নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ইসির আশ্বাসে সন্তুষ্ট বিএনপি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনে অতিরিক্ত সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির আশ্বাসে সন্তষ্টি প্রকাশ করেছে বিএনপি।
আজ রোববার (১৭ আগস্ট) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘নির্বাচনি প্রস্তুতি যেটা নেওয়া দরকার তারা (ইসি) যথাযথভাবে নিচ্ছে। এখনও কিছুটা কনসার্ন আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে রয়েছে। পুলিশের ভূমিকা অপেক্ষাকৃত দুর্বল। কমিশন থেকে যেটা বলা হলো—নির্বাচনের সময়ে যদি প্রয়োজন হয় আরও বেশি সংখ্যক সেনা সদস্য মোতায়নের ব্যাপারে অনুরোধ করা হবে। কাজেই ওই বিষয়েও আর খুব বেশি দুশ্চিন্তার কোনো কারণ দেখছি না।’
এর আগে গত সোমবার নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থা’র সংজ্ঞায় ‘সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী’ যুক্ত করার প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে ইসি। আইনে এটি যুক্ত হলে তিন বাহিনীকে নির্বাচনি দায়িত্ব দিতে আলাদা কোনো আদেশের প্রয়োজন হবে না। এ ছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও পুলিশের মতো ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন এবং বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবেন।
আজ রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সিইসির সঙ্গে বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের বৈঠকেও নির্বাচনকালীন আইশৃঙ্খলার বিষয়টি প্রাধান্য পায়। বৈঠক নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে আরও অংশ নেন বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ।
বৈঠক শেষে নজরুল ইসলাম খান ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশের যে ভূমিকা অপেক্ষাকৃত দুর্বল হয়েছে, এটা আমরা সবাই জানি কেন হয়েছে। এর আগের যে সরকার ছিল তারা তাদেরকে এমনভাবেই ব্যবহার করেছে যে, তারা নিজেরাই তাদের আচরণের জন্য লজ্জিত এবং সেজন্যই এই দুর্বলতা। কিন্তু এটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। নির্বাচন আরও কয়েক মাস দেরি আছে। কাজেই এই সময়ের মধ্যে এটারও কিছু পরিবর্তন হবে।’
‘আরেকটা হলো সেনাবাহিনী এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সহযোগিতা করছে। নির্বাচন কমিশন থেকে যেটা বলা হলো, নির্বাচনের সময়ে যদি প্রয়োজন হয় তারা আরও বেশি সেনা সদস্য মোতায়নের ব্যাপারে অনুরোধ করবেন। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাগুলোর জন্য কোস্ট গার্ড এবং নেভি যাতে দায়িত্ব পালন করে, সে ব্যাপারে তারা চেষ্টা করবে। তারা অনুরোধ করবেন সরকারকে এবং আমরা জানি, নির্বাচন কমিশন কোনো অনুরোধ করলে সরকারকে সেটা রাখতে হয়’, যোগ করেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা যারা রাজনীতি করি, রাজনৈতিক দলগুলো যারা নির্বাচন করে তাদেরও দায়িত্ব আছে। আমাদেরও চেষ্টা থাকতে হবে, যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো অবনতি না হয়। যাতে আমাদের দলের নেতাকর্মী, সদস্য, শুভানুধ্যায়ী ও সমর্থকরা যেন শান্তিপূর্ণভাবে উৎসা- উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে ভোটে অংশগ্রহণ করে। এটা আমরা এবং অন্যান্য যত রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, সবারই একই মনোভাব থাকবে। ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আমরা দেখি না।’
‘না ভোট আমাদের প্রস্তাব নয়’
না ভোট বিএনপির কোনো দাবি ছিল না, এটি কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে হয়েছে জানিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘না’ ভোটের বিষয়ে আমরা প্রস্তাব করি নাই। ‘না’ ভোট আমাদের দাবির ভিত্তিতে হয়নি। কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তির সুপারিশে হয়েছে। এখন যেটা করা হচ্ছে সেটাতে আমাদের কোনো মতামত নেই।
নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, এটা ১/১১ সরকারের সময়ে ইন্ট্রোডিউস করা হয়েছিল। নিয়ম হলো যে যখন নির্বাচিত সরকার থাকে না বা ইন বিটুইন টু পার্লামেন্ট সেশনস রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ করে আইন করতে সেরকম করে আইন করা হয়েছিল ‘না ভোটের’ বিধান এবং একমাত্র ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই না ভোটের বিধানটা কার্যকর ছিল। কিন্তু আপনারা জানেন, না ভোট খুব একটা পড়ে না আমাদের দেশে। এটা আমাদের কারও দাবির ভিত্তিতে হয় নাই।
আসন ভাগাভাগির বিষয়ে বিএনপির অন্যতম এই নীতি-নির্ধারক বলেন, আসন ভাগাভাগি নিয়ে এখনও আমাদের দলের ভেতরে আলোচনা হয়নি। আসন নিয়ে আলোচনা হবে তফসিল ঘোষণার পরে।