রেলওয়ের সাবেক ডিজিসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

অকার্যকর ও অনুপযোগী ডেমু ট্রেন কেনার অনুমোদন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ৫৯৮ কোটি ৮৪ লাখ ১৭ হাজার টাকার ক্ষতির অভিযোগে বাংলাদেশ রেলওয়ের সাবেক মহাপরিচালক মো. তোহিদুল আনোয়ার চৌধুরীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের উপপরিচালক (গণসংযোগ) আকতারুল ইসলাম। গতকাল মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা–১ এ মামলাটি করেন সহকারী পরিচালক রাজু আহমেদ।
মামলার বাকি আসামিরা হলেন— প্রকল্প পরিচালক ও সাবেক প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী (উন্নয়ন) মো. ইফতিখার হোসেন, সাবেক প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী (চট্টগ্রাম) মো. আক্তারুজ্জামান হায়দার, সাবেক উপসচিব (পরিকল্পনা বিভাগ) বেনজামিন হেমব্রুম, সাবেক উপপ্রধান অঞ্জন কুমার বিশ্বাস, সাবেক উপসচিব আশরাফুজ্জামান, সাবেক উপপরিচালক (বাস্তবায়ন, নিরীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ) মো. মুমিতুর রহমান।
মামলার এজাহারে বলা হয়, দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট ২০২৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর রেলভবনে অভিযান চালিয়ে প্রকল্প সংক্রান্ত সমাপ্তি প্রতিবেদন, অডিট আপত্তি, স্পেসিফিকেশন, চুক্তিপত্রসহ প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে।
তাতে দেখা যায়, ২০১১ সালের ১১ জুলাই ২০ সেট ডিজেল-ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট বা ডেমু ট্রেন কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয় ও একটি চীনা প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
অথচ প্রকল্পের জন্য আবশ্যিক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা (কারিগরি ও আর্থিক) যথাযথভাবে সম্পন্ন করা হয়নি।
২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত প্রেক্ষাপটে ডেমু ট্রেনের উপযোগিতা যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট পাঁচ কর্মকর্তা চীন সফর করেন। কিন্তু সফর শেষে তারা দেশের আবহাওয়া, রেল অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার বিষয়টি সঠিকভাবে জানায়নি; বরং প্রকল্পটিকে লাভজনক ও কার্যকর বলে মিথ্যা তথ্য প্রদান করেন বলে নথি বিশ্লেষণে ধরা পড়ে।
ফলে ডেমু ট্রেনের কোচে প্রশস্ত জানালার অভাব, লোকোমোটিভ বারবার বিকল হওয়া, টয়লেটের সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন না থাকায় যাত্রীদের ঝুঁকি ও ভোগান্তি তৈরি হয়। এছাড়া ক্রয় চুক্তিতে প্রযুক্তি হস্তান্তর, সফটওয়্যার, মডিউল, ওয়ারেন্টি ও যন্ত্রাংশ সরবরাহের সুস্পষ্ট শর্ত না থাকায় লোকোমোটিভ প্রায়ই অকেজো হয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে রক্ষণাবেক্ষণে প্রায় দুই কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয় হলেও ট্রেন সচল রাখা সম্ভব হয়নি। সব মিলিয়ে প্রকল্পটি আর্থিক ও অর্থনৈতিক, উভয় দিক থেকেই অনুপযোগী ও লোকসানি প্রমাণিত হয় বলে বলা হয় এজাহারে।
এজাহারে বলা হয়, আসামিরা যোগসাজশে প্রতারণা, জালিয়াতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপব্যয় করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। তদন্তে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে বলে দুদক জানিয়েছে।