গাজীপুরে সাংবাদিক হত্যায় মামলা, আটক ৫

চাঁদাবাজি নয়, নারীঘটিত বিষয়ে সন্ত্রাসী হামলার ভিডিওচিত্র ধারণ করায় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাতে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) এডিসি রবিউল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
সাংবাদিক তুহিন হত্যার ঘটনায় জিএমপির বাসন থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
জিএমপির উপসহকারী পুলিশ কমিশনার রবিউল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চান্দনা চৌরাস্তায় বহুতল বিপণিবিতান শাপলা ম্যানশনের সামনে বাদশা মিয়া নামে এক ব্যক্তি গোলাপী নামে এক নারীকে কিল ঘুষি মারছিল। এ সময় তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন যুবক চাপাতি, ছুরি দিয়ে বাদশার উপর হামলা চালায়। আক্রান্ত বাদশা মিয়া দৌড়ে পালিয়ে যান। এরপর তিনি শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। গোলাপীকে বাদশাহ মিয়ার হামলা এবং বাদশা মিয়ার উপর সন্ত্রাসীদের মামলার ঘটনাগুলো একটু দূরে দাঁড়িয়ে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছিলেন প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন। হামলাকারীরা তুহিনকে ভিডিও ধারণ না করতে বলে এবং যেটা করেছে সেটা ডিলিট করতে বলে। এ সময় আসাদুজ্জামান তুহিন ঘটনাস্থল থেকে চলে যায় এবং পাশেই মসজিদ মার্কেটে অবস্থান নেন। হামলাকারীরা তাকে অনুসরণ করে মসজিদ মার্কেটে গেলে তুহিন দৌড়ে পাশের চায়ের দোকানে আশ্রয় নেন। এ সময় তুহিনকে ধাওয়া করে এবং কুপিয়ে খুন করে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।
পুলিশ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম আরও জানান হামলাকারীরা চিহ্নিত হয়েছে। নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে জুমার নামাজের পর চান্দনা চৌরাস্তার ঈদগাহ মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তার বড় ভাই সেলিম মিয়া মরদেহ ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের জন্য নিয়ে যান।
জিএমপির ডিসি (ক্রাইম) রবিউল হাসান বলেন, ‘পাঁচজনকে আটক করে আনা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজের সঙ্গে মিলিয়ে এদের শনাক্তকরণের কাজ চলছে। আমরা খুব সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছি যেন কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি এই মামলায় জড়িয়ে না যায়।
পুলিশের একাধিক টিম পলাতক ওই নারী গোলাপীকে এবং চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে।’
রবিউল হাসান আরও বলেন পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার গোয়েন্দা বিভাগের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
তদন্তের আলোকে দেখা যায়, ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল এক হানিট্র্যাপ থেকে। গোলাপী নামে এক নারী বাদশা নামের একজনকে প্রলোভনে ফেলে, তার সঙ্গে থাকা সশস্ত্র যুবকরা বাদশাকে চাপাতি দিয়ে কোপাতে থাকে। কাছাকাছি দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে দৃশ্যটি ধারণ করছিলেন সাংবাদিক তুহিন। এ সময় হামলাকারীরা তার ওপর চড়াও হয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, দাড়িওয়ালা ও মাথায় ক্যাপ পরা ফয়সাল ওরফে কেটু মিজান চাপাতি হাতে দৌড়াচ্ছে। তার সঙ্গে শাহজামাল, বুলেট ও সুজনসহ আরও কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাকিদের পরিচয় উদ্ঘাটনের জন্য কাজ চলছে।
নিহত তুহিনের বড় ভাই সেলিম মিয়া বাদী হয়ে জিএমপির বাসন থানায় হত্যা মামলা করেছেন। তিনি জানান সাংবাদিক তুহিন কোনো অপরাধ করেননি। তিনি সমাজের চিত্র তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। খুনিরা তাকে বাঁচতে দিল না। তবে যারা তাকে খুন করেছে তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি করেছেন তিনি। তিনি বলেন ভবিষ্যতে আর যেন কোনো সাংবাদিককে এভাবে নির্মম হত্যার শিকার হতে না হয়।
সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে গাজীপুর ও আশপাশের জেলাগুলোয় খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ করছেন সাংবাদিকরা। আজ দুপুরে গাজীপুর প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিক ইউনিয়ন গাজীপুর জেলা শাখার উদ্যোগে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধনে প্রকৃত খুনিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন সাংবাদিক নেতারা।
তুহিনের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ভাটিপাড়ায় মৌলভীবাড়ি। তার বন্ধু আজিজুর রহমান বলেন, ‘গাজীপুরে স্ত্রী মুক্তা বেগম ও দুই ছেলে সন্তানকে নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। এর মধ্যে বড় ছেলের বয়স সাত আর ছোট ছেলের বয়স তিন বছর। গাজীপুরে তিনি একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন এবং একটি ক্লিনিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন।