৪০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ : আল আকাবা সমিতির পরিচালকদের বিরুদ্ধে মামলা

গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা অর্জন ও মানিলন্ডারিং অপরাধে আল আকাবা বহুমুখী সমবায় সমিতির পরিচালকদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি।
গতকাল বুধবার (২০ আগস্ট) মামলাটি দায়ের করা হয় বলে জানিয়েছেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান।
জসীম উদ্দিন জানান, ব্যাংকের চেয়ে উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতারণা করে ৪০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় আল আকাবা বহুমুখী সমবায় সমিতির পরিচালকদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা করেছে সিআইডি। জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ থানায় সমবায় কার্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে গড়ে ওঠা এসব সমিতির ব্যানারে পরিচালনা করা হয় ব্যাংকিং কার্যক্রম।
ভুক্তভোগী গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতারণামূলকভাবে আনুমানিক ৪০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে মানিলন্ডারিংয়ের অপরাধ প্রাধমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মাদারগঞ্জ আল আকাবা সমবায় সমিতির পরিচালক ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জামালপুর জেলাধীন মাদারগঞ্জ থানার মামলা নং-১৪, তারিখ-২০/০৮/২০২৫ ইং, ধারা- মানিলন্ডারিং আইন ২০১২ (সংশোধনী-২০১৫) এর ৪(২)(৪) মামলা দায়ের করে সিআইডি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানান, জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলা সমবায় কার্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন নামের সমবায় সমিতি। এসব সমিতির মধ্যে উল্লেখ যোগ্য স্থানে রয়েছে মাদারগঞ্জ আল-আকাবা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড। উক্ত সমিতিটি জামালপুর জেলার বিভিন্ন থানা ও পার্শ্ববর্তী জেলার বিভিন্ন এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতো। ব্যাংকের চেয়ে বেশি হারে মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রায় ১৩-১৪ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা সংগ্রহ করে। প্রতি লাখে মাসে ১২০০-১৫০০ টাকার মুনাফার কথা বলে অর্থ সংগ্রহ করে শুরুতে সীমিত পরিসরে লাভ প্রদান করলেও পরবর্তীতে তা বন্ধ করে দিয়ে সমিতির মালিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস তালাবদ্ধ করে গা-ঢাকা দেয়।
মানিলন্ডারিংয়ের অনুসন্ধানকালীন জানা যায়, প্রায় ১৩-১৪ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে মানিলন্ডারিং করে সমিতির পরিচালকরা তাদের নিজ নিজ নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলে উক্ত অর্থে ৩১১৩ শতাংশ সম্পত্তি ক্রয় করে। এসব সম্পত্তির মধ্যে জামালপুর জেলার সদর থানাধীন গহেরপাড়া মৌজায় প্রায় ১৫ একর জমির ওপর আলফা অটো ব্রিকস নামে একটি ইট ভাটা, গাজীপুর দক্ষিণ সালনা মৌজায় প্রায় ৩৫০ শতাংশ জমির উপর আলফা ড্রেসওয়ার নামে একটি গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে। তাছাড়া আলফা ডেভলপার, আলফা ড্রেসওয়ারের নামে বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পে ৯টি প্লট রয়েছে। বাকি সম্পত্তিগুলো ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও জামালপুর জেলার বিভিন্ন লোকেশনে রয়েছে।
মানিলন্ডারিংয়ের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ সিনিয়র স্পেশাল জজ, জামালপুর দায়রা জজ আদালত, জামালপুর উক্ত ভূসম্পত্তির স্থাপনা, প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য অবকাঠামোর ওপর ক্রোকাদেশ প্রদান করেন।
এছাড়াও ইতোপূর্বে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিদেশ গমনাগমন রোধের জন্য বিজ্ঞ আদালত আদেশ প্রদান করেন। নিবিড় তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।