মুখ দিয়ে লিখে জিপিএ-৫ পেলেন লিতুন জিরা

যশোরের মণিরামপুরের লিতুন জিরা। জন্ম থেকেই তার হাত-পা নেই। তবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাকে থামাতে পারেনি। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রমের মাধ্যমে এবার এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি। জন্মগতভাবে হাত-পা না থাকলেও মুখ দিয়ে লিখে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন লিতুন। গতকাল বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুরে ফল প্রকাশের পর লিতুন জিরা ও তার পরিবার আনন্দে আত্মহারা।
মণিরামপুর উপজেলার গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল লিতুন জিরা। এর আগেও তিনি পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করেছিলেন। প্রাথমিকে বৃত্তি পেয়েছিলেন। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কারও জিতেছেন। শুধু পড়ালেখাই নয়, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও তিনি নানা সাফল্য দেখিয়েছেন।
লিতুন জিরা মণিরামপুর উপজেলার সাতনল খানপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান ও জাহানারা বেগমের মেয়ে। তাদের দুই সন্তান- বড় ভাই ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। বাবা হাবিবুর রহমান কলেজ শিক্ষক। তবে তার কলেজটি এখনও এমপিওভুক্ত হয়নি। অভাবের মাঝেও বাবা-মা কখনও মেয়ের স্বপ্ন থামিয়ে দেননি।
লিতুন শুধু স্কুলের পড়ালেখাতেই নয়, উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতায়ও সাফল্য পেয়েছেন। দুই বছর উপজেলা মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রচনা প্রতিযোগিতায় জেলা পর্যায়ে প্রথম হয়েছেন এবং জাতীয় শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতায় গোল্ড মেডেল পেয়েছেন।
এখন লিতুন জিরার সামনে কলেজ জীবন। সেখানেও লড়াই করতে হবে নানা প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে। তবে লিতুন জিরা মনে করেন, চেষ্টা করলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। লিতুন ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে চান।
লিতুন জিরার মা জাহানারা বেগম আবেগভরা কণ্ঠে বলেন, ‘আমার মেয়ে লিতুন জিরা যখন জন্ম নেয়, তখন থেকেই তার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তা করতাম। ভাবতাম, যার দুই হাত-পা নেই, সে বড় হয়ে কী করবে, কীভাবে জীবন চলবে? এসব ভাবনায় অনেক রাত নিঃশব্দে কেঁদেছি। মনে হতো, হয়তো এই সন্তান কখনও স্বাভাবিক জীবনে দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমার মেয়ের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ, চেষ্টা আর মেধা আমাদের সব ভয় দূর করে দিয়েছে। আজ সেই অজানা আশঙ্কা আশার আলোয় পরিণত হয়েছে।’
লিতুন জিরার বাবা কলেজ শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি যে কলেজে পড়াই, দীর্ঘ ১৯ বছরেও সেটি এমপিওভুক্ত হয়নি। তারপরও ছেলেমেয়েদের কখনও অভাব বুঝতে দেইনি। লিতুন যখন ছোট ছিল, তখন থেকেই তাকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে কাঁদা-মাটির রাস্তা পেরিয়ে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে স্কুলে নিয়ে গিয়েছি। সে সময়ের সেই পরিশ্রম আজ ফল দিচ্ছে। এসএসসি পরীক্ষায়ও সে আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো ফলাফল পেয়েছে। আমরা গর্বিত, আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ।’