সুনামগঞ্জের হাওরগুলোতে পানি নেই, কৃষিতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

এ বছর আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পড়েছে দেশের হাওরাঞ্চলেও। ভরা বর্ষার মৌসুমেও পানি সংকটে ভুগছে সুনামগঞ্জের হাওর পাড়ের মানুষ। হাওরে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ না থাকায় মাছের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, আমন ধানের চাষে দেখা দিয়েছে সমস্যা, আর শীতকালীন শাকসবজির আবাদ নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা। প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর চলমান আগ্রাসী তৎপরতা বন্ধে সচেতন মহল আহ্বান জানিয়েছে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বড়ঘাট গ্রামের কৃষক নুরুল হক বলেন, আমরা হাওর পাড়ের মানুষ। কৃষিই আমাদের জীবিকা। কিন্তু পানির অভাবে অধিকাংশ জমি অনাবাদি থাকছে।
সুনামগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করিম সাঈদ বলেন, অপরিকল্পিত বাঁধ, বনজঙ্গল উজাড়, জলাশয় ভরাট এবং অনাবৃষ্টিসহ নানা কারণে প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়েছে। এরই ফলাফল হিসেবে হাওরাঞ্চলে পানিশূন্যতা দেখা দিয়েছে। এসব কর্মকাণ্ড জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যও দায়ী।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত এক সপ্তাহে সিলেট অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি। পাশাপাশি মেঘালয়ের পাহাড়ি অঞ্চলেও বৃষ্টি না হওয়ায় পানি বাড়ার সম্ভাবনা নেই।
জামালগঞ্জের হালি হাওর, পাগনার হাওর ও তাহিরপুরের শনি হাওরে বর্ষায় পানির বদলে শুষ্কতা বিরাজ করছে। ফসল রক্ষা বাঁধের অধিকাংশই ভেসে উঠে নৌযান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে। এ অবস্থায় জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সুনামগঞ্জ শাখার আহ্বায়ক চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, হাওরে এখন যে পরিবেশ দেখা যাচ্ছে, তা আমাদের নিজেদের তৈরি করা। প্রকৃতিকে প্রকৃতির মতো থাকতে দিতে হবে, না হলে নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি হবে না।
বাংলাদেশ খেতমজুর সমিতির কার্যকরী সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন রেজা বলেন, নদী-নালা, বিল, হাওর খনন না করায় উজানের পানি সঠিকভাবে নামতে পারছে না। অপরিকল্পিত বাঁধের কারণে পানির স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে কৃষি ও মৎস্য উভয় ক্ষেত্রেই দুর্বলতা দেখা দিচ্ছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, সুনামগঞ্জে ৯৫টি ছোট-বড় হাওর এবং ছোট-বড় নদী আছে ১০৬টি। হাওরে পানি না থাকার বড় কারণ হচ্ছে বৃষ্টিপাত কম হওয়া। এ বছর পানি বিপদসীমা অতিক্রম দূরের কথা, সহনীয় মাত্রা থেকেও পানি কম। এটা আসলে ভালো লক্ষণ না। এক্ষেত্রে আবহাওয়া-জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রকৃতির ওপর তো কারও হাত দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে যে কাজে প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি হয়, তা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি।