ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী ব্রাহ্মণপাড়ার ৪০০ বছরের মসজিদ

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার দিঘিরপাড় গ্রামের কেন্দ্রস্থলে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন-দিঘিরপাড় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। মুঘল স্থাপত্যের আদলে নির্মিত এ মসজিদটির বয়স প্রায় চারশ’ বছর। এর নির্মাতা ছিলেন ইয়েমেন থেকে আগত তিনজন ইসলাম ধর্মপ্রচারক- শেখ রহিম, শেখ সুমন ও শেখ মঙ্গল।
মসজিদের খাদেম মাওলানা রুকুন উদ্দিন জানান, এক গম্বুজ বিশিষ্ট মূল মসজিদটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে কেবল চুন-সুরকি। এর দেয়ালের পুরুত্ব ৪৩ ইঞ্চি, যা এর স্থায়িত্ব ও নির্মাণশৈলীর বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে। স্থাপনার বিভিন্ন অংশে কারুকার্য করা হয়েছে সূক্ষ্মভাবে। শেখ রহিম, শেখ সুমন, শেখ মঙ্গল নামে তিনজন ইসলাম ধর্মপ্রচারক ইয়েমেন থেকে এসে এই অঞ্চলকে বেছে নেন। আশেপাশের গ্রামগুলোতে তখন কোনো মসজিদ ছিল না, জনবসতিও খুব কম ছিল। তখন এখানে ২৭ জনের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা থাকলেও, নিয়মিত নামাজ পড়তেন মাত্র নয়জন মানুষ।
২০০৬ সালে মসজিদের পূর্বদিকে সম্প্রসারণ করে এর ধারণক্ষমতা বাড়ানো হয়। বর্তমানে এটি দুই গম্বুজ ও চার মিনারবিশিষ্ট একটি সুন্দর স্থাপনায় রূপ নিয়েছে। এখন এখানে দুই শতাধিক মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।
মসজিদের পূর্ব পাশে রয়েছে একটি সুবিশাল পুকুর ও সাথেই একটি নান্দনিক ঘাট। প্রাকৃতিক গাছপালায় ঘেরা পরিবেশে নির্মিত এই মসজিদ এখন দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এসে মসজিদটি পরিদর্শন করেন এবং নামাজ আদায় করে প্রশান্তি অনুভব করেন।
প্রজাপতি বাজার থেকে লাড়-চৌ গ্রামের পথে হাঁটলেই দিঘিরপাড় গ্রাম। খালের ওপর বাঁশের সাঁকো পার হয়েই চোখে পড়ে ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদ। সড়কের পাশেই দিঘিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খেলার মাঠ। এই অঞ্চলের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক চিত্র ফুটে ওঠে মসজিদটির নকশা ও পরিবেশে।
প্রজাপতি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ধর্মপ্রচারকদের বংশধর মো. ইউনুস ভূঁইয়া বলেন, মূল মসজিদটি তৈরি হয়েছে চুন-সুরকিতে। দেয়ালের পুরুত্ব ৪৩ ইঞ্চি। যাঁরা এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন, তাঁদের বংশধরেরা এখনও এই গ্রামে বসবাস করছেন। এটি শুধু ধর্মীয় স্থান নয়, আমাদের বংশপরম্পরার ইতিহাসের অংশ। প্রতিদিন নানা জায়গা থেকে মানুষ এসে এই মসজিদ দেখে যান।
মসজিদের ইমাম মাওলানা মুফতি আবদুস ছাত্তার বলেন, ১৬শ শতাব্দীতে ইয়েমেন থেকে আসা আপন তিন ভাই মসজিদটি নির্মাণ করেন। তাঁরা শুধু মসজিদই নির্মাণ করেননি, সঙ্গে একটি সুবিশাল পুকুরও খনন করেন। বর্তমানে এটি গ্রামের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, যেখানে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত ও জুমার নামাজ আদায় করা হয়।