প্রশ্ন : যখন এই ধরনের সমস্যার মধ্য দিয়ে একটি মেয়ে যায়, সাধারণত কী ধরনের অভিযোগ নিয়ে আসে আপনাদের কাছে?
উত্তর : সে এসে বলে আমার মাসিকের সময় ব্যথা হয়। এটা তার প্রথম অভিযোগ।
প্রশ্ন : ব্যথার মাত্রাটা কতখানি থাকে?
উত্তর : এটা তার বয়সের ওপর নির্ভর করে। যেমন : কিশোরীদের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। ব্যথা শুরু হবে মাসিক শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকে এবং ২৪ ঘণ্টার মতো ব্যথাটি থাকে। ব্যথাটা এতই থাকে যে সে অন্য কোনো কাজ করতে পারে না। তার দৈনন্দিন কাজ ব্যহত হয়। হয়তো সে স্কুলে বা কলেজে যেতে পারল না ব্যথার কারণে। তবে কিছু কিছু ব্যথা আছে যেটা অল্প, সহনীয়। এ রকম অল্প ব্যথা সবারই হতে পারে। এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।
প্রশ্ন : যখন তীব্র ব্যথা হয় এটি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আপনারা কী পরামর্শ দেন?
উত্তর : প্রাইমারির ডিসম্যানোরিয়ার ক্ষেত্রে সেসব তরুণীকে আমরা কাউন্সিলিং (পরামর্শ) দেই। এটা যদি তাকে নিশ্চিত করা যায় সমস্যাটি ভালো হয়ে যাবে, তুমি কিছুদিন অপেক্ষা করো, তাহলে সে কিছুটা আশ্বস্ত হয়। নয়তো সে খুব চিন্তিত থাকে। সে একটু আতঙ্কেও থাকে যখন মাসিকের সময়টি কাছে আসতে থাকে তখন। বিশেষ করে যখন হয়তো পরীক্ষা চলে আসছে তখন তারা বলে, আমি এখন কী করব? এ ধরনের প্রশ্নগুলো আমরা অনেক পাই।
আমরা বিষয়টিকে আশ্বস্ত করি এবং ব্যথা নাশক ওষুধ দিয়ে থাকি। এনেলজেসিক জাতীয় ওষুধ দিয়ে থাকি। বলি, তোমার সমস্যাটি ভালো হয়ে যাবে, তুমি এই ওষুধটি খাবে। ওষুধ আমরা দুই তিনদিনের জন্য দিয়ে দেই।
আর সেকেন্ডারি ডিসম্যানোরিয়া অন্য রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে হয়। যেমন : জরায়ু এবং এর আশপাশের অংশের প্রদাহের কারণে এই সমস্যা হতে পারে। অথবা আরো কিছু রোগের কারণে হতে পারে। যেমন : এন্ডোমেট্রিওসিস, এডিনোমায়োসিস ইত্যাদি।
প্রশ্ন : সে ক্ষেত্রে করণীয় কী?
উত্তর : সে ক্ষেত্রে ওই রোগটিকেই চিকিৎসা করতে হবে। তাহলেই এই ব্যথাটি অনেকখানি কমে আসবে।
প্রশ্ন : প্রাইমারি ডিসম্যানোরিয়ার চিকিৎসা না নেওয়া হলে ঝুঁকি কী হতে পারে?
উত্তর : প্রাইমারি ডিসম্যানোরিয়ার কোনো ঝুঁকি নাই। ঝুঁকিটা হচ্ছে, সে স্বাভাবিক কাজটা করতে পারছে না, ওই নির্দিষ্ট দিনে এবং তার মা-বাবা অনেক চিন্তিত হয়ে যায় এ সময়। সে কারণেই আমাদের কাছে ওরা প্রধানত আসে।
ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়ার ফলে এগুলো অনেক কমে আসে। শুধু ওই সময়টার জন্য ওষুধ দেওয়া হয়। তবে সে যদি কোনো ওষুধ নাও খায় তবুও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমস্যাটি একাই ঠিক হয়ে যাবে। তারপরও অনেকে জোর করলে আমরা ওষুধ দিয়ে দেই।
প্রশ্ন : মাসিকের সময় যে ব্যথা হচ্ছে এর পেছনে কি কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে?
উত্তর : আসলে জরায়ুর মুখটা যাদের খুব বেশি আঁটসাঁট ভাবে লাগানো থাকে তাদের ক্ষেত্রে এই জিনিসটা হয়। তবে বিয়ে হলে, তার বাচ্চাকাচ্চা নিতে সমস্যা হতে পারে- এই বিষয়ে ভয়ের কিছু নেই। তবে কিছু কিছু প্রাইমারি ডিসম্যানোরিয়ার সাথে এন্ডোম্যাট্রিওসিস রোগের সম্পর্ক আছে। সেই ক্ষেত্রে আমরা তার আল্ট্রাসোনোগ্রাম করলেই সমস্যাটি বুঝতে পারি। এন্ডোম্যাট্রিওসিসের কারণে সমস্যা হলে চিকিৎসাটা ওই রোগের করা হবে।
প্রশ্ন : সতর্ক না থাকলে সেকেন্ডারি ডিসম্যানোরিয়ার ক্ষেত্রে কী কী ধরনের ঝুঁকি হতে পারে?
উত্তর : উপসর্গ হিসেবে যখন একজন রোগী বলে যে, আমরা ব্যথা ছিল না, ইদানীং ব্যথা হচ্ছে। তখন তাকে আমরা কিছু পরীক্ষা করি। যদি কোনো রোগ পাওয়া যায় তখন সে হিসেবে আমরা চিকিৎসা দেই। যেমন অ্যান্টিবায়োটিক দেব। তারপর যদি ফ্রাইব্রয়েড নামক টিউমারের কারণে ডিসম্যানোরিয়া হয়, এর চিকিৎসা করলেই ভালো হয়ে যায়।
প্রশ্ন : পরামর্শ কী থাকবে একটি মেয়ের জন্য যাদের এই ধরনের সমস্যা রয়েছে?
উত্তর : প্রথম পরামর্শ হচ্ছে প্রাইমারি ডিসম্যানোরিয়া যাদের হয় তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তারা ওই সময়ে ব্যথানাশক ওষুধ খাবে। আর ব্যথা যদি খুব তীব্র হয়, অসহনীয় হয়, আমরা কিছু পরীক্ষা তাদের করি।
আর সেকেন্ডারি ডিসম্যানোরিয়ার ক্ষেত্রে ব্যথা যদি শুরু হয় তারা সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবে। কারণ এটা একটা উপসর্গ। ভেতরে যদি আর কোনো রোগ থাকে সেটাকে বের করতে হবে এবং সেই হিসেবেই তাকে চিকিৎসা নিতে হবে। কারণ সময়মতো চিকিৎসা না নিলে রোগটি জটিলতার দিকে যাবে।