ভিটামিন ‘ডি’ ঠিকমতো পাচ্ছেন তো?

ভিটামিন ‘ডি’ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন। তবে এদেশের প্রচলিত খাবারে সাধারণত ভিটামিন-ডি তেমন পাওয়া যায় না। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫৯৭তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. জাহাঙ্গীর আলম। বর্তমানে তিনি স্কয়ার হসপিটালের মেডিসিন বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : ভিটামিন ডি-র উৎস কী? আমরা কোথা থেকে পাব?
উত্তর : উৎস প্রধানত সূর্যের আলো। সূর্যের আলো অতিবেগুনি রশ্মি, যেটা বি ক্যাটাগরি আছে, যেটা সূর্য থেকে চামড়ার ওপরে যদি পড়ে, চামড়ার নিচে যে চর্বি আছে, সেটি রূপান্তরিত হয়ে লিভারে যায়। লিভারে একটি পরিবর্তন হয়, কিডনিতে একটি পরিবর্তন হয়, শেষে গিয়ে অ্যাকটিভ ফর্ম (কার্যকরী বিষয়) হয়।
প্রশ্ন : সূর্যের আলো কি যেকোনো সময়ের?
উত্তর : না, সূর্যের আলো বেশি হলো শীতকালে সকাল ১০টা থেকে ২টার মধ্যে। আর গরমকালে সাধারণত সকাল ৮টা থেকে ২টার মধ্যে। আপনি রোদে বের হলেন, দেখবেন যে ছায়াটা কতটুকু আছে? আপনার ছায়া যদি আপনার চেয়ে ছোট থাকে, তাহলে ধরে নিতে হবে এই সূর্যের আলো যেটি আপনার ওপর পড়বে, এতে অতিবেগুনি রশ্মি বি আছে। আর এটা যদি সমান হয়ে যায় বা বড় হয়ে যায়, এই সূর্যের আলো বরং আপনার জন্য ক্ষতিকর। সুতরাং এটা হিসাব করে নিতে হয়।
প্রশ্ন : আপনি যেই সময়ের রোদের কথা বললেন, বর্তমান জীবনব্যস্ততার জন্য তো আমরা সেই রোদ পাচ্ছি না। তাহলে?
উত্তর : হ্যাঁ। এই রোদ তো আপনি পাচ্ছেন না। তাহলে ভিটামিন ডি-র অভাব আপনার শরীরে হয়ে গেল।
প্রশ্ন : তাহলে বিকল্প কোনো মাধ্যম নেই?
উত্তর : বিকল্প মাধ্যম আছে। এটি একটি প্রচলিত সমস্যা। দেখুন সারা পৃথিবীতে ভিটামিন নিয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। ধূমপান, ওজন এগুলো হলো জনস্বাস্থ্যের সমস্যা। আর তৃতীয় সমস্যা হলো ভিটামিন ডি-র অভাব। কেননা আমরা এখন ইনডোর কাজে বেশি জড়িত। প্রত্যেক দেশেই আমাদের কাজকর্ম হলো সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। সুতরাং আমরা সূর্যের দেখা পাচ্ছি না। আর আমাদের প্রচলিত খাবারগুলোতে ভিটামিন ডি নেই। সুতরাং ইতিহাস নিলেই আমরা বুঝতে পারি যে এই রোগীর ভিটামিন ডি-র অভাব শুরু হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। এগুলো আমাদের দেশে পাওয়া যায়। পরীক্ষা করে যদি দেখি ডি-র অভাব আছে, তাহলে এগুলোকে ঠিক করে দিই। এরপর উৎসাহিত করার চেষ্টা করি সূর্যের আলো নেওয়ার জন্য। সূর্যের আলো থেকে যে ভিটামিন ডি তৈরি হচ্ছে, সেটা প্রাকৃতিক। এটি দীর্ঘস্থায়ী। এটি বিষাক্ত নয়। এটা আপনার প্রয়োজনমতো তৈরি হবে এবং প্রয়োজনমতো বন্ধ হয়ে যাবে।
প্রশ্ন : একজন সুস্থ মানুষের ভিটামিন ডি পেতে এই সকালের রোদে কতটুকু সময় থাকা দরকার?
উত্তর : এটা নির্ভর করে সূর্যের ইনক্লাইলেশনের ওপরে। রঙের ওপরে। স্থূলতার ওপরে এবং আপনি কতক্ষণ থাকছেন এর ওপর বিষয়টি নির্ভর করে। স্থূল ব্যক্তি, গায়ের রং ফর্সা নয় তাদের একটু সময় বেশি লাগে। সাধারণত ১০ থেকে ১৫ মিনিট যদি শরীরের ২০ ভাগ জায়গায় আলো পায়, সেটা হলো মুখ, ঘাড়, হাত এবং পা। এই সূর্যের আলোতে যদি আপনার চামড়াটা একটু কালচে বর্ণের হয়ে যায়, আপনি ধরে নেবেন ভিটামিন ডি ১৫ হাজারের মতো তৈরি হয়েছে। তবে যদি পিগমেন্টেশন বেশি থাকে, আপনার স্থূলতা বেশি থাকে তাদের আরো বেশি সময় লাগে। এইখানে অনেক লোক রয়েছেন যারা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি সহ্য করতে পারেন না। এ ছাড়া কিছু রোগও আছে, যেগুলো বেড়ে যায়। তাদের জন্য কী করতে হবে? তাদের জন্য তো আমরা ঠিক করে দিই। এরপর যে ডোজটা আছে, একটি রোগীর সাধারণত ছয়শ থেকে আটশ লাগছে। এর জন্য আমরা ওষুধ দিই। এই ওষুধগুলো বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। ঠিক করার ডোজগুলোও পাওয়া যাচ্ছে। ব্যবস্থাপনা করার ডোজগুলোও পাওয়া যাচ্ছে।