উপাচার্য নাসিরের পদত্যাগে গোপালগঞ্জে শিক্ষার্থীদের উল্লাস

গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) সাধারণ শিক্ষার্থীদের টানা ১২ দিনের আন্দোলনের মুখে উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন পদত্যাগ করেছেন। এ খবরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উল্লাসে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। এ যেন বাঁধভাঙা আনন্দ। সময় যত গড়াচ্ছে শিক্ষার্থীরা ততই বেশি ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে নেচে গেয়ে রং মেখে উল্লাস করছে।
শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যা ৬টা থেকে উল্লাস শুরু করে। রাত সাড়ে ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আনন্দ-উল্লাস চলছিল।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভিসির পদত্যাগের খবর পেয়ে তারা ক্যাম্পাসে আনন্দ উল্লাসে মেতেছে। তাদের উল্লাস চলতে থাকবে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত কোনো চিঠি এখনো এসে পৌঁছায়নি তাদের কাছে। এটা এসে পৌঁছালেই তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেবে বলে জানিয়েছে।
গত ১১ সেপ্টেম্বর আইন বিভাগের ছাত্রী ফাতেমা-তুজ জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় উঠলে ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে। উপাচার্যের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি ও নারী সংক্রান্ত অভিযোগে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষার্থীরা ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। গত ২১ সেপ্টেম্বর উপাচার্যের সমর্থক বাহিনী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে।
রোববার রাত ৯টায় অসুস্থতার কথা বলে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ বাংলো থেকে পুলিশ পাহারায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। এরপর আজ সোমবার বিকেলে তিনি সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির দপ্তরে গিয়ে সাক্ষাৎ করে পদত্যাগের ইচ্ছে ব্যক্ত করেন। পরে তিনি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুল্লাহ আল হাসান চৌধুরীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
এর আগে গতকাল রোববার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) গঠিত তদন্ত কমিটি উপাচার্যের পদ থেকে অধ্যাপক খোন্দকার নাসির উদ্দিনকে প্রত্যাহারের সুপারিশ করে।
ওই সুপারিশ সম্পর্কে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ গতকাল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেয়ে বিলম্ব না করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক খোন্দকার নাসির উদ্দিনের বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিধায় আমরা দ্রুত রিপোর্ট দেওয়ার জন্য তদন্ত কমিটিকে বলেছি। কমিটি আজই (রোববার) আমার হাতে রিপোর্ট দিয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমরা ব্যবস্থা গ্রহণের অথরিটি নই। আমরা সুপারিশ করতে পারি। সেটাই আমরা করেছি। এখন তাঁর (অধ্যাপক খোন্দকার নাসির উদ্দিন) বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে।’
ইউজিসি চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘আমরা গত ২৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়েছি। পরের দিনই ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আলমগীরকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেই। সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত শেষে রোববার কমিটি রিপোর্ট পেশ করেছে।’
অনিয়ম ও দুর্নীতির নানা অভিযোগে উপাচার্য অধ্যাপক খোন্দকার নাসির উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে আন্দোলন করে যাচ্ছে। তীব্র আন্দোলনের মুখে উপাচার্যের অনিয়মের ঘটনা তদন্ত করে সুপারিশ পেশ করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইউজিসিকে দায়িত্ব দেয়। তদ্ন্ত শেষে ইউজিসি রোববার সুপারিশসহ প্রতিবেদন পেশ করে।