চট্টগ্রাম আবাহনী ও শেখ জামালের ম্যাচ ড্র

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের (বিপিএল) ময়মনসিংহ পর্বের উদ্বোধনী ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনী এবং শেখ জামালের মধ্যকার খেলা ড্র হয়েছে। গোল করতে না পারায় দুই দলকে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে মাঠ ছাড়তে হয়েছে।
আজ শুক্রবার বিকেলে ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়ামে এ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। আড়াই যুগ পর ময়মনসিংহে ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর এটি। এদিন স্টেডিয়ামের গ্যালারি ছিল কানায়-কানায় পূর্ণ। ফুটবলপ্রেমীদের এদিন অতিরিক্ত দাম দিয়েও টিকেট কিনতে দেখা গেছে।
বিকেল ৪টায় চট্টগ্রাম আবাহনী এবং শেখ জামালের মধ্যকার ম্যাচের উদ্বোধন করেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। এ সময় যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়সহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রচারবিহীন এ ম্যাচ দেখতে দুপুরের পর থেকেই দর্শকরা মাঠে ছুটে আসেন। বিকেল ৩টা নাগাদ স্টেডিয়ামের আশপাশ ফুটবলপ্রেমীদের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। গ্যালারির গেট দেরিতে খোলায় দর্শকদের ঢুকতে বেশ বেগ পেতে হয়। দর্শকদের নিরাপত্তায় পুলিশকে গলদঘর্ম হতে হয়।
বিপিএলের দ্বিতীয় পর্বের এই ম্যাচে কোনো দলই গোল করতে পারেনি। তবে, উভয় দলই কয়েকটি সুযোগ হাতছাড়া করেছে। দর্শকপূর্ণ গ্যালারিতে উত্তেজনা ছিল। কিন্তু আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণের পরও কোনো গোল না হওয়ায় তাদের হতাশ হতে হয়।
এ ম্যাচে গ্যালারি ভরবে কি না এমন সন্দেহ ছিল অনেকেরই। কিন্তু মাঠে দর্শকদের উপস্থিতি প্রমাণ করেছে ময়মনসিংহের মানুষ খেলাপাগল। ম্যাচ শুরুর ২০ মিনিটের মাথায় চট্টগ্রাম আবাহনীর আক্রমণের মুখে শেখ জামাল কিছুটা পিছু হটে। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফিরে আসে শেখ জামাল। ম্যাচের ৩৬ মিনিটে চট্টগ্রাম আবাহনীর প্রথম প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। শেখ জামালের গোলবারের ডান দিক থেকে ইব্রাহিমের একটি পাস ডি-বক্সে আসে কিন্তু সেখানে কেউ না থাকায় চট্টগ্রাম আবাহনী গোলের সুযোগ হারায়।
খেলায় ৩৮ মিনিটে সুযোগ পায় শেখ জামাল। বিদেশি তারকা ল্যান্ডিংয়ের একক প্রচেষ্টায় দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে চট্টগ্রাম আবাহনীর ডি-বক্সে প্রবেশ করেন ল্যান্ডিং। কিন্তু বলটি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারায় সুযোগ হাতছাড়া হয় শেখ জামালের। ফলে প্রথমার্ধ গোলশূন্য হয়।
বিরতির পর ম্যাচে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ শুরু হয়। খেলার ৪৬ মিনিটের মাথায় শেখ জামালের গাম্বিয়ার খেলায়ার ল্যান্ডিং বল নিয়ে আবাহনীর ডি-বক্সে ডুকে পড়ে। একজনকে কাটিয়ে শট দিলে গোলপোস্টে লেগে বল ফিরে আসে। ম্যাচের এই বলটিই বার স্পর্শ করে। দ্বিতীয়ার্ধের ১০ মিনিটে শেখ জামালের হাইতির খেলোয়াড় উইসন মিডফিল্ড থেকে দুজনকে কাটিয়ে ডি-বক্সে ভেতরে নাইজিরিয়ান এ্যামেকার পায়ে বল ঠেলে দেয় কিন্ত তিনি বলটি ঠিকমতো ধরতে পারেননি। ফলে গোলপোস্টের এক ফুট দূরে থেকেও শট নিতে ব্যর্থ হন এ্যামেকা। ফলে আরেকটি সুযোগ হারায় শেখ জামাল।
এরপর ডি-বক্সের কিছুটা বাইরে থেকে ফ্রি-কিক রক্ষা করেন চট্টগ্রাম আবাহনীর গোলরক্ষক রানা। ম্যাচের ৮৫ মিনিটে একটি সহজ সুযোগ নষ্ট করে শেখ জামাল। ওয়েডসনের দারুণ একটি কাটব্যাকে বল পান ফাঁকা জায়গায় দাঁড়ানো ডার্লিংটন। তাঁর সামনে কেউ ছিল না। শুধু পা লাগালেই গোল হতো। ডার্লিংটন বলে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন। আবারও গোলবঞ্চিত হয় শেখ জামাল।
এরপর ম্যাচের বাকি সময় আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ হলেও কোনো গোল না হওয়ায় পয়েন্ট ভাগাভাগি করে মাঠ ছাড়ে চট্টগ্রাম আবাহনী ও শেখ জামাল।
মিডিয়াকর্মীদের ভোগান্তি
ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়ামে বিপিএল দ্বিতীয় পর্বের উদ্বোধনী ম্যাচের খবর সংগ্রহ করতে আসা মিডিয়াকর্মীদের ভোগান্তির অন্ত ছিল না। বহু সাংবাদিককে স্টেডিয়ামে প্রবেশের জন্য পাস দেওয়া হয়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, শুক্রবার দুপুর ১২টায় সাংবাদিকদের পাস দেওয়া হবে। কিন্তু দুপুরে সেখানে কেউ ছিল না। পরে বলা হয়, হোটেল থেকে পাস সংগ্রহ করতে কিন্তু সেখানে সবাইকে পাস দেওয়া হয়নি। এরপর বলা হয়, স্টেডিয়ামের গেটে পাস দেওয়া হবে। বিকেল ৪টা নাগাদ স্টেডিয়ামের গেটে কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎ পাওয়াই দায় হয়ে পড়ে।
এ রকম পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই নিজেদের পরিচয়েই স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন। সেখানেও সাংবাদিকদের ভোগান্তি ছিল চোখে পড়ার মতো। একটি টেবিলে ঢাকা থেকে আসা সংবাদকর্মীরা বসতে পারলেও স্থানীয় সাংবাদিকরা বসার জায়গা পাননি। বেশির ভাগ সংবাদকর্মীকে দাঁড়িয়ে থেকেই সংবাদ সংগ্রহ করতে হয়। গতকাল জেলা ক্রীড়া সংস্থার সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড সংগ্রহ করতে ই-মেইল, ছবি, ভোটার আইডি কার্ড দিতে বলেন বাফুফের হেড অব মিডিয়া এহসান আহমেদ অমিত। সেই অনুযায়ী সংবাদকর্মীরা তথ্য-উপাত্ত তাঁর ই-মেইলে পাঠালেও অনেকেই কার্ড পাননি বলে মাঠে গিয়ে তাঁকে জানান।
৪৫ টাকা টিকেট ৫৫ টাকা
টিকেট বিক্রি সম্পর্কে জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ট্রেজারার এ কে এম মাহবুবুল আলম বলেন, আশাতীত দর্শকসমাগম হয়েছে। খেলা শুরুর আধা ঘণ্টা আগেই প্রায় ১০ হাজার টিকেটি বিক্রি হয়েছে।
বিপিএল ময়মনসিংহ পর্বের উদ্বোধনী ম্যাচের সাধারণ গ্যালারির টিকেটের দাম ছিল ৪৫ টাকা। কিন্তু বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। স্টেডিয়ামের প্রেসিডেন্সি মডেল স্কুলের কাউন্টার থেকে পাঁচ থেকে ১০ টাকা অতিরিক্ত দামে টিকেট বিক্রি করা হয়।
শুক্রবার বিকেল সোয়া ৩টায় স্টেডিয়ামসংলগ্ন জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনের গেট বন্ধ ছিল। গেটের ঠিক পাশেই ৪৫ টাকার টিকেট ৫০ টাকা দামে বিক্রি করছেন মাইকম্যান বাদশা ও মিন্টু। দাম বেশি নিচ্ছেন কেন- জানতে চাইলে বাদশা বলেন, ‘ভাংতি নাই ভাই। এই লেইগ্যা পাঁচ টাকা বেশি নিতাছি।’
টিকেট বিক্রির নির্ধারিত কাউন্টার নগরীর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনসংলগ্ন প্রেসিডেন্সি মডেল স্কুলের কাউন্টারের দৃশ্যও ঠিক অভিন্ন। সেখানেও মোবারক আলী নামের একজন টিকেট বিক্রয়কর্মী বলেন, ‘ভাংতি থাকলে ৪৫ টাকা, না থাকলে ৫০ টাকা।’
কী পরিমাণ টিকিট বিক্রি হয়েছে জানতে চাইলে মোবারকের ঠিক পাশেই বসে থাকা কর্মী আলামিন জানান, ‘টিকেট বিক্রি বাম্পার। সব মিলিয়ে ১০ হাজার টাকা বিক্রি হয়ে গেছে।’
তবে টিকেট বিক্রির অনিয়ম সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে জানান জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ট্রেজারার এ কে এম মাহবুবুল আলম।