‘যাত্রাবাড়ী থেকে চিটাগাং রোড এলাকায় শতাধিক নিহত হয়’

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে হামলা, গুলিবর্ষণ, হত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন আপ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ। আদালতে তিনি বলেন, আন্দোলন চলাকালে যাত্রাবাড়ী থেকে চিটাগাং রোড এলাকায় শতাধিক ব্যক্তি নিহত এবং কয়েকশ আহত হয়। এ সময় প্রায় ১৩৪ জনের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে রায়ের বাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়।
আদালতে সাক্ষীর জবানবন্দিতে আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, “আমি একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছি। এ ছাড়া আমি জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক সংগঠন ‘ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ’ (আপ বাংলাদেশ) এর প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক। ২০১৩ সালে কোটা আন্দোলনের সময় আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিলাম। আন্দোলনের একপর্যায়ে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে যাওয়ার সময় পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। ছাত্রলীগও আমাদের মিছিলের ওপর হামলা করে। আমাদের আন্দোলন আর অগ্রসর হয়নি।”
আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, “২০১৮ সালে ‘সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ এর ব্যানারে কোটা সংস্কার আন্দোলন পুনরায় শুরু হয়। এই আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলন দমনের জন্য পুলিশ ও ছাত্রলীগ আন্দোলনকারীদের ওপর ব্যাপক আক্রমণ চালায়। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন হাসান আল মামুন, নুরুল হক নুর ও রাশেদ খান প্রমুখ। আন্দোলন দমনে ব্যর্থ হয়ে রাগের বশবর্তী হয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকরির ৯ম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেডে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে। ২০১৩ সালে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতিপুতিদের জন্য, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী ও ১ শতাংশ প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা নির্ধারণ করা হয়। ৩৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করলে দেখা যায়, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য কাট মার্ক/পাস মার্ক ৭২, অন্যদিকে কোটাধারীদের জন্য তা হয় ৪২। ফলে মেধাবীদের চাকরি পাওয়ার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে। এই সুবিধা গ্রহণের জন্য অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সৃষ্টি হয়, যার ফলে শিক্ষার্থীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়। গোপালগঞ্জের লোকেরাই কোটার সুযোগ সবচেয়ে বেশি পেতে থাকে। কোটা প্রথা বাতিল করে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংসদ’ এর পক্ষ থেকে ওহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে।”
‘এই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট বিভাগ উক্ত প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল করেন। এর প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলন সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন পুনর্বহালের জন্য ৩০ জুন পর্যন্ত সরকারকে আল্টিমেটাম দেয়’, যোগ করেন আপ বাংলাদেশের এই প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক।
আলী আহসান জুনায়েদ আদালতে বলেন, “২০২৪ সালের ১ জুলাই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ গঠন করা হয়। আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি দেওয়া হয়। ৬ জুলাই থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি দেওয়া হয়। আপিল বিভাগ থেকে ১০ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগের আদেশের ওপর স্থিতাবস্থা (স্ট্যাটাস কো) দেওয়া হয়। ১৪ জুলাই রাষ্ট্রপতি বরাবর প্রজ্ঞাপন পুনর্বহালের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। ঐ দিন শেখ হাসিনা একটি সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘চাকরি মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানেরা পাবে না, তো কি রাজাকারের বাচ্চা ও রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে?’ এর প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ক্যাম্পাসে ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’, ‘কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার-স্বৈরাচার’ স্লোগান দিয়ে সারা রাত প্রতিবাদ করতে থাকে। ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দমনে ছাত্রলীগই যথেষ্ট’।”
“ঐ দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল ইসলাম শয়ন বলেন, ‘ছাত্রলীগ ফুঁ দিলে আন্দোলনকারীরা পাঁচ মিনিটেই উড়ে যাবে’। ঐ দিন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম বলেন, ‘আন্দোলন যাবে আন্দোলন আসবে, কিন্তু ছাত্রলীগ থাকবে এবং সবকিছু মনে রাখা হবে’। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগ নির্মমভাবে সশস্ত্র হামলা চালায়। আহত ছাত্র-ছাত্রীদের হাসপাতালে যেতে বাধা প্রদান করা হয় এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত ছাত্র-ছাত্রীদের চিকিৎসায়ও বাধা প্রদান করা হয়। এমনকি, হাসপাতালে চিকিৎসারত আহত ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈকতের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়”, যোগ করেন আলী আহসান জুনায়েদ।
সাক্ষী আলী আহসান জুনায়েদ আরও বলেন, ‘(ছাত্রলীগের) হামলার প্রতিবাদে (২০২৪ সালের) ১৬ জুলাই সারা দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। ছাত্র-ছাত্রীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হয়। ইতোমধ্যে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলায় রংপুরে আবু সাঈদ, চট্টগ্রামে ওয়াসিম, শান্ত ও ফারুকসহ মোট ছয়জনের শহীদ হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এদিন সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং পরদিন সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের হল ছাড়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়। ১৭ জুলাই আগের দিনের ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিলের আয়োজন করা হয়। গায়েবানা জানাজা চলাকালে ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আক্তার হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং কফিন মিছিলে পুলিশ হামলা চালায়। ১৮ জুলাই আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশ গুলি করে অনেককে হত্যা ও জখম করে। এ ছাড়া আহতদের বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সেও গুলি করা হয়। সেদিন রাতেই ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।’
আলী আহসান জুনায়েদ সাক্ষীর জবানবন্দিতে বলেন, ‘১৯ জুলাই আমি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার চিটাগাং রোডে আন্দোলনরত ছিলাম। এদিন সকালে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গাড়িবহর নিয়ে সেখানে আসে। বিকেল আনুমানিক ৪টার সময় মা ও শিশু হাসপাতালের সামনে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি করলে সেখানে দুজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়। তখন আন্দোলনকারীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এবং মিছিল করতে থাকে। চিটাগাং রোডের ভূমি পল্লির সামনে সম্ভবত বিজিবির হেলিকপ্টার থেকে মিছিলের ওপর গুলি চালায়। সামনে থেকে র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরাও গুলি চালায়। সেখানে ২০-২৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ও আহত হয়।’
আলী আহসান জুনায়েদ আরও বলেন, ‘আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাই। সেখানে টানা তিন ঘণ্টা গুলি চলে। সেদিন রাতে পুলিশ ও ছাত্রলীগ বাসায় বাসায় গিয়ে আন্দোলনকারীদের খুঁজতে থাকে। সেদিন রাতে কারফিউ জারি করা হয়। ২০ জুলাই সকালে আমরা আন্দোলনকারীরা কারফিউ ভঙ্গ করে আবার রাস্তায় বের হই এবং আন্দোলন চালিয়ে যাই। আন্দোলন কর্মসূচির ৯ দফা নির্ধারণ করে তা পেনড্রাইভে করে বিভিন্ন মিডিয়ার কাছে পাঠানো হয়। আন্দোলন থামানোর জন্য আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় এবং বলা হয়, যেহেতু ২১ জুলাই কোটা সংস্কার বিষয়ে আপিল বিভাগে একটি আদেশ হওয়ার কথা আছে, সেহেতু ছাত্রদের আন্দোলন বন্ধ করতে বলা হয়। ২১ জুলাই ৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সেখানে গণহত্যার দায় স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানানো হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ দুজন মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হয়।’
ট্রাইব্যুনালে আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আন্দোলন চলাকালে যাত্রাবাড়ী থেকে চিটাগাং রোড এলাকায় শতাধিক ব্যক্তি নিহত এবং কয়েক শতাধিক আহত হয়। এ সময়ের মধ্যে প্রায় ১৩৪ জনের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে রায়ের বাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়। প্রথমে নাহিদ ইসলামকে গুম করে রাখা হয় এবং ২১ জুলাই তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আবার তাকেসহ মোট ছয়জন সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে তুলে নেওয়া হয়।’
“এ সময় গণগ্রেপ্তার চলতে থাকে। দুই শতাধিক মামলায় প্রায় দুই লক্ষাধিক ব্যক্তিকে আমিমী করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে ৩০ জুলাই শোক দিবস ঘোষণা করা হলে আমরা আন্দোলনকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করি। আন্দোলনকারীরা সরকার ঘোষিত শোক দিবস পালন কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করে চোখে মুখে লাল কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহণ করি এবং ফেসবুক প্রোফাইল লাল করার আহ্বান জানাই। ফেসবুক প্রোফাইল লাল করার কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া পড়ে এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ফেসবুক প্রোফাইল লাল হয়ে যায়। ৩১ জুলাই গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আদালত অভিমুখে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করা হয়। পুলিশ এ কর্মসূচিতে বাধা প্রদান করে। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শেহরিন আমিন মোনামিসহ অনেকেই আহত হয়”, যোগ করেন সাক্ষী আলী আহসান জুনায়েদ।
সাক্ষীর জবানবন্দিতে আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, “১ আগস্ট ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালন করা হয়। একইসঙ্গে আমরা ১ আগস্টকে ৩২ জুলাই হিসেবে গণনা করার সিদ্ধান্ত নেই। পরবর্তীতে আগস্টের ৫ তারিখ পর্যন্ত ৩৬ জুলাই হিসেবে গণনা করা হয়। ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন নাহিদ ইসলাম। আমিসহ আরও অনেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলাম। ৪ আগস্ট যাত্রাবাড়ী এলাকায় আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাই। সেদিন পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ সম্মিলিতভাবে আন্দোলনকারীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। সেদিন অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ও আহত হয়। ঐ দিন প্রথমে ৬ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছিল।”
আলী আহসান জুনায়েদ আরও বলেন, “আমি সমন্বয়ক আসিফ ও সাদিক কায়েমের সঙ্গে কথা বলে কর্মসূচি এগিয়ে আনার পরামর্শ দেই। ৪ আগস্ট রাতে সমন্বয়ক আসিফ ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি একদিন এগিয়ে এনে ৫ আগস্ট করার ঘোষণা দেন। ৫ আগস্ট সকাল ৯টার সময় আমি বাসা থেকে বের হয়ে আন্দোলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে যাত্রাবাড়ীর দিকে রওনা হই। আমার সঙ্গে আরও ৭-৮ জন ছিল। সাদ্দাম মার্কেটের সামনে অনেক আন্দোলনকারী জড়ো হয়। আমিও তাতে যুক্ত হই। সেখান থেকে মিছিলসহ আমরা কাজলা ফুটওভার ব্রিজের সামনে গিয়ে অবস্থান গ্রহণ করি এবং আন্দোলন চালিয়ে যাই। আন্দোলনকারীদের ওপর স্নাইপার রাইফেল দিয়ে টার্গেট করে মাথায় গুলি করা হয়। আমি প্রায় ১৫ জনকে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় অনাবিল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে দেখেছি। আমরা জানতে পারি, বেলা ২টায় সেনাপ্রধান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। তখন আমরা আন্দোলনকারীরা বুঝতে পারি, শেখ হাসিনা সম্ভবত ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। আমি হ্যান্ড মাইকে আন্দোলনকারীদের মাঠ ছেড়ে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানাই, যাতে দেশে সামরিক শাসন আসতে না পারে সেজন্য সজাগ থাকতে। বেলা আনুমানিক ৩টায় সেনাপ্রধান শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন বলে ঘোষণা দেন। সেদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যাত্রাবাড়ী থানার আশপাশ থেকে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায়।”
‘আমি এই হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য যারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদের সবার বিচার চাই। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি মাকসুদ কামাল, হাসানুল হক ইনু ও ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে পৃথক পৃথক টেলিফোন কথোপকথনে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের ওপর লেথাল উইপেন ও গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব ও অন্যান্য মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি’, যোগ করেন আলী আহসান জুনায়েদ।