প্রদর্শনীর মাধ্যমে শেষ হলো সিনেমার ব্যানার পেইন্টিং কর্মশালা

নতুন প্রজন্মের চারুকলা শিল্পীদের সঙ্গে সিনেমা ব্যানার শিল্পীদের কাজের সমন্বয়ের লক্ষ্যে আজ শুক্রবার মানিকগঞ্জের পারিল গ্রামে পাঁচদিনব্যাপী আয়োজিত চিত্রকর্মশালার সমাপনী প্রদর্শনী হয়েছে।
গত ৫ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার পারিল গ্রামে অবস্থিত জহির মঞ্জিলে কর্মশালা শুরু হয়।
১৮৯৩ সালে স্থাপিত জহির মঞ্জিল শতবর্ষ পেরুনো ঐতিহ্যবাহী একটি স্থাপনা। এটি বাংলাদেশের বিখ্যাত আলোকচিত্রী নাঈব উদ্দিন আহমেদ ও ড. নওয়াজেশ আহমেদের পারিবারিক আবাস। এই পরিবারের সদস্যদের উদ্যোগে গঠিত নওশা-নাজিব পরিবেশ উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, যথাশিল্পর উদ্যোগে সাড়া দিয়ে এই কর্মশালা আয়োজনে সহায়তা করেছে।
কর্মশালাটি পরিচালনা করেছেন শিল্পী সুকুমার ধর ও মোহাম্মদ শোয়েব। কিউরেটর হিসেবে ছিলেন শিল্পী শাওন আকন্দ।
সিনেমার ব্যানারশিল্পী মোহাম্মদ শোয়েব জানান, ১৯৬৫ সাল থেকে তিনি আর্ট পেশায় জড়িত। জীবনে অসংখ্য সিনেমার ছবি-পোস্টার এঁকেছেন। কিন্তু ২০০৬ সালে ডিজিটাল প্রিন্ট আসার ফলে তাঁদের এই শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে। এই কর্মশালার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের সঙ্গে সমন্বয় করে তাঁদের শিল্পকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।
শিল্পী শাওন আকন্দ বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি। সিনেমা ব্যানারশিল্পীরা একসময় থাকবেন না, তাঁরা বেঁচে থাকতে তাঁদের শিল্পের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের সমন্বয় ঘটিয়ে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াস মাত্র।’
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আটজন শিল্পী এই কর্মশালায় অংশ নেন।
অংশগ্রহণকরী শিল্পীরা কর্মশালা শেষে সিনেমা ব্যানার পেইন্টিং স্টাইলে বেশ কয়েকটি শিল্পকর্ম সম্পন্ন করেন। আগত দর্শকরা শিল্পীদের সঙ্গে এই বিশেষ ধারার চিত্রশিল্প সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন ও অভিমত বিনিময় করেন।
চিত্রশিল্প কর্মগুলো ছিল শিল্পী জিন্নাতুন জান্নাত ও অনিক ভৌমিকের যৌথ কাজ ‘উড়ন্ত প্রেম’, অলিয়া কামালের ‘ধর্ম আমার মা’, দিদারুল আলম দিপুর ‘মুনালিসা’, মোহম্মদ মেহেদী হাসানের ‘কাল কেন আসনি’, শক্তি নোমানের ‘আশা নিরাশা’, টি এইচ তন্ময়ের ‘হাতি মেরা সাথী’ এবং তাহমিনা হাফিজ লিসার ‘একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি’।
সিনেমা ব্যানার পেইন্টিং ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় চিত্রভাষা মাধ্যম হিসেবে প্রতীয়মান। এর সূত্রপাত ঘটেছিল সিনেমা হলের প্রচারকাজের মাধ্যম হিসেবে। এই অঞ্চলে চলচ্চিত্রশিল্পের প্রসার ও প্রচার এই সিনেমা ব্যানার পেইন্টিংয়ের উৎপত্তি ও বিকাশে প্রধান ভূমিকা রেখেছে। সিনেমা ব্যানার পেইন্টিংয়ের উৎপত্তি খোঁজ করতে গেলে পাওয়া যায় ১৯ শতকের শেষ ভাগে করা রাজা রবি বর্মার পশ্চিমা শৈলীতে ভারতীয় বিষয়বস্তু নিয়ে আঁকা চিত্রকলা ও জনপ্রিয় ছাপাই ছবির সন্ধান। সিনেমা ব্যানার পেইন্টিংয়ের অনন্যসাধারণ চিত্রভাষা ও নন্দনতাত্ত্বিক ভঙ্গি নির্মাণে নন-একাডেমিক শিল্পীদের অবদান অনেক বড়। তাঁদের শিল্পবোধ ও নান্দনিক চেতনা সিনেমা ব্যানার পেইন্টিংয়ের মাধ্যমে এক নতুন জীবনযাপন-ঘনিষ্ঠ চিত্রভাষার জন্ম দিয়েছে।