মাসুদ-মিশুক নিহতের মামলায় আরো তিনজনের সাক্ষ্যগ্রহণ

সড়ক দুর্ঘটনায় খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহতের মামলায় আরো তিনজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।
আজ রোববার দুপুরে মানিকগঞ্জ অতিরিক্ত দায়রা ও জেলা জজ আব্দুল্লাহ আল-মামুন ফয়জুল কবীরের আদালতে এই সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
সাক্ষ্যদাতারা হলেন ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ডা. মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, মানিকগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ফায়ারম্যান মো. কামাল হোসেন ও তৎকালীন গাড়িচালক মোতালেব হোসেন।
আলোচিত এই মামলায় ৩৯ সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত ১৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হলো। সাক্ষ্যগ্রহণের সময় আদালতে জামিনে থাকা আসামি বাসচালক জামির হোসেন হাজির ছিলেন।
মামলা ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার সালজানা গ্রামে ‘কাগজের ফুল’ ছবির লোকেশন দেখে তারেক মাসুদ ঢাকা ফিরছিলেন। তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে এটিএন নিউজের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী ও চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ঢালী আল মামুন ও তাঁর স্ত্রী দিলারা বেগম জলিসহ নয়জন।
পথে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে তাঁদের বহনকারী মাইক্রোবাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা চুয়াডাঙ্গাগামী চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীর, মাইক্রোবাসের চালক মোস্তাফিজুর রহমান, প্রোডাকশন সহকারী মোতাহার হোসেন ওয়াসিম ও জামাল হোসেন নিহত হন। আহত হন ক্যাথরিন মাসুদ, শিল্পী ঢালী আল-মামুন, দিলারা বেগম জলি এবং তারেক মাসুদের সহকারী মনীশ রফিক।
এ ঘটনায় ঘিওর থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) লুৎফর রহমান মামলা করেন। এরপর অভিযান চালিয়ে বাসচালক জামির হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১১ সালের ১৭ নভেম্বর জেলা ও দায়রা জজকোর্ট থেকে জামিনে ছাড়া পান ওই চালক। এরপর তদন্ত শেষে ঘিওর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফ-উল ইসলাম ২০১২ সালের ২১ মার্চ চালককে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আর একই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের শুনানি করা হয়।
২০১৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ধার্য করা সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম দিনে জেলা ও দায়রা জজ এ কে এম মোস্তফা দেওয়ানের আদালতে অভিযোগকারী ঘিওর থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) লুৎফর রহমানের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। ওই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণের ধার্য দিনে মানিকগঞ্জ সাব-জজ ও অতিরিক্ত দায়রা জজ রফিকুল ইসলামের আদালতে ক্যাথরিন মাসুদ, অধ্যাপক ঢালী আল মামুন ও দিলারা বেগম জলির সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এরপর কয়েকটি কার্যদিবসে আরো ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন বিচারিক আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আফছারুল ইসলাম মনি জানান, পাঁচ সাক্ষী আদালতে হাজির হওয়ার কথা থাকলেও ওই তিনজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। অপর দুই সাক্ষীর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের সহ-যান্ত্রিক কর্মকর্তা আবদুল হামিদ মারা গেছেন। আর অনুপস্থিত ছিলেন স্কয়ার হাসপাতালের ডা. সানোয়ার হোসেন। আদালত আগামী ৫ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছে বলেও জানান তিনি।
সাক্ষ্যগ্রহণকালে আফছারুল ইসলাম মণি ও আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট মাধব সাহা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।