কাঁধের ব্যথায় কী করবেন?

কাঁধের ব্যথা খুব প্রচলিত একটি সমস্যা। চিকিৎসা করলে এই ব্যথা সম্পূর্ণ নিরাময় হওয়া সম্ভব। আজ ২৫ আগস্ট, এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২১৩১তম পর্বে কাঁধের ব্যথার কারণ ও তার প্রতিকার বিষয়ে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলেশন বিভাগের কর্মরত ফিজিক্যাল মেডিসিন স্পেশালিস্ট ডা. এ কে আজাদ।
প্রশ্ন : সাধারণত কী কী কারণে কাঁধের ব্যথা হয়?
উত্তর : প্রধানত যেসব কারণ নিয়ে রোগীরা আমাদের কাছে আসে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে আঘাতজনিত কারণ। প্রলংইন মোবিলাইজেশন (বিশেষ করে প্লাস্টারজনিত কারণে)। স্ট্রোকের রোগীরা, যারা প্যারালাইজ হয়ে যায়, তারা এই ব্যথা নিয়ে আসে। টেন্ডিনাইটিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিস (হাড়ের ক্ষয় যখন হয়)। তার পর ডায়াবেটিস মেলাইটাস যাদের থাকে, তারা এই ব্যথা নিয়ে আসে। যক্ষ্মা রোগীরা কাঁধে ব্যথা নিয়ে আসে। ফুসফুসের ক্যানসারের রোগীরা কাঁধে ব্যথা নিয়ে আসে। কার্ডিয়াক সার্জারির পরে দেখা যায় কাঁধে ব্যথা নিয়ে আসে। এই কারণগুলো আমাদের দেশে সাধারণত বেশি দেখা যায়।urgentPhoto
প্রশ্ন : কী কারণে ব্যথা হচ্ছে, সেটি বোঝার কোনো উপায় রয়েছে কি না?
উত্তর : আসলে সাধারণ মানুষের জন্য ব্যথার কারণ বোঝা একটু কঠিন। রোগী যদি বোঝে তার হাত নাড়াতে পারছে না, উঠাতে পারছে না অথবা অন্যের সহযোগিতা নিয়েও পারছে না—তখন বুঝতে পারে, আমাদের দেশের যেটা বেশি প্রচলিত, সেটা হলো ফ্রোজেন শোল্ডার। সেভাবে বোঝা যায় তার ফ্রোজেন শোল্ডার হয়েছে। তার যদি ঘাড় থেকে ব্যথা আসে, তাহলে ঘাড়ে ব্যথা আসবে।
প্রশ্ন : এ ব্যথাটা ঠিক কীভাবে শুরু হবে? এবং কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত?
উত্তর : যখন ব্যথা হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই রোগীরা কিছু নিজেরা ওষুধ খায় বা গরম ছ্যাঁক দেয়। যখন ভালো না হয়, তখন আসলে দ্রুতই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। কারণ, যখন ফ্রোজেন শোল্ডার হয়, এটা গতিশীল একটা রোগ। ধীরে ধীরে বাড়ে, একপর্যায়ে রোগী হাত নাড়াতে পারে না। তাই আমি মনে করি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীদের চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
প্রশ্ন : কাদের ক্ষেত্রে ফ্রোজেন শোল্ডার হওয়ার আশঙ্কা বেশি?
উত্তর : ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগী এই রোগ নিয়ে আসে। আর নন-ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রেও ২ থেকে ৩ শতাংশ এ ধরনের ব্যথা নিয়ে আসে। তার পর যাদের রিউমাটোয়েড আর্থ্রাইটিস বা এনকাইলজিং স্পোনডাইলাইটিস আছে—এ ধরনের রোগীরা এই ব্যথাগুলো বেশি নিয়ে আসে।
তা ছাড়া যাদের বয়স ৪০ বছরের ওপরে, তাদের ক্ষেত্রেও এটি বেশি দেখা যায়।
প্রশ্ন : অনেক সময় দেখা যায়, রোগী হাত উঠাতে পারছে না। এটি আসলে কেন হয়?
উত্তর : রোগীদের যখন ঘাড়ে ব্যথা হয়, তখন ডিজেনারেটিভ পরিবর্তন হয়ে ব্যথা হয়। আবার অনেক সময় ডিস্ক প্রোলাপস হয়ে ব্যথা হয়। ডিজেনারেটিভ পরিবর্তন হলে যে নার্ভ হাতের দিকে এসেছে, নার্ভের গোড়ায় যখন হাড় ক্ষয় হওয়ার কারণে নার্ভের ওপর চাপ পড়ে, তখন হাতজুড়ে ব্যথা হয়। আর যাদের ক্ষেত্রে ডিস্ক প্রোলাপস হয়, তাদেরও একই অবস্থা হয়। অর্থাৎ ওখানে যখন নার্ভ রুট কমপ্রেস হয়, তখন সম্পূর্ণ হাতেই ব্যথা করে। এবং ব্যথার কারণে রোগীরা আর হাত ওঠাতে পারে না। সে ক্ষেত্রে দেখা যায়, অন্য কেউ সহযোগিতা করলে হাত ওঠাতে পারে। আর ফ্রোজেন শোল্ডারের সঙ্গে এর একটা পার্থক্য হচ্ছে, ফ্রোজেন শোল্ডারের রোগী নিজে এবং অন্যের সহযোগিতায় কোনোভাবেই হাত ওঠাতে পারে না। অন্যান্য কারণের জন্য হলে অন্যের সহযোগিতায় হাত ওঠাতে পারে।
প্রশ্ন : ফ্রোজেন শোল্ডারের চিকিৎসা আপনারা কীভাবে দিয়ে থাকেন?
উত্তর : ফ্রোজেন শোল্ডারের চিকিৎসার জন্য আসলে রোগীরা যখন আসে, প্রথমেই উচিত তাকে নিশ্চিত করা যে, কোনো চিকিৎসা না নিলেও দুই থেকে আড়াই বছর পর এমনি ভালো হয়ে যায়। কাজেই তাকে প্রথমে নিশ্চিত করা উচিত, আপনার এটা এ রকম কোনো রোগ নয়। তার পর যে কাজটা করি, ব্যথা যেহেতু আছে, ব্যথার ওষুধ তো তাকে দিতেই হবে। তার পর যেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ফ্রোজেন শোল্ডারের জন্য সেটা হলো, এক্সারসাইজথেরাপি। এখানে দুটো-তিনটা পার্যায় আছে। ফ্রোজেন ও রিকোভারি স্টেজ। পর্যায় বুঝে চিকিৎসক এক্সারসাইজ দেবেন। ব্যায়ামটা অনেক জরুরি। দেখা যায়, রোগীর ব্যথা অনেক সময় চলে যায়, তবে হাত সে ওঠাতে পারছে না; নাড়াতে পারছে না। কাজেই তাকে ব্যায়ামের গুরুত্ব দিয়ে ব্যায়াম করতে হবে। ব্যায়াম না করলে সে হাত নাড়াতে পারবে না। তাই ব্যথা কমে গেলেও সে ভালো বোধ করবে না। আমরা আরেকটি কথা বলে থাকি, বাড়িতে হট ব্যাগ দিয়ে গরম ছ্যাঁক দিতে। তাতে যদি কাজ না হয়, আমরা ফিজিওথেরাপি করার পরামর্শ দিই। আলট্রাসাউন্ডথেরাপি এখানে খুব ভালো কাজ করে। যেহেতু এখানে এডেশন হয়ে যায়। আলট্রাসাউন্ডথেরাপি এডেশন থেকে কিছুটা মুক্তি দেয়।
প্রশ্ন : রোগীকে কত দিন ফলোআপে রাখেন উন্নতি করছে কি না দেখার জন্য?
উত্তর : প্রাথমিকভাবে যখন ব্যথার ওষুধ দেওয়া হয়, তখন ময়েস্ট কমপ্রেশন নিতে বলি। প্রাথমিকভাবে সপ্তাহ দুই-একের জন্য ফলোআপে রাখি। এর পর ঠিক না হলে থেরাপির জন্য পরমর্শ দিই। এতেও না কমলে আরেকটু অগ্রবর্তি পর্যায়ের চিকিৎসার কথা চিন্তা করি। শতভাগ সুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি এখানে।
প্রশ্ন : এ ছাড়া অন্যান্য কারণ, যেমন—ডিস্ক প্রোলাপস বা রিজেনারেটিভ ম্যানেজমেন্ট এগুলোর ক্ষেত্রে কারণ কী থাকে?
উত্তর : যখন রোগীরা কাঁধে ব্যথা নিয়ে আসে, প্রথমে রোগ নির্ণয় করতে হবে। সেটির জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা লাগবে। ক্ষেত্রবিশেষ ডিস্ক প্রোলাপস মনে করলে এমআরআই করে থাকি। আর সারভাইকল স্পনডাইলোসিসে একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর সবাই ভুগতে থাকে। তাদের ক্ষেত্রে ময়েস্ট কমপ্রেশনের কথা বলি। এ ছাড়া কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে বলি, যাতে করে বারবার এই ব্যথা না আসতে পারে। যেসব কারণের জন্য ব্যথা বেড়ে যাচ্ছে বা রোগী বেশি ভুগছে, সে কারণগুলো বের করে সেটা না করার নিয়ম মেনে চলতে হবে। কীভাবে বসবে, কীভাবে চলবে, কী ধরনের বালিশে শোবে, কী রকম ওজন নেবে—এগুলো মেনে চলতে হবে।