হাজারো জুলাই যোদ্ধাকে চিকিৎসা দিয়েছে চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট

২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক স্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ওই আন্দোলনে সরকারি হিসেবে ৮৩৬ জন শহীদ এবং প্রায় ১৪ হাজার মানুষ আহত হন। আহতদের অনেকেই শরীরে দমন-পীড়নের নির্মম চিহ্ন নিয়ে হাসপাতালে আসেন। সংকটের সেই মুহূর্তে চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছিল, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট (এনআইও) ও হাসপাতাল তাদের অন্যতম।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান উপলক্ষে এনটিভি অনলাইনকে এক সাক্ষাৎকারে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, এখানে চিকিৎসা নিয়েছেন এক হাজারের বেশি আহত। এর মধ্যে প্রায় ৭০০ জনের অপারেশন করা হয়েছে। আবার তাদের অনেকের একাধিকবার অপারেশন করতে হয়েছে।
এ হাসপাতালের নিজস্ব চিকিৎসকদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সিঙ্গাপুর, চীন, জাপান ও নেপালের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এই হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২১ জন জুলাই যোদ্ধাকে সিঙ্গাপুর ও তুরস্কে পাঠানো হয়। এরমধ্যে ১৪ জনকে সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল আই হাসপাতালে এবং ৭ জনকে তুরস্কের আঙ্কারার এটিলিক সিটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই থেকে গণঅভ্যুত্থানে আহত রোগী আসা শুরু হয়। প্রথমদিন পাঁচজন আসেন। এরপর প্রতিদিনই গণঅভ্যুত্থানে চোখে আঘাতপ্রাপ্তদের গন্তব্য ছিল এই হাসপাতাল। তবে ১৮ থেকে ২১ জুলাই এবং ৪ থেকে ৬ আগস্ট— এই সময়গুলোতে আহতদের চাপ ছিল অস্বাভাবিক।
গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত রোগীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মশালারও আয়োজন করে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আহত যোদ্ধাদের নিয়ে এই হাসপাতালের গবেষণায় দেখা যায়, আহতদের প্রায় ৭৫ শতাংশ হালকা থেকে গুরুতর বিষণ্নতায় ভুগছেন। তাদের মধ্যে ২৫ শতাংশের অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর, ৫০ শতাংশেরও বেশি হালকা থেকে গুরুতর উদ্বেগে ভুগছেন, ২০ শতাংশের বেশি চরম উদ্বেগের শিকার। এছাড়া প্রায় ৬০ শতাংশ মানসিক চাপে ভুগছেন।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিভীষিকাময় দিনগুলোতে আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে টিম গঠন করে আহতদের চিকিৎসায় নিরলস শ্রম দিয়েছি। সবাইকে প্রত্যাশিত মানের সেবা দিতে পেরেছি কি না জানি না, তবে আমরা সাধ্যের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরাও আমাদের চিকিৎসা কার্যক্রমের প্রশংসা করেছেন।
ওই সময় সরকারের পক্ষ থেকে আহতদের চিকিৎসা না দিতে কোনো চাপ বা নির্দেশনা ছিল কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো চাপ বা নিষেধাজ্ঞা আমরা পাইনি। তবে পেলেও আমরা তা মানতাম না। আমাদের তৎকালীন পরিচালকসহ আমরা সবাই মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিই— আমরা অবশ্যই সবাইকে চিকিৎসা দেব এবং আমরা তা করেছি। আমাদের প্রায় ১৪০ জন চিকিৎসক সেই সময় ডেডিকেটেডলি কাজ করেছেন।